কোন বয়সের শিশুকে ঠিক কতটা চকোলেট দিতে পারেন? ছবি: এআই।
চকোলেট খেতে কে না পছন্দ করে। ছোটরা চকোলেট দেখলে খেতে চাইবেই। বাড়িতে অতিথিরা এলে প্রায়ই ছোটদের জন্য নানা রকম চকোলেট নিয়ে আসেন। শিশুরাও তা খাওয়ার জন্য বায়না করে। ফলে সমস্যায় পড়ে যান বাবা-মায়েরা। বেশি চকোলেট খেলে দাঁতের ক্ষতি হবে, পেটের সমস্যা হবে, আবার একেবারে না দিলে শিশুও বায়না করতে থাকবে। তাই ঠিক কতটা চকোলেট শিশুকে দেওয়া যেতে পারে, সে পরিমাণটুকু জেনে রাখা জরুরি। ছোটরা চকোলেট খেতেই পারে, তবে কী ধরনের চকোলেট খাচ্ছে ও ঠিক কতটা— সেটা খেয়াল রাখা ভীষণ জরুরি। জানা থাকলে সুবিধাই হবে বাবা-মায়েদের।
কী ধরনের চকোলেট খেতে পারে ছোটরা?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্দেশিকা অনুসারে, ছোটদের এমন চকোলেট দিতে হবে যাতে দুধ, চিনি ও ক্যাফিনের মাত্রা কম। সে দিক থেকে মিল্ক চকোলেট বা হোয়াইট চকোলেটের তুলনায় ডার্ক চকোলেট অনেক বেশি নিরাপদ। চকোলেটে কোকোর পরিমাণ ৭০ শতাংশ বা তার বেশি হলেই তাকে ডার্ক চকোলেট বলা হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, ফাইবার, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়াম থাকে। পরিমিত পরিমাণে ডার্ক চকোলেট খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে, হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমে, রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডার্ক চকোলেট খেলে ১০০ শতাংশ কোকো থাকা চকোলেট খাওয়াই সবচেয়ে ভাল। তবে সেটি বেশি তেতো হয়, ছোটরা খেতে চাইবে না। তাই ৫০, ৭০, ৮০ বা ৯০ শতাংশ কোকো থাকা চকোলেট কেনা ভাল। কেনার আগে অবশ্যই লেবেল পড়ে নেবেন।
শিশু কতটা খেতে পারে?
এই বিষয়েও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র নির্দেশিকা আছে। সেখানে বলা হয়েছে, এক বছর বা তার কম বয়সি শিশুকে কোনও রকম চকোলেটই দেওয়া যাবে না। অতিরিক্ত ক্যাফিন ও চিনি ওই বয়সি শিশুর পরিপাকতন্ত্রের জন্য ঠিক নয়।
বয়স দু’বছর হলেও চকোলেট না দেওয়াই ভাল। কারণ দু’বছর অবধি শিশুর খাওয়ায় নুন ও চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলা হয়। ওই বয়সি শিশুকে মিষ্টি লজেন্স, চকোলেট না খাওয়ানোই উচিত।
তিন বছরের পর থেকে উচ্চ কোকো ও কম চিনিচুক্ত ডার্ক চকোলেট অল্প পরিমাণে দেওয়া যেতে পারে। সপ্তাহে এক দিন বা দু’দিন ডার্ক চকোলেট বারের ১টি বা ২টি চৌকো টুকরো দেওয়া যেতে পারে। দেখে নিতে হবে, সেই চকোলেটে যেন অন্তত ৭০ শতাংশ কোকো থাকে।
৪ থেকে ৬ বছরে দিনে ৮ গ্রামের মতো অর্থাৎ, দু’টি চৌকো টুকরো ডার্ক চকোলেট খেতে পারে শিশু। তবে রোজ না দেওয়াই ভাল। সপ্তাহে তিন দিন খেলে তা ক্ষতির কারণ হবে না। খেয়াল রাখতে হবে, প্রতি বার চকোলেট খাওয়ার পর শিশুর মুখ ভাল করে ধুইয়ে দেবেন। কুলকুচি বা ব্রাশ করে নিলে ভাল হয়। চকোলেটের টুকরো দাঁতে আটকে থাকলে পরে তা ক্যাভিটির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ পেডিয়াট্রিকসের তথ্য অনুসারে, ৭ থেকে ৯ বছর বয়সি শিশুরা ১১ গ্রামের মতো চকোলেট খেতে পারে। মিল্ক চকোলেট খেলে সপ্তাহে দু’বার ২-৩টি টুকরো আর ডার্ক চকোলেট খেলে ৩ টুকরোর মতো খাওয়া যেতে পারে।
১০ থেকে ১২ বছর বয়সে ১৩ গ্রামের মতো চকোলেট খেতে পারে, তবে তা ডার্ক চকোলেট হওয়াই বাঞ্ছনীয়। মিল্ক চকোলেট বেশি খেয়ে ফেললে শরীরে ক্যাফিনের মাত্রা বাড়বে। এতে যেমন দাঁতের ক্ষতি হবে, তেমনই স্থূলত্ব বাড়তে থাকবে। ক্যাফিনের কারণে ঘুমের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
বাবা-মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে, খালি পেটে কখনওই চকোলেট দেবেন না শিশুকে। সকালের জলখাবারের পর বা দুপুরের খাবারের পর অল্প পরিমাণে চকোলেট দিতে পারেন। চকোলেট বারের ১টি বা ২টি চৌকো টুকরোর বেশি নয়। রাতে চকোলেট একেবারেই দেবেন না। চকোলেট দিলে তার পাশাপাশি ফল, বাদাম, টক দইও খাওয়াতে হবে। বেশি করে ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে। শিশু চকোলেট বেশি চাইলে বদলে ড্রাই ফ্রুটস, দই বা ফল দিয়ে ওট্সের স্মুদি বানিয়ে দিন। এতে অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়ার ঝোঁক কমবে।