ফুসফুসের মারণ রোগ থেকে সাবধান, কোন পরীক্ষাগুলি করিয়ে রাখবেন? ছবি: এআই।
ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে চিন্তা বেড়েই চলেছে। আগে মনে করা হত, ধূমপায়ীরাই বুঝি এই ক্যানসারে আক্রান্ত হন। এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু তা নয়। যিনি সিগারেট বা তামাকজাত দ্রব্য ছুঁয়েও দেখেননি, তাঁরও হচ্ছে ফুসফুসের ক্যানসার। এর জন্য অনেকটাই দায়ী দূষণ। বাতাসে ধোঁয়াধুলো ও দূষিত গ্যাসের মাত্রা যত বাড়ছে, ততই ফুসফুসের নানা রকম সংক্রমণ জনিত রোগ বাসা বাঁধছে। কেউ ভুগছেন হাঁপানিতে, কারও সিওপিডি, তো কারও ফুসফুসে নীরবে বাসা বাঁধছে মারণরোগ। এর থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্ক থাকতেই হবে। ফুসফুসের হাল কেমন, তা বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। আর দূষণের প্রকোপ সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলাও যাবে না। রাস্তায় বেরোলে যানবাহনের ধোঁয়া বা বাতাসে ভাসমান দূষিত কণা শ্বাসের সঙ্গে শরীরে ঢুকবেই। তাই ফুসফুসের অবস্থা কেমন, তা জানার জন্য কিছু পরীক্ষা করিয়ে রাখা খুব জরুরি।
শ্বাসকষ্ট না হলে বা সর্দি-কাশি না ভোগালে অনেকেই এই সব টেস্ট করতে চান না। কিন্তু প্রতিটি পরীক্ষাই শরীরের জন্য জরুরি। অনেক সময়েই ফুসফুসের কোনও সংক্রমণ বা টিউমার নীরবেই বাসা বাঁধে। তার উপসর্গ বোঝা যায় অনেক পরে। যেহেতু দূষণের সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বসবাস করতে হবে, তাই বিপদ এড়াতে পাঁচটি পরীক্ষা সকলেরই করানো জরুরি।
কী কী পরীক্ষা করাবেন?
স্পাইরোমেট্রি টেস্ট
কয়েক মিনিটের একটি পরীক্ষা। স্পাইরোমিটার নামক যন্ত্রের সাহায্যে পরীক্ষা করে দেখা হবে কত জোরে শ্বাস টানতে পারেন। এতে শ্বাসপ্রশ্বাসের হার পরিমাপ করা যাবে এবং হাঁপানি বা সিওপিডির ঝুঁকি আছে কি না বোঝা যাবে।
সিটি স্ক্যান বা সিটি অ্যাঞ্জিয়োগ্রাম
ফুসফুসের ভিতরের ত্রিমাত্রিক ছবি পাওয়া যায় সিটি স্ক্যানে। এই টেস্ট করলে বোঝা যায় ফুসফুসের ভিতরে টিউমার বা কোনও গ্রোথ হচ্ছে কি না। ফুসফুসের ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধে তা ক্যানসারের চেহারা নিচ