ব্যায়ামের পরে পেশির ব্যথা কমানোর উপায় বললেন প্রশিক্ষক। ছবি: ফ্রিপিক।
জিমে গিয়ে প্রথম দিনই ট্রেডমিলে টানা ১৫ মিনিট দৌড়ে নিলেন। তার পর ওজন তুলে কার্ডিয়ো করলেন। ব্যায়াম শেষে বাড়ি ফিরে দেখলেন, হাত-পায়ের পেশিতে অসহ্য যন্ত্রণা। পায়ের কাফ মাসল ফুলে উঠেছে, উঠতে-বসতে গেলেই টান ধরছে। সেই সঙ্গে সারা গায়ে ব্যথা। এই যন্ত্রণা নিয়ে পরের দিন আর জিম করার বা দৌড়োদৌড়ি করার ইচ্ছাই হল না। অতএব শরীরচর্চায় ইতি টানার কথাই ভাবলেন। এই সমস্যা এখন বেশির ভাগেরই। সদ্য শরীরচর্চা শুরু করেছেন যাঁরা অথবা অনেক দিন পর পর জিমে গিয়ে কসরত করার চেষ্টা করেন, তাঁদের পেশির ব্যথা বেশি ভোগায়। হঠাৎ করেই ভারী ব্যায়াম করতে গিয়ে পেশিতে আঘাত লাগার ঝুঁকিও বাড়ে। এমনও দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ দিনের ব্যবধানে হঠাৎ করেই জগিং শুরু করে গোড়ালি মচকে গিয়ে যন্ত্রণায় কাতর হয়েছেন অনেকে। এর থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী?
হঠাৎ ব্যায়াম বা দৌড় শুরু করলে বা মাস্ল ট্রেনিং করলে পেশিতে টান ধরে। একে বলা হয় ‘ডিলেড অনসেট মাস্ল সোরনেস’ (ডিওএমএস বা ডোমস)। ব্যায়াম করার ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পেশিতে টান ধরা, পেশির খিঁচুনি, এমনকি নিয়ম না মেনে প্রথম দিনেই ভারী ব্যায়াম করতে গিয়ে লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে। তার থেকেই ব্যথার উৎপত্তি। আসলে যাঁরা নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করেন, তাঁদের পেশি তৈরিই থাকে। হঠাৎ করে যদি মাস্ল ট্রেনি বা স্ট্রেংথ এক্সারসাইজ় শুরু করেন কেউ, তা হলে পেশি সেই ধকল নিতে পারে না। প্রদাহ শুরু হয় পেশিতে। অনেক সময়ে সেই অংশের মেমব্রেন ছিঁড়ে যায়, যার থেকে যন্ত্রণা শুরু হয়।
পেশির ব্যথা থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী?
শরীরচর্চা শুরু করতে হলে তার কিছু নিয়ম আছে। এই বিষয়ে ফিটনেস প্রশিক্ষক অনুপ আচার্য জানাচ্ছেন, হঠাৎ খুব বেশি শারীরচর্চা শুরু করলে বা দৌড়োলে ‘ডিলেড অনসেট মাস্ল সোরনেস’ হতে পারে। তাই ওয়ার্কআউট শুরু করার আগে পেশিকে প্রস্তুত করে নিতে হবে। সে জন্য ওয়ার্ম আপ করা খুব জরুরি। তাঁর মতে তিন ধাপে শরীরচর্চা শুরু করতে হবে—
১) শুরুতে ওয়ার্ম আপ করে শরীরের তাপমাত্রা বাড়াতে হবে।
২) স্ট্রেচিং করে পেশির আড়ষ্টতা কাটাতে হবে।
৩) কসরত শুরু করতে হবে ধীরে ধীরে, সময় নিয়ে।
ধরুন, আপনি ট্রেডমিলে দৌড়োতে চান অথবা স্কোয়াট করতে চান, প্রথম দিনেই যদি টানা ২০ মিনিট দৌড়ে ফেলেন বা ১০ সেট করে স্কোয়াট করে ফেলেন, তা হলে পেশির ব্যথা ভোগাবে। তাই শুরুতে স্পট জগিং করে শরীরকে চাঙ্গা করলেন। এর পর কিছু ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম করে নিন। তার পর মিনিট পাঁচেক ট্রেডমিলে দৌড়োন। এর পর ১০ বার করে এক সেট স্কোয়াট করুন। প্রথম সপ্তাহ এই ভাবে করলে ভাল। দ্বিতীয় সপ্তাহে দৌড়ের সময় ১০ মিনিট করুন, স্কোয়াট ১০ সেট করে দু’বার করুন। তৃতীয় সপ্তাহে সময় আরও একটু বাড়ান। এই ভাবে করতে পারলে পেশির জোর বাড়বে, যন্ত্রণাও হবে না।
যে কোনও শরীরচর্চা শুরু আগে ওয়ার্ম আপ করা খুব জরুরি। এতে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় যা পেশির সঙ্কোচন ও প্রসারণে সহায়ক। সেই সঙ্গে পেশির স্থিতিস্থাপকতাও বাড়ে, ফলে আঘাত লাগার সম্ভাবনা কমে। ওয়ার্ম আপ করলে শ্বাসপ্রশ্বাসের গতির ভারসাম্য থাকে, যা কসরতের সময়ে বাড়তি অক্সিজেনের জোগান দেয়। ফলে পেশি ক্লান্ত হয় না।
আরও কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে যেমন—
ব্যথা হলে শরীরচর্চা বন্ধ না করে চালিয়ে যেতে হবে। যদি পায়ে ব্যথা হয়, তা হলে প্রশিক্ষকের পরামর্শ মতো সে দিন পায়ের ব্যায়াম না করে অন্য ব্যায়াম করতে হবে।
ব্যায়াম বা দৌড়নোর পরে ওয়র্ম বাথ নিলে উপকার পাবেন। শারীরচর্চার পরে বাড়ি ফিরে ঈষদুষ্ণ জলে স্নান করে নিতে পারেন।
অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত দৌড়লে ঊরুর পিছনের অংশের পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার ফলে হ্যামস্ট্রিংয়ে টান ধরে। বেশি আঘাত লাগলে বা পেশি ফুলে গেলে বরফ ঘষতে পারেন। ফোন রোলার দিয়ে ফোলা জায়গায় রোল করলে আরাম পাবেন।
খাওয়াদাওয়ায় নজর দিতে হবে। ব্যায়াম করার আগে বাজারচলতি প্রোটিন শেক না খেয়ে ছাতুর শরবত খেতে পারেন। তা পুষ্টি ও এনার্জি দুই-ই দেবে। না ধরনের বাদাম, ড্রাই ফ্রুটসও অল্প খেতে পারেন। ব্যায়ামের পরে হালকা প্রোটিন ডায়েটে রাখতেই হবে। বাড়িতে দই বা দুধ যা-ই থাকুক, তার সঙ্গে পছন্দের কিছু ফল যেমন আপেল, কলা দিয়ে স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন। ডিম খাওয়াও জরুরি। অন্তত একটি করে ডিম সেদ্ধ কিংবা পোচ করে খেতে হবে শরীরচর্চার পরে। সঙ্গে এক পিস বা দু’পিস পাউরুটি খেতে পারলে কার্বোহাইড্রেটের প্রয়োজনীয়তাও মিটবে। নিরামিষ খেলে মাশরুম বা পনির খেতে পারেন।