ক্যানসার নির্মূল করবে, নতুন ওষুধ আবিষ্কারের দাবি। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ইমিউনোথেরাপিতে ক্যানসার নির্মূল করার চেষ্টায় অনেকটাই সফল হলেন গবেষকেরা। নতুন এক ওষুধ তৈরি হয়েছে যা ইঞ্জেকশনে ভরে সরাসরি টিউমারের উপর প্রয়োগ করা যাবে। নির্দিষ্ট ডোজ়ে দিলে তা ক্যানসার সৃষ্টিকারী টিউমার কোষ ধ্বংস করবে বলেই দাবি গবেষকদের। স্তন ক্যানসার, ত্বক ও প্রস্টেট ক্যানসারের রোগীদের উপর এই ওষুধ প্রয়োগ করে ভাল ফল পাওয়া গিয়েছে বলে খবর। আমেরিকার রকফেলার ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা প্রাথমিক ভাবে ১২ জন ক্যানসার রোগীর শরীরে ওষুধটি প্রয়োগ করেছেন। তাঁদের মধ্যে দু’জনের ক্যানসার সম্পূর্ণ ভাবে নির্মূল হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
ক্যানসার চিকিৎসায় ক্রমেই জনপ্রিয়তা বাড়ছে ইমিউনোথেরাপি নামের এক চিকিৎসাপদ্ধতির। কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশনের বাইরে এই চিকিৎসা আশার আলো দেখাচ্ছে বহু ক্যানসার রোগীকে। রকফেলার ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা ক্যানসার সারাতে যে চিকিৎসার কথা বলছেন, তা আসলে এক প্রকার ইমিউনোথেরাপিই। যে ওষুধটি তৈরি হয়েছে তার নাম সিডি৪০ ২১৪১-ভি১১। ওষুধটি এক ধরনের মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, যা টিউমার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম বলে দাবি করা হয়েছে। ‘ক্যানসার সেল’ নামক মেডিক্যাল জার্নালে খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গবেষক হুয়ান ওসোরিও লিখেছেন, বছর কয়েক আগে থেকে সিডি৪০ ওষুধটি নিয়ে গবেষণা ও ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছিল। তবে ওষুধটি মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে আশানুরূপ ফল পাওয়া যায়নি। এর পর ওষুধটির ফর্মুলায় কিছু বদল এনে নতুন ভাবে সেটি তৈরি করা হয়েছে। সিডি৪০ অ্যান্টিবডির আরও উন্নত রূপ হল ২১৪১-ভি১১। এই ওষুধটি স্তন ক্যানসার, ত্বকের ক্যানসার বা মেলানোমা, প্রস্টেট ক্যানসার, ব্লাডার ক্যানসার সারাতে বিশেষ ভূমিকা নেবে বলে আশাবাদী গবেষকেরা।
ক্যানসারের চিকিৎসা মানেই আতঙ্ক। রেডিয়োথেরাপি বা কেমোথেরাপিতে রোগীর যন্ত্রণা বাড়ে। ক্যানসার কোষগুলির পাশাপাশি সুস্থ কোষগুলিরও ক্ষতি হতে থাকে, ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা তছনছ হয়ে যায়। ইমিউনোথেরাপি রোগীর এই যন্ত্রণাই কমাতে সাহায্য করে। এই চিকিৎসাপদ্ধতিতে রোগীর শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বহু গুণে বাড়িয়ে তুলে ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়, যাতে প্রতিরোধী কোষগুলি আবার জেগে উঠে লড়াই করতে পারে। এতে পাকাপাকি ভাবে ক্যানসার কোষগুলিকে নির্মূল করা সম্ভব হয়। শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রতিরোধশক্তিও বৃদ্ধি পায়। নতুন ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। এর দ্বারা ৬ জন ক্যানসার রোগীর টিউমার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ হয়েছে এবং ২ জন ক্যানসারমুক্ত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন গবেষকেরা। আরও বহু জনের উপর পরীক্ষা করেই এ ব্যাপারে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাবে।