খাবারে মিশছে, শরীরে ঢুকছে। অজান্তেই ঘটছে বিপদ। ছবি: সংগৃহীত।
বিপদের নাম প্লাস্টিক। জানলেই বা কে ভাবছেন? বরং বোতল থেকে টিফিনবাক্স, খাবার ভরে দেওয়া-নেওয়ার জন্য বড্ড সুবিধার এই জিনিস। শিশুর খেলনা থেকে হেঁশেলের সুদৃশ্য থালা, ওষুধের কৌটো, ব্যাগ— কোথায় নেই প্লাস্টিক!
ভীষণ সুবিধার এই জিনিসটি চুপিসারে ঘটিয়ে যাচ্ছে বিপদ। জানা-বোঝার আগেই ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে । সম্প্রতি ‘টক্সিক লিঙ্ক’ নামে এক সংস্থা নুন এবং চিনি নিয়ে এক সমীক্ষা প্রকাশ্যে এনেছে। তাতেই উঠে এসেছে, বাজারে যে চিনি এবং নুন বিকোচ্ছে, তাতেই মিশে রয়েছে এই ‘মাইক্রোপ্লাস্টিক’। অতি ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা চোখে দেখা যায় না, অথচ জল, খাবার এমনকি শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গেও তা ঢুকে পড়ছে শরীরে। তার প্রভাব পড়ছে প্রজনন থেকে দৈনন্দিন জীবনে। জটিল অসুখের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
অজান্তে জীবনের এত বড় ক্ষতি করা মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে এখনই সতর্ক না হলে ভীষণ বিপদ। প্লাস্টিকের অতি ক্ষুদ্র কণা শরীরে যাওয়া থেকে বাঁচতে এখনই বাড়ি থিকে বিদায় করুন ৫ জিনিস।
প্লাস্টিকের বোতল
স্টিল বা কাচের গ্লাসে বালতি থেকে জল নিয়ে খাওয়ার অভ্যাস কবেই বিদায় নিয়েছে। তবে সেই অভ্যাস না ফেরালে কিন্তু সমস্যা। শুধু প্লাস্টিকের দামি, কম দামি বোতল বিদেয় করলেই হবে না, জল রাখার জায়গাটিও হওয়া দরকার প্লাস্টিকমুক্ত। কাচের জগ, স্টিলের বালতি, মাটির কলসি— এ ক্ষেত্রে হতে পারে ভাল উপায়। তামা বা স্টিলের বোতলও জল খাওয়া এবং রাখার জন্য বেছে নিতে পারেন।
চায়েও বিপদ!
২০১৯ সালে কানাডার একটি সমীক্ষা বলছে, কিছু কিছু সংস্থার প্লাস্টিকের টি-ব্যাগ থেকে চায়ে মিশছে ক্ষতিকর প্লাস্টিক কণা। গরম জলে প্লাস্টিকের একটি টি-ব্যাগ ডোবানোর ফলে প্রতি কাপে ১, ১৬০ কোটি প্লাস্টিক কণা মিশছে। সেই চা পান করছেন লোকে। অটোনমাস ইউনিভার্সিটি অফ বার্সেলোনাতেও এই নিয়ে গবেষণা হয়েছে। একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত টি-ব্যাগের প্লাস্টিকও ভীষণ ক্ষতিকর। তাই টি-ব্যাগ কেনার আগে দেখে নিন সেটি প্লাস্টিকের কি না। না হলে চা-পাতা ব্যবহার করে চা খান।
চপিং বোর্ড থেকে কৌটো
চপিং বোর্ড প্লাস্টিকের। কেক কাটার ছুরি প্লাস্টিকের। রেস্তরাঁ থেকে খাবার দেওয়া হয় যে কৌটো, সেখানেও প্লাস্টিক। এই সবই বাদ দিতে হবে। কাচের বা কাঠের চপিং বোর্ড ব্যবহার করুন। খাবার দেওয়ার প্লাস্টিকের কৌটো ঘরে না জমিয়ে, সেগুলি ব্যবহার না করে ফেলে দিন। প্লাস্টিকের বদলে পুরনো দিনের মতো স্টিলের টিফিন কৌটোয় সন্তানকে খাবার দিন।
হেঁশেলের জিনিসপত্র
মশলা থেকে নুন, চিনি, তেল রাখার কৌটোও কি প্লাস্টিকের? এটি কিন্তু বর্তমান ছবি। বিপদ সম্পর্কে সচেতন হলে প্লাস্টিকের বদলে স্টিল বা কাচের কৌটোয় জিনিস রাখুন। কাঠের কৌটোতেও রাখতে পারেন। সেগুলিও ব্যবহার করতে পারেন। ‘টক্সিক লিঙ্ক’ নামে এক সংস্থার সমীক্ষা বলছে, নুনের প্যাকেটে প্রতি কিলোগ্রামে প্লাস্টিক কণা মিলেছে ৬.৭১ থেকে ৮৯.১৫। আয়োডিন-যুক্ত লবণে মিলেছে ৮৯.১৫টি প্লাস্টিক কণা। চিনিতেও রয়েছে ১১.৮৫টি থেকে ৬৮.২৫টি প্লাস্টিক কণা।
প্লাস্টিকের ব্যাগ
চাল, ডাল, এমনকি রসের মিষ্টিও প্লাস্টিকের প্যাকেটে ভরে দেওয়ার চল। সমস্ত রকম প্লাস্টিক বাদ দিতে হবে। মিষ্টির দোকানে মাটির ভাঁড়ে রসের মিষ্টি দেওয়ার অনুরোধ করতে পারেন। বাজারের ব্যাগ থেকে দৈনন্দিন ব্যবহারের ব্যাগ হোক চটের কিংবা কাপড়ের।