Effects of Weight Loss Medicines

ওজন কমাতে ইঞ্জেকশন নিচ্ছিলেন যুবক, ওষুধের মাপের ভুলে পক্ষাঘাতে অসাড় হল পাকস্থলী

ওজন কমানোর ইঞ্জেকশনের ভুল ডোজ়ে নিয়ে সঙ্কটাপন্ন যুবক। পক্ষাঘাতে অসাড় হয়ে গিয়েছে পাকস্থলী। শুরু হয়েছে শ্বাসকষ্টও।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৩:০৯
Share:

পাকস্থলীর পক্ষাঘাত কী? কী ভাবে এই রোগে আক্রান্ত হলেন যুবক? —প্রতীকী ছবি।

ওজন কমানোর ইঞ্জেকশন নিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বছর বত্রিশের এক যুবক। একটি সংবাদ সংস্থা সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, আগরার বাসিন্দা ওই যুবক দুবাই থেকে ওষুধটি কেনেন। চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়েই নিয়মিত ইঞ্জেকশনটি নিচ্ছিলেন তিনি। এর পরেই তাঁর পেটে যন্ত্রণা শুরু হয়। দেশে ফিরে অহমদাবাদের একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। পরীক্ষা করে ধরা পড়ে, তাঁর পাকস্থলী পুরোপুরি অসাড় হয়ে গিয়েছে। তিনি গ্যাস্ট্রোপ্যারেসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে পাকস্থলীর পক্ষাঘাত।

Advertisement

অহমদাবাদের যে হাসপাতালে ওই যুবকের চিকিৎসা চলছে, সেখান থেকে জানানো হয়েছে টিরজ়েপেপটাইড নামক ওজন কমানোর ইঞ্জেকশন নিয়মিত নেওয়ার কারণেই পাকস্থলীর পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। এই ওষুধ এ দেশে এখনও পর্যন্ত না এলেও ইউরোপ ও আমেরিকায় খুবই জনপ্রিয়। সেটি ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও রোগীদের দেওয়া হয়। তবে ওষুধটি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নেওয়া যায় না। ওই যুবক কী ভাবে ওষুধটি পেলেন, তা জানা যায়নি। চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় যুবকের খাদ্যনালিতেই সমস্ত খাবার জমা হচ্ছে। তা আর পাকস্থলীতে গিয়ে পৌঁছচ্ছে না। গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে যুবকের পাকস্থলী পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে রয়েছে।

কী ভাবে পাকস্থলীর পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হলেন যুবক?

Advertisement

ওজন কমানোর ওষুধ খেলে বা এই জাতীয় ইঞ্জেকশন নিলে যে পাকস্থলীর পক্ষাঘাত হতে পারে সে ব্যাপারে নানা সময়ে গবেষণাপত্র ছাপা হয়েছে ‘জামা’ জার্নালে। ইউনিভার্সিটি অফ ব্রিটিশ কলম্বিয়াতে এই নিয়ে গবেষণাও হয়েছে। গবেষকেরা জানিয়েছেন, এই ধরনের ওষুধ দিনের পর দিন ভুল ডোজ়ে নিতে শুরু করলে ওজন কমবে ঠিকই কিন্তু আরও নানা রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। তার মধ্যে একটি হল পাকস্থলীর পক্ষাঘাত বা গ্যাস্ট্রোপ্যারেসিস। এই ধরনের ওষুধ ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতেই ব্যবহার করা হয়। কিন্তু ওজন কমানোর জন্য তা ব্যবহার করতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হয়।

টিরজ়েপেপটাইড ওষুধটি ‘গ্যাসট্রিক ইনহিবিটরি পলিপেপটাইড’ (জিআইপি) ও ‘গ্লুকাগন-লাইক পলিপেপটাইড’ (জিএলপি-১) নামক দু’টি হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। এই দুই হরমোনের কাজ হল খিদে কমানো। সাধারণত খাবার খাওয়ার সময়েই এই দুই হরমোনের নিঃসরণ হয়। পেট ভরে গেলে এরাই সঙ্কেত পাঠায় মস্তিষ্কে। ওষুধটি এই দুই হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দিয়ে খিদে কমানোর চেষ্টা করে। কিন্তু ওষুধটি যদি ঠিক পরিমাণে না নেওয়া হয়, তা হলে খিদে তো কমবেই, পাশাপাশি পাকস্থলীর কার্যক্ষমতাও নষ্ট হবে। পাকস্থলী আর কাজই করতে পারবে না। যুবকের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

এন্ডোস্কোপি করে দেখা গিয়েছে, যুবকের পাকস্থলীর পেশিগুলি দুর্বল হয়ে গিয়েছে। ফলে সেগুলির সঙ্কোচন-প্রসারণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাই খাবার আর পাকস্থলীতে ঢুকতে পারছে না। ফলে খাবার জমতে জমতে খাদ্যনালিতেও সংক্রমণ দেখা দিয়েছে।

এ দেশেও ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্‌থ’ (এনআইএইচ)-এর একটি গবেষণাপত্রে লেখা হয়েছে, ডায়াবিটিস ও স্থূলতা আছে এমন রোগীদের উপর পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে টিরজ়েপেপটাইড, সেমাগ্লুটাইডের মতো ওজন কমানোর ওষুধ পাকস্থলীর পক্ষাঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধটি ব্যবহার করা নিরাপদ নয় বলেই জানানো হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement