রক্তচাপ কম থাকলে কী কী ক্ষতি হতে পারে? ছবি : সংগৃহীত।
হাইপারটেনশনের রোগী— কথাটা প্রায়শই শোনা যায়। অর্থাৎ যাঁর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে। তেমন রোগীকে নিয়ে খানিক উদ্বেগেও থাকেন তাঁর আশপাশের মানুষজন। ‘রাগিয়ে দিয়ো না’, ‘টেনশন নিতে পারবে না’, ‘উত্তেজিত যেন না হয়’, ইত্যাদি নানা ধরনের সতর্কবাণী ঘিরে থাকে তাঁকে। কিন্তু কখনও হাইপোটেনশনের রোগী অর্থাৎ যাঁর রক্তচাপ স্বাভাবিকের থেকে কম তাঁকে নিয়ে এত ভাবনা চিন্তা করতে দেখেছেন?
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিম্ন রক্ত চাপের রোগী বা হাইপোটেনশনের রোগীকে বিপজ্জনক ভাবা হয় না। কিন্তু এক হার্টের চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এই রোগীদের সমস্যাও সময় বিশেষে বিপজ্জনক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও তৈরি করতে পারে। তাই যাঁর রক্ত চাপ স্বাভাবিকের থেকে কম থাকে তাঁকেও কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
কী কী সমস্যা হতে পারে?
মুম্বই নিবাসী হৃদরোগের চিকিৎসক রাহুল গুপ্ত তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে জানাচ্ছেন, নিম্ন রক্ত চাপের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের হঠাৎ রক্তচাপ কমলে নানা রকম শারীরিক সমস্যা হতে পারে। মাথা ঘোরা, ঝাপসা দৃষ্টি, ক্লান্তিবোধের চেনা উপসর্গের পাশাপাশি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, শরীরের ভিতরে রক্তপাত, হার্ট ফেল করার মতো গুরুতর বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ ছাড়াও দীর্ঘ মেয়াদে থাইরয়েডের মতো রোগ, শরীর থেকে ভিটামিন বি কমে যাওয়ার ফলে স্নায়ু, পেশি, ত্বক এবং চুলের সমস্যা হতে পারে। দ্রুত বার্ধক্যও আসতে পারে শরীরে। যথাযথ খেয়াল না রাখলে তা হাইপোটেনশনের রোগীর অভ্যন্তরীন প্রত্যঙ্গ বিকল হওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
কী ভাবে বিপদ এড়াবেন?
১। জল: চিকিৎসক জানাচ্ছেন, এক জন নিম্ন রক্ত চাপের রোগীকে সব সময় জল বেশি খেতে হবে। দিনে অন্তত ২-৩ লিটার জল খাওয়া উচিত। কারণ এঁদের শরীরে জলের অভাব হলেই রক্তচাপ পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। শুধু জল না ভাল লাগলে এঁরা সারা দিনে দইয়ের ঘোল, ডাবের জল, স্যুপ, লেবু জল, দিনে ১-২ বার গ্রিন টি-ও খেতে পারে।
২। অল্প খান: এক বারে অনেকটা না খেয়ে, বারে বারে অল্প করে খান। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ভারী খাবার খেলে রক্ত চাপ কমতে পারে, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে এটি হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বদলে অল্প অল্প করে অনেক বারে খাবার খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
৩। নুন: উচ্চ রক্তচাপের রোগীর নুন খাওয়ার নিয়ন্ত্রণ টানতে হলেও হাইপো টেনশনের রোগীর সেই সমস্যা নেই। তাঁরা চিকিৎসকের অনুমতি নিয়ে তুলনায় বেশি নোনতা খাবার খেতে পারেন। কারণ নুন রক্ত চাপ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তবে খুব বেশি নুন নিম্নরক্তচাপের রোগীর ক্ষেত্রেও ক্ষতিকর হতে পারে।
৪। হঠাৎ ওঠা বা বসা: বসা অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে দাঁড়ানো বা শোয়া অবস্থা থেকে হঠাৎ উঠে বসা উচিত নয় নিম্ন রক্তচাপের রোগীর ক্ষেত্রে। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, দীর্ঘ ক্ষণ এক জায়গায় এক ভাবে বসে বা শুয়ে থাকার পরে হঠাৎ অবস্থান বদলালে নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তচাপ হঠাৎ কমে যেতে পারে। তাই ধীরে ধীরে অবস্থান বদলান।
৫। অ্যালকোহল: নিম্ন রক্তচাপের রোগীদের অ্যালকোহল বর্জন করা উচিত বলে জানাচ্ছেন রাহুল। তিনি বলছেন, ‘‘ অ্যালকোহল শরীরে গিয়ে ধমনীকে প্রসারিত করে। এর ফলে রক্তচাপ আরও কমতে পারে।“
এ ছাড়া, হাইপোটেনশনের রোগীদের নিয়মিত রক্তচাপ মাপতেও বলছেন চিকিৎসক। সেই সঙ্গে তাঁর পরামর্শ যাঁরা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায় ভোগেন তাঁদের পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়ার দিকেও মন দেওয়া উচিত। সমস্যা বাড়লে অবশ্যই নিজের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত