প্রতীকী চিত্র। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আশ্বিন মাসের মেঘভাঙা বৃষ্টি সামলে বাঙালি দুর্গাপুজোর জন্য তৈরি হচ্ছে। পুজো মানেই ঠাকুর দেখা এবং দেদার খাওয়াদাওয়া। তার সঙ্গেই যাঁরা মদ্যপান করেন, তাঁদের রুটিনে পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা, কারণ উৎসবে আপনজনদের সঙ্গে নানা পরিকল্পনার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে মদ্যপানের মাত্রা। যিনি হয়তো মাঝেমধ্যে মদ্যপান করেন, তাঁরও পঞ্চমী থেকে দশমী মদ্যপানের হার বেড়ে যেতে পারে। তাই সময়ে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। কারণ সঠিক সময়ে রাশ না টানলে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
মদ্যপানের মাত্রা
উৎসবের দিনে সুরাপ্রেমীদের মদ্যপানের হার বেড়ে যায়। কিন্তু কতটা মদ্যপান স্বাস্থ্যের পক্ষে যথেষ্ট? আবার মদ্যপানের প্রলোভনকেও চাইলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। চিকিৎসক আশিস মিত্র জানালেন, ইংল্যান্ডে চিকিৎসকেরা একজন প্রাপ্তবয়স্ককে সপ্তাহে সর্বাপেক্ষা ১৪ ইউনিট (১ ইউনিট= ৩০ মিলিলিটার) মদ্যপানের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর কথায়, ‘‘অর্থাৎ দিনে তিনি সর্বাপেক্ষা ২ ইউনিট মদ্যপান করতে পারেন।’’ এই মাত্রা অতিক্রম করলে লিভার এবং অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াসের সমস্যা হতে পারে।
অতিরিক্ত মদ্যপান
লাগাতার কয়েক দিন ধরে অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে দেহে জলশূন্যতা তৈরি হতে পারে। অনেক সময় হজমের সমস্যা বা ডায়েরিয়া পর্যন্ত হতে পারে। তার সঙ্গেই বড় সমস্যা বাংলার আবহাওয়া। আশিসের কথায়, ‘‘বৃষ্টি হলেও এখনও বাংলার আবহাওয়া গরম। আর্দ্রতা বেশি। তার সঙ্গে অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে কারও দেহে জলশূন্যতা তৈরি হতে পারে।’’ তার ফলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। আবার যাঁদের ডায়াবিটিস রয়েছে, তাঁদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মদ্যপান করলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যেতে পারে।
প্রতীকী চিত্র। ছবি: এআই।
মদ্যপানের সময়ে ভারতীয়েরা ভাজাভুজি খাওয়া পছন্দ করেন। তার ফলে হজমের সমস্যা বৃদ্ধি পায়। তার ফলে কারও পেটে ব্যথা হতে পারে। অনেক সময়ে অনিদ্রা বা মাথা ব্যথাও হতে পারে। আশিসের মতে, বিদেশে মদ্যপানের সময় সঙ্গে স্বাস্থ্যকর খাবারে উপর বেশি জোর দেওয়া হয়। তাই উৎসবের সময় প্রতিদিন মদ্যপান করলেও ভাজাভুজি এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আশিসের মতে, একান্তই মদ্যপান করতে হলে পরিমিত ওয়াইন পান করা যেতে পারে। হুইস্কি, ভদকা, রাম বা বিয়ারের তুলনায় শরীরের উপর ওয়াইনের নেতিবাচক প্রভাব কম। তিনি যোগ করলেন, ‘‘আবার তার মানে এটাও নয় যে কেউ অতিরিক্ত ওয়াইন পান করলেন। মনে রাখতে হবে যে কোনও ধরনের মদ্যপান মাত্রাতিরিক্তি হলে শরীর খারাপ হতে পারে।’’
উৎসবের দিনে মদ্যপানে নিয়ন্ত্রণ কী ভাবে
১) উৎসবে গা ভাসানোর আগে মদ্যপান নিয়ে নিজেকে সতর্ক করা উচিত। মদ্যপানের মাত্রাও নির্ধারণ করা উচিত। অন্যের অনুরোধে ‘না’ বলার কৌশলও আয়ত্ত করতে হবে।
২) মদ্যপান করলে, তার সঙ্গে সারা দিন যেন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করা হয়, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩) সকলে মিলে মদ্যপান করলে, এক দিন কোনও বিকল্প (হালকা পানীয়) বেছে নেওয়া যেতে পারে।
৪) শরীর খারাপ করলে বা কোনও রকম অস্বস্তি হলে তৎক্ষণাৎ মদ্যপান বন্ধ করা উচিত।
৫) খালি পেটে মদ্যপান করা উচিত নয়। মদ্যপানের আগে পেট যাতে ভর্তি থাকে তার জন্য অল্প খাবার খেয়ে নিতে পারলে ভাল হয়।
৬) মদ্যপানের সময় ফ্যাট জাতীয় খাবার না খাওয়াই ভাল। পরিবর্তে ফাইবার জাতীয় খাবার খেলে পেটের সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
৭) উৎসবের দিনে নিয়ম মেনে কিছু করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। অনেকেই দিনে আবার সন্ধ্যায় মদ্যপান করেন। দিনের মধ্যে এক বার (দুপুরে বা সন্ধ্যায়) মদ্যপানের জন্য ধার্য করা উচিত।
৮) যাঁরা ঘন ঘন অম্বলের সমস্যায় আক্রান্ত হন, তাঁদের ক্ষেত্রে হজমের ওষুধ খেয়ে মদ্যপান করা উচিত।