সোনার মেয়ের রুপোর সাজ! গ্রাফিক— আনন্দবাজার ডট কম।
সোনার দাম বাড়ছে বলেই কি রুপোর গয়না পরার পরামর্শ? মোটেই না। বিয়েতে রুপোর গয়না পরতে পারেন রুপো ভালবেসেই। অথবা বিয়ের দিন সোনালি রঙের গয়না পরার চেনা ছক ভাঙতে। ভিড়ের মধ্যে আলাদা হতে। বাজারে এখন রুপোর গয়নার নানা রকম নকশা আসছে। কোনওটিতে শুধুই রুপোর নানা কারুকাজ, আবার কোনওটি বানানো হচ্ছে রুপোর উপর হিরে, চুনি, পান্না, মুক্তো বসিয়ে। এমন মূল্যবান পাথর বসানো রুপোর গয়নাগুলির দাম সোনার গয়নার চেয়ে কম নয়। কোনও কোনও রুপোর নেকলেসের দাম আড়াই, তিন লক্ষ টাকাও ছাড়াচ্ছে।
বিয়ের চার দিনের নানা রকমের সাজ সাজতে হয় কনেকে। বিয়ের দিনে যদি সোনা পরতেই হয় তবে রিসেপশন বা অন্য অনুষ্ঠানেও রুপোর সাজ পরা যেতে পারে। প্রতীকী চিত্র।
তা ছাড়া, রুপো এখন ফেলনা নয়। বাজারে রুপোর ছোটখাটো কোনও জিনিস কিনতে গেলেই তা বোঝা যায়। একটি ঠিকঠাক মাপের রুপোর চামচ বছর দু’য়েক আগেও যেখানে দেড় হাজার টাকায় হয়ে যেত, তার দাম দ্বিগুণ বেড়ে পৌঁছেছে তিন হাজারে। একটি রুপোর তৈরি চন্দন রাখার ছোট্ট বাটি কিনতে গেলে তার দাম পড়ছে চার হাজার। পায়েস, কুলফি বা মিষ্টি সাজিয়ে দেওয়ার রুপোর রেকাবি, বাটি আর চামচের একটির সেট কিনতে গেলেও দাম পড়ছে ১৫-২০ হাজার। রোজই একটু একটু করে দাম বেড়ে চলেছে রুপোর। ফলে মানুষ এখন রুপোতেও বিনিয়োগ করছেন।
রুপোর কোমরবন্ধ। ছবি: সংগৃহীত।
সোনার গয়না নিয়ে কথা হলে অনেকেই বলেন, ‘‘ওটা এক রকমের বিনিয়োগ। ব্যাঙ্কের লকারে পড়ে থাক। তবু দুর্দিনে তো কাজে আসবে!’’ তা-ই যদি হবে তা হলে খরচ করে অতিরিক্ত মজুরি দিয়ে ১৮-২২ ক্যারাট সোনা কেনার দরকার কি? বিনিয়োগই যদি লক্ষ্য হয়, তবে ২৪ ক্যারাটের সোনার বার কেনাই ভাল। ফ্যাশন হিসাবে রুপোর গয়না পরার সঙ্গে তার তো দ্বন্দ্ব থাকার কথা নয়!
রুপোর পাশা আর মুক্তোর হালি দিয়ে তৈরি ন’লহরী হার। এক রঙা বেনারসির উপর এই একটি হার থাকলে, অন্য দিকে নজর পড়বে না। প্রতীকী চিত্র।
আর প্রশ্ন যদি হয় দেখনদারির, তবে সাম্প্রতিকতা আর ঐতিহ্য মিলিয়ে মিশিয়ে রুপো দিব্যি টক্কর দিতে পারে সোনাকে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয়ে যাচ্ছে বিয়ের মরসুম। যাঁরা এই মরসুমে বিয়ে করছেন বা যাঁদের নিকটজন বিয়ে করছেন, তাঁরা বিয়ের সাজের গয়না হিসাবে রুপোর গয়না কিনতে পারেন।
রুপোর হাত পদ্ম কনের হাতে তো বটেই নিকটাত্মীয়াদের জমকালো সাজেও সঙ্গী হতে পারে। প্রতীকী চিত্র।
বাজারে এখন নামী ব্র্যান্ড এবং দোকানেও রুপোর নতুন নতুন নকশার হাঁসুলি, চোকার, চিক, নেকলেস, সীতাহার, রানিহার, গোগো হার, সাতলহরী, ন’লহরী, রত্নহারও পাওয়া যাচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে মুকুট, টিকলি-টায়রা, নথ, চুলের ঝাপটা, খোঁপার ফুলের নকশাকাটা পিন।
এমন একটি রুপোর চোকার গলায় থাকলে সাজ খুলে যাবে। প্রতীকী চিত্র।
হাতের জন্য আংটি, মানতাসা, রুপোর বালা, রুপোর চূড়, বাজুবন্ধও কিনতে পারবেন। কোনওটিতে জালের নকশা, কোনওটিতে কুন্দনের কাজ আবার কোনওটিতে মুক্তোর ঝালর।
রুপোর সাজে নানারকম হাতের গয়নাই হোক আকর্ষণ! প্রতীকী চিত্র।
ইদানীং রুপোর উপর হিরে বসানো ভারী গয়নাও তৈরি করা হচ্ছে। এমপ্রেস চোকার থেকে শুরু করে ভিক্টোরিয়ান নেকলেস— সবই তৈরি হচ্ছে রুপোর উপর মহার্ঘ পাথর বসিয়ে। সেই হার দেখলে সোনা কেন নয়, এ প্রশ্ন করতে ভুলেই যাবেন মানুষজন। অবশ্য করলেও কিছু আসে যায় না। কারণ কে, কী পরবেন, তা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত পছন্দের ব্যাপার।
রুপোর উপর হিরে বসানো বিয়ের অলঙ্কারও পাওয়া যাচ্ছে। প্রতীকী চিত্র।
তাই রুপোর গয়নার প্রতি ভালবাসা যদি থেকেই থাকে এবং সারা বছরও সেই গয়না পরে নানা রকম সাজার ইচ্ছে হয়, তবে এই বিয়ের মরসুমে একটু অন্য ভাবে ভাবা যেতেই পারে।