Silver

Silver: পেটের গোলমাল থেকে ত্বকের সমস্যায় নতুন সমাধান, গয়নার রুপোয় লুকিয়ে ওষুধ

রুপোর অতিক্ষুদ্র কণার ব্যবহারে সেরে যেতে পারে ত্বক থেকে পেটের একাধিক সংক্রমণ। এমনই সম্ভাবনার দিশা দেখাচ্ছে ভারতীয় বিজ্ঞানীদের গবেষণা।

Advertisement

সায়নী মুখোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২২ ১২:১০
Share:

রোগমুক্তির ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাচ্ছে রুপোর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা। প্রতীকী ছবি।

সোনার মাত্রাতিরিক্ত দামের কারণে বর্তমানে রুপোর গয়না বেশ জনপ্রিয় হয়েছে৷ তবে প্রাচীন কালে সোনার চেয়ে রুপোর ব্যবহার ছিল অধিক। কারণ সোনা মূলত মুদ্রা ও অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহৃত হত। কিন্তু রুপো ব্যবহার করা হত নিত্য প্রয়োজনীয় বাসনপত্র তৈরির কাজে। কারণ রুপোর পাত্রে জল এবং খাবার খাওয়াকে স্বাস্থ্যকর মনে করা হত।

Advertisement

কথিত আছে, আলেকজান্ডারের ভারত আক্রমণ কালে গ্রিক সৈন্যরা আন্ত্রিক রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু এই রোগে সৈন্যদের তুলনায় সেনাপতিরা কম আক্রান্ত হন। পরবর্তী কালে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, সৈন্যরা টিনের পাত্রে আর সেনাপতিরা রুপোর পাত্রে খেতেন। রুপো জলে দ্রবীভূত হয়ে কোলয়েডীয় দ্রবণ উৎপন্ন করে যা, শরীরের ভিতরে ও বাইরে ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে। রুপোর দ্রাব্যতা জলে বেশ খানিকটা কম হলেও তা জীবাণুনাশক হিসাবে যথেষ্ট।

শুধু মাত্র প্রাচীন কালে নয়, বর্তমান সময়েও নানা রকম সংক্রমণ দূর করতে রুপো সমান কার্যকরী৷ ভোপালের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার)-এর গবেষকদের গবেষণা থেকে জানা যাচ্ছে, রুপোর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা এবং জৈব পদার্থ (বায়োমলিকিউল) দিয়ে তৈরি সিলভার ন্যানোমেটিরিয়ালস কণা আমাদের দেহের একাধিক সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে৷ এই গবেষণাটি করা হয়েছে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক সপ্তর্ষি মুখোপাধ্যায় এবং জীববিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক চন্দন শাহির তত্ত্বাবধানে৷ এই গবেষণাটি করেন শুভজিৎ চক্রবর্তী এবং তাঁর দুই সহযোগী প্রীতি সাগরিকা এবং সৌরভ রাই৷

Advertisement

বাঁদিক থেকে, প্রীতি সাগরিকা, চন্দন শাহি, সপ্তর্ষি মুখোপাধ্যায়, শুভজিৎ চক্রবর্তী, সৌরভ রাই

ভোপালে অধ্যাপক সপ্তর্ষির গবেষণাগারে ২০১৭-১৮ এর শুরু থেকে এই সিলভার ন্যানোমেটিরিয়ালস নিয়ে কাজ শুরু হয়। গবেষণা বলছে, রুপোর ন্যানোমেটিরিয়ালস মানবদেহে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টিকারী কোষকে মারার ক্ষমতা রাখে।

আইসার ভোপালের গবেষকরা সিলভার ন্যানোম্যাটেরিয়াল উৎপাদনের জন্য একটি নিরাপদ এবং সহজ প্রক্রিয়া তৈরি করেছে, যা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই ন্যানোমেটিরিয়াল বানাতে মূলত রুপোর যৌগ এবং জৈব পদার্থ (অ্যামাইনো অ্যসিড) ব্যবহার করা হয়েছে, যা অতিবেগুনি রশ্মিতে জোনাকির মতো জ্বলে৷

