বেশি হেঁটে বিপদ বাড়াচ্ছেন না তো, কতটা হাঁটা ভাল? ছবি: ফ্রিপিক।
১০ হাজার পা হাঁটার উপকারিতা নিয়ে এত চর্চা হচ্ছে যে, অনেকেই ভেবে ফেলেছেন, প্রতি দিন এত পা হাঁটলেই বুঝি শরীর ঠিক থাকবে। তাড়াতাড়ি রোগা হতে অনেকেই দিনে ঘণ্টাখানেক ধরে হাঁটাহাঁটি শুরু করেছেন। জিমে গিয়ে ভারী ব্যায়াম করার পরেও হাঁটার বিরাম নেই। এখন কথা হল, হাঁটা ভাল, কিন্তু কতটা? সকলেই কি ১০ হাজার পা হাঁটার লক্ষ্য নিয়ে চলতে পারেন? হাঁটা যেমন শরীরের জন্য ভাল, তেমনই বেশি হাঁটাও কিন্তু ক্ষতিকর। কত বেশি হাঁটলে ক্ষতি হতে পারে জানেন?
দেশের সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-এর তথ্য অনুযায়ী, বয়স, ওজন ও শরীরের অবস্থা বুঝে হাঁটা উচিত। বয়স যদি ২০ থেকে ৩০ বছরের কোঠায় হয়, তা হলে দিনে ৩০ মিনিট হাঁটা যথেষ্ট। তবে একটানা নয়। প্রতি ১০ মিনিট অন্তর একটু করে বিশ্রাম নিতে হবে। বয়স যদি ৪০ থেকে ৫০ বছর হয়, তা হলে শরীরের অবস্থা বুঝে দিনে ২০-২৫ মিনিট হাঁটা ভাল। এর ঊর্ধ্বে হাঁটতে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন।
দিনে ১০ হাজার পা হাঁটা মানে হল তা প্রায় ৮ কিলোমিটারের কাছাকাছি। বেশি লাভ হবে ভেবে অনেকেই দিনে ৮-১০ কিলোমিটার হাঁটার চেষ্টা করেন। যাঁরা শরীরচর্চা করে অভ্যস্ত, যাঁদের হাঁটাহাঁটির অভ্যাস আছে, তাঁদের শরীর সইয়ে নিতে পারলেও তা সকলের জন্য নিরাপদ নয়। একটানা হেঁটে গেলে হৃৎস্পন্দনের হার বাড়বে, শ্বাসের গতি অনিয়মিত হতে পারে, সেই সঙ্গে ক্লান্তি ও ঝিমুনি দেখা দেবে। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হবে বেশি।
কত ক্ষণ হাঁটা ভাল আর কতটা বেশি হলে তা ক্ষতির কারণ হতে পারে, তা নিয়ে ব্রিটেনের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস (এনএইচএস)-এর একটি গবেষণাপত্র রয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, প্রতি দিনে ১০ কিলোমিটারের বেশি হাঁটলে তা শরীরের ক্ষতি করতে পারে। ৫-৬ কিলোমিটারই যথেষ্ট। বয়স্কদের ক্ষেত্রে দিনে ২-৩ কিলোমিটার অবধি হাঁটা সহনসীমার মধ্যেই থাকবে। তবে যদি হাঁটুতে ব্যথা, হার্টের অসুখ বা কোনও কোমর্বিডিটি থাকে, তা হলে কতটা হাঁটা নিরাপদ, তা চিকিৎসকের থেকে জেনে নিতে হবে।
হাঁটার গতিও কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ কিলোমিটার হলে তাকে ‘পাওয়ার ওয়াকিং’ বলা হয়। এই ধরনের হাঁটায় হৃদ্যন্ত্রের গতি বেড়ে যায়, ক্যালোরিও দ্রুত ক্ষয় হয়। তবে সকলের জন্য এই গতি উপযুক্ত নয়। যাঁরা প্রথম হাঁটতে শুরু করছেন তাঁদের জন্য ‘ইন্টারভ্যাল ওয়াকিং’ ভাল। ২ মিনিট দ্রুত হাঁটার পর, ১ মিনিট গতি কমিয়ে নিতে হবে। প্রতি মিনিটে ৯০-১১০ পা ফেলতে হবে। তা হলে উপকার বেশি হবে।
ছোট ছোট পদক্ষেপে হাঁটা শুরু করা ভাল। প্রাতর্ভ্রমণে বেরিয়েই একটানা হাঁটতে হবে, এমন লক্ষ্য স্থির করবেন না। বরং অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে যে রাস্তাটা রিকশা বা অটোতে ফেরেন, তার কিছুটা অন্তত হেঁটে ফেরার চেষ্টা করুন। দোকানে-বাজারে অটো চেপে না গিয়ে হেঁটে যান, অফিসে লিফ্ট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ভাঙার চেষ্টা করুন, স্বল্প দূরত্ব হেঁটেই যান, এই ভাবে অভ্যাস তৈরি হবে। তা হলে হাঁটতে গিয়ে ক্লান্তি, একঘেয়েমি আসবে না। হাঁটা কম হচ্ছে ভেবে উদ্বেগও হবে না। অতিরিক্ত মানসিক চাপ নিয়ে হাঁটলে তা আদৌ কোনও উপকারে আসবে না।