রাতভর ভেজানো না কি রান্না করা ওট্স, কোনটি খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল? ছবি: সংগৃহীত।
কাচের শিশিতে টক দই, ওট্স, পছন্দের বাদাম, কিছু বীজ মিশিয়ে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলেই হল। সকালের জন্য নিশ্চিন্ত।তাড়াহুড়োর সময়ে প্রাতরাশ রান্নার ঝামেলা নেই। শিশি বার করে সময়মতো খেয়ে নিলেই হল। এমনকি, তা নিয়ে যাওয়া চলে অফিসেও।
ব্যস্ত জীবনে সুবিধার জন্যই অনেকে এই ভাবে ওট্স খেতে পছন্দ করেন। তবে ব্যতিক্রমও আছে। কেউ পছন্দ করেন ওট্স খিচুড়ি, কেউ খান স্মুদি। কেউ আবার ওট্স দিয়ে বানিয়ে নেন অমলেটও।
তবে পুষ্টিগুণের প্রশ্ন আসে, হজম নিয়ে কথা হয়, তা হলে কী ভাবে ওট্স খাওয়া ভাল? পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, রান্না করা বা রাতভর ভিজিয়ে রাখা ওট্স— দুই-ই খাওয়া চলে। কোনওটিতেই হজমে তেমন সমস্যা হয় না। তবে তুলনামূলক ভাবে রান্না করা ওট্স একটু বেশি সহজপাচ্য, বলছেন পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক।
ওট্সে থাকে ‘অ্যাভেনানথ্রামাইড’ নামক এক প্রকার অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। এই অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট শরীরের প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। ওট্সে থাকে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার, যা পেটের সমস্যার সমাধান করে সহজেই। বিশেষ করে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে রেহাই পেতে ওট্স অনবদ্য। ওট্সে থাকা বিটা-গ্লুকান নামক এক প্রকার ফাইবার, যা হজমে সাহায্য করে। উপকারিতার জন্য ওটসের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম বলে ডায়াবেটিকদের জন্যও ভাল।
পুষ্টিবিদ শ্বেতা জে পাঞ্চাল মাঝেমধ্যে সমাজমাধ্যমে পুষ্টি সংক্রান্ত টিপ্স দেন। তিনি বলছেন, রাতভর ভিজিয়ে রাখা ওট্সে ফাইটিক অ্যাসিড মেলে, যা কারও কারও ক্ষেত্রে বদহজম, পেট ফাঁপার মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে।
তা হলে কি রান্না করা ওট্স খাওয়া ভাল?
গরম গরম, নরম খাবার যাঁদের পছন্দ, তাঁদের জন্য ওট্সের খিচুড়ি অবশ্যই ভাল, বলছেন অনন্যা। শম্পার কথায়, এটা অনেকটাই ব্যক্তিগত পছন্দের উপর নির্ভর করে। অনন্যা জানাচ্ছেন, রাতভর ভিজিয়ে রাখলে ওট্সের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কমে, ফলে এটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়ে না। তা ছাড়া রেজ়িস্ট্যান্ট স্টার্চ তৈরি হয় এতে। ফলে দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি রাখতে সাহায্য করে। রেজ়িস্ট্যান্ট স্টার্চ প্রিবায়োটিক অর্থাৎ ভাল ব্যাক্টেরিয়ার খাবার হিসাবে কাজ করে। ফলে তা হজমে সহায়ক। এতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টও বেশি মেলে।অন্য দিকে, ওট্স রান্না করলে কিছু কিছু ভিটামিন যেমন বি ভিটামিন তাপমাত্রার জন্য কমে যেতে পারে। ভেঙে যায় রেজ়িস্ট্যান্ট স্টার্চও।
ফলে পুষ্টিগুণ পেতে হলে ভিজিয়ে রাখা ওট্স খাওয়া ভাল। আবার হজমের সুবিধার কথা ভেবে রান্না করা ওট্স খেতে পারেন। তবে যে ভাবেই খাওয়া হোক না উপকারিতায় বিশেষ হেরফের হয় না। দুধে ভিজিয়েও ওট্স খান অনেকে। দুধে থাকা ল্যাক্টোজ় হজমে সমস্যা থাকলে বা পেটের কথা ভাবলে দই দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। একই সঙ্গে পুষ্টিবিদেরা সতর্ক করছেন, প্যাকেটজাত ইনস্ট্যান্ট বা মশলাদার ওট্স এড়িয়ে চলা দরকার। বদলে প্রক্রিয়াজাত নয়, এমন ওট্সই বেছে নেওয়া ভাল।