এই যৌগ তৈরি করার সময় ছোট এবং বড় দুই আকারের কণা উৎপন্ন হয়েছে৷ সপ্তর্ষি জানিয়েছেন, ‘‘এই সিলভার ন্যানোমেটিরিয়ালসের আকার মানবদেহের কোষের থেকেও অনেক ছোট। আর গবেষণাগারে এটাও পরীক্ষিত যে, কণা আকারে যত ক্ষুদ্র তার কার্যক্ষমতা তত বেশি। মানুষের চুলের প্রস্থের চেয়ে ১০ লক্ষ গুণ ছোট ন্যানোমেটিরিয়ালসে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে৷’’

সিলভার ন্যানোম্যাটেরিয়াল তৈরি করতে গবেষকরা অ্যামাইনো অ্যাসিড টাইরোসিন ব্যবহার করেছেন। যার মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য আছে। টাইরোসিন মাংস, দুধ, বাদাম এবং মটরশুঁটি-সহ অনেক খাবারে পাওয়া যায়। এই টাইরোসিন আমাদের দেহে বিভিন্ন রকম প্রোটিনের মধ্যেও রয়েছে। টাইরোসিন, সিলভার ন্যানোম্যাটেরিয়াল তৈরি করতে একটি বিজারক বস্তু এবং ক্যাপিং এজেন্ট হিসাবে কাজ করে।

রুপো এবং টাইরোসিন মিলে তৈরি করছে ন্যানোক্লাস্টার ও ন্যানোপার্টিকলসের মিশ্রণ

এ ক্ষেত্রে গবেষণার জন্য ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া উভয়ের ওপরেই পরীক্ষা করা হয়৷ ল্যাবরেটরি স্ট্রেনের জন্য স্যাকারোমাইসিস সেরেভিসি (Saccharomyces cerevisiae) ছত্রাক এবং এসরিসিয়া কোলি ( Escherichia coli ) ব্যাকটেরিয়া নেওয়া হয়৷

প্যাথোজেনিক স্ট্রেনের ক্ষেত্রে ক্যানডিডা অ্যালবিকানস্ (Candida albicans) ছত্রাক এবং ব্যাসিলাস সেরেয়াস (Bacillus cereus) নামক ব্যাকটেরিয়া নেওয়া হয়৷

কী ভাবে কাজ করছে এই রোগ বিনাশকারী যৌগ? শুভজিৎ জানিয়েছেন, ‘‘সিলভার ন্যানোপার্টিকলস রোগ সৃষ্টিকারী কোষের সংস্পর্শে এলে কোষের ভেতরে প্রবেশ করে এবং সিঙ্গলেট অক্সিজেন প্রজাতি প্রস্তুত করে বা তা পরিমাণ অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেয়, ফলে কোষের বাইরের পর্দা ভেঙে গিয়ে তার মধ্যে থেকে প্রোটিন বেরিয়ে যায়। ঠিক যে ভাবে শত্রুর শত্রুকে বন্ধু বলার প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে, এ ক্ষেত্রেও ঠিক রোগ সৃষ্টিকারী কোষের শত্রু হিসেবে কোষ বিনাশকারী এই যৌগ আপনার বন্ধু হয়ে উঠছে রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে।’’

রোগ সৃষ্টিকারী কোষ (ছত্রাক এবং ব্যাকটেরিয়া)-কে মারার ক্ষমতা থাকার জন্য এই সিলভার ন্যানোমেটিরিয়ালস পরবর্তী কালে বা পরবর্তী গবেষণার অঙ্গ হিসেবে রোগ প্রতিরোধক ওষুধ তৈরিতে ব্যবহারের দিশা দেখাচ্ছে। বৈজ্ঞানিক গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি প্রকাশিত অ্যাপলয়েড মেটিরিয়ালস অ্যান্ড ইনটারফেসেস জার্নালে৷

তথ্যসূত্র: Title: Tyrosine Templated Dual-Component Silver Nanomaterials Exhibit Photoluminescence and Versatile Anti-Microbial Properties Through ROS Generation

Journal: ACS Applied Materials & Interfaces

Publishing house: American Chemical Society

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন