হাঁপানিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত।
হাঁপানির সমস্যায় রোগীকে সারা বছরই সাবধানে থাকতে হয়। আগে থেকে সাবধান না হলে, বিভিন্ন ঋতুতে হাঁপানির টান বেড়ে যেতে পারে। তাই কতগুলি বিষয় মাথায় রাখলে হাঁপানিকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অ্যাজ়মা বা হাঁপানি কী?
ফুসফুসের অ্যালার্জি থেকে অ্যাজ়মা হয়, যার ফলে প্রশ্বাস ছাড়তে সমস্যা হয়। কারণ, অ্যালার্জির কারণে শ্বাসনালী অত্যন্ত সংবেদনশীল হয়ে ওঠে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে শ্বাসনালীর ব্যাস কমে যায়। ফুসফুসের মধ্যে কিছুটা হাওয়া থেকে যাওয়ার জন্য, সেগুলি একটু ফুলে থাকে। বিষয়টিকে ‘এয়ার ট্র্যাপিং’ বলা হয়। চিকিৎসক তনভির রেজ়া বললেন, ‘‘হাঁপানির টান উঠলে নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় সাঁই সাঁই শব্দ হয়। ফুসফুসের ভিতরের হাওয়া পুরোটা ছাড়তে না পারলে তখন কষ্ট হয়।’’
হাঁপানির টান কখন শুরু হয়
বিভিন্ন জিনিস থেকে ব্যক্তিভেদে অ্যালার্জি হতে পারে। ধুলোবালি বা পোষ্যদের লোম থেকেও অ্যালার্জি হতে পারে। আবার ঘাস বা কোনও ফুলের পরাগরেণু থেকেও এই ধরনের অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বাতাসের কোনও উপাদান (অ্যালার্জেন) ফুসফুসে গিয়ে অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। তার পর হাঁপানির টান ওঠে। তনভিরের কথায়, ‘‘হয়তো দু’জন ব্যক্তির হাঁপানি শুরু হয়েছে। কিন্তু দেখা যাবে, তাঁদের ক্ষেত্রে অ্যালার্জেন আলাদা।’’
ঋতুভেদে সতর্কতা
কারও ক্ষেত্রে শীতকালে হাঁপানির টান বেশি ওঠে। আবার কারও ক্ষেত্রে গরমের সময়ে। তনভিরের মতে, যিনি হাঁপানিতে ভুগছেন, বছরের কোন সময়ে কষ্ট বেশি হচ্ছে, সেটা তিনিই সবচেয়ে ভাল জানবেন। চিকিৎসক বললেন, ‘‘কোনও কোনও অ্যালার্জেনের জন্য সারা বছর কমবেশি হাঁপানি হতে পারে। আবার ঋতুভেদে সেটা বাড়তেও পারে।’’
ইনহেলার
হাঁপানির কষ্ট কমাতে রোগীরা ইনহেলার ব্যবহার করেন। মূলত দু’ধরনের ইনহেলার দেখা যায়। একটি সাধারণ ইনহেলার। অন্যটির মধ্যে স্টেরয়েড থাকে। তনভির জানালেন, কেউ যদি সারা বছর হাঁপানিতে কষ্ট পান, সে ক্ষেত্রে তাঁকে স্টেরয়েড যুক্ত ইনহেলার ব্যবহার করতে হতে পারে। অন্য দিকে, ঋতুভেদে হাঁপানির সমস্যা হলে সাধারণ ইনহেলার ব্যবহার করা যায়। তনভিরের কথায়, ‘‘যদি দেখা যায়, ফ্রেব্রুয়ারি মাসে বেশি হাঁপানির সমস্যা দেখা দিচ্ছে, সে ক্ষেত্রে জানুয়ারি মাস থেকে কেউ যদি নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার করতে পারেন, তা হলে ফ্রেব্রুয়ারি মাসে তিনি ভাল থাকবেন।’’
হাঁপানি কি সারে?
চিকিৎসক জানালেন, হাঁপানি সম্পূর্ণ রূপে সারানো সম্ভব নয়। সুগার বা রক্তচাপের সমস্যা যেমন সম্পূর্ণ রূপে সারানো যায় না, হাঁপানিও সে রকমই। তবে, সারানো না গেলেও হাঁপানিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ওষুধ ব্যবহার করলে রোগী ভাল থাকেন।
হাঁপানিকে দূরে রাখতে
বছরের যে কোনও সময়েই হাঁপানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই আগে থাকতেই সতর্কতা মেনে চলতে হবে। এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন—
১) কারও হাঁপানি থাকলে সঙ্গে ইনহেলার রাখতেই হবে।
২) দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে হাঁপানির সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
৩) ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে হাঁপানিকে দূরে রাখতে অবিলম্বে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
৪) যে যে বিষয়গুলি থেকে কারও হাঁপের টান ওঠে, সেগুলি থেকে দূরে থাকা ভাল।
৫) ভাইরাল সংক্রমণ থেকে হাঁপানি বেড়ে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকা উচিত। যেমন আশপাশে কারও সর্দিকাশি হলে তাঁদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। প্রয়োজনে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
৬) ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়াতে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যয়াম করা যেতে পারে।
৭) গরম বা শীতকালে বাতাসে দূষণের মাত্রা বেশি থাকলে, তখন বাড়িতে থাকার চেষ্টা করতে হবে। বাইরে বেরোলেও মাস্ক ব্যবহার করতে পারলে ভাল হয়।