কোন জিনিসের অভাবে ত্রিশের পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগের দিনগুলিতে অসম্ভব পেটের যন্ত্রণা। হাত ও পায়ের পেশিতে খিঁচুনি হলেই মনে করা হয়, হরমোনের তারতম্য হচ্ছে। কিন্তু তা না-ও হতে পারে। মহিলাদের কিছু সমস্যা মধ্য ত্রিশের পর থেকেই শুরু হয়, যার মধ্যে একটি হল হাড় ও পেশির ব্যথা। অকারণে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, ঘন ঘন মেজাজের বদল এমনকি দৃষ্টিবিভ্রমও হতে দেখা যায় অনেকের ক্ষেত্রে। এই সবের কারণ অত্যধিক মানসিক চাপ বা হরমোনের গোলমাল ভেবে এড়িয়ে যান কেউ কেউ। আবার কেউ নানা রকম সাপ্লিমেন্ট খেতে শুরু করেন। এ সবের কারণ একটিই খনিজের ঘাটতি, তা হল ক্যালশিয়াম। চল্লিশের পর থেকে মহিলাদের শরীরে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হয়, এমন ধারণা রয়েছে। তবে এই খনিজের ঘাটতি হতে পারে যে কোনও বয়সেই। ত্রিশের পর থেকে এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে।
ক্যালশিয়ামের অভাবে এই লক্ষণগুলিই কি দেখা দিচ্ছে?
হাত, পা ও পিঠে অসহ্য যন্ত্রণা। একটানা বসে থেকে পায়ের পেশি টান ধরা, উঠতে-বসতে গেলে কোমর-পিঠে ব্যথা খুবই সাধারণ লক্ষণ। এই সময় থেকে সতর্ক না হলে, পরবর্তী সময়ে গিয়ে অস্টিয়োআর্থ্রাইটিস বা অস্টিয়োপোরোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
পায়ের অসাড়তা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায়। বিশেষ করে ঋতুস্রাব শুরুর কিছু দিন আগে থেকে পায়ে যন্ত্রণা, পায়ের পাতা অসাড় হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়। ক্যালশিয়ামের অভাব যদি বেশি হয়, তা হলে পায়ের পাতার নীচে, আঙুলে, গোড়ালিতে অসাড় ভাব আরও বাড়বে। তখন হাঁটাচলা করতে সমস্যা হবে।
ক্লান্তি বা ঝিমুনি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যায়, তা হলে বুঝতে হবে, ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হচ্ছে শরীরে। পর্যাপ্ত ঘুমের পরেও ঝিমুনি যাবে না, দিনের বেলায় ঘুম বেশি পাবে। ঘন ঘন হাই উঠতে থাকবে।
ক্যালশিয়ামের ঘাটতির ছাপ পড়ে চেহারাতেও। চোখ-মুখে ক্লান্তির ভাব থাকবে, চোখের তলায় কালি পড়বে। ত্বক হঠাৎ করে শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যাবে, চুল পড়বে বেশি, হাতের নখের রং সাদাটে হতে থাকবে, নখ ভঙ্গুর হয়ে যাবে।
ক্যালশিয়ামের অভাব মানে দাঁতের সমস্যাও শুরু হবে। মাড়িতে যন্ত্রণা, মাড়ি থেকে রক্তপাত, দাঁত ভেঙে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেবে। কিছু খেতে গেলে মাড়িতে ব্যথা হবে, মাড়ি ফুলে উঠবে।
মানসিক স্বাস্থ্যেও বদল আসবে। অকারণে উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা ভোগাবে। বদলে যাবে মেজাজ। অবসাদ বাড়তে থাকবে। সব সময়েই বিষণ্ণ ভাব থাকবে। ক্যালশিয়ামের ঘাটতি বেশি হলে হাইপোক্যালশেমিয়ার লক্ষণ দেখা দেয়। এই অবস্থা গুরুতর। তখন হৃৎস্পন্দন অনিয়মিত হয়ে যাবে, পেশির জোর কমবে, যখন তখন খিঁচুনি হতে পারে, এমনকি দৃষ্টিবিভ্রমও হতে পারে। চিন্তাভাবনা অস্বচ্ছ হবে, সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হবে। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে।
সতর্ক থাকতে
ক্যালশিয়ামের ঘাটতি পূরণে অনেকে কম বয়স থেকেই সাপ্লিমেন্ট নিতে শুরু করেন। তবে যে কোনও সাপ্লিমেন্ট নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সুষম আহার ও শরীরচর্চাতেই কাজ হবে বেশি। রোজের পাতে দুধ, দই, পনির, ছানা রাখতে পারলে ভাল হয়। প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসব্জি, ফল খেতে হবে। সয়াবিন, বাদাম, তিল ক্যাশিয়ামের ভাল উৎস। দুগ্ধজাত খাবারে অ্যালার্জি থাকলে নানা রকম বাদাম, দানাশস্য খেতে পারেন।
রোজ অন্তত ১৫-২০ মিনিট গায়ে রোদ লাগাতে হবে। ভিটামিন ডি-এর অভাব হলে ক্যালশিয়ামের ঘাটতিও বাড়বে।
প্রতি দিন হাঁটা, দৌড়নো, জগিং বা যোগব্যায়ামের মতো শরীরচর্চা করতেই হবে। অন্তত আধ ঘণ্টা শরীরচর্চার জন্য রাখলে ক্যালশিয়ামের ঘাটতি হবে না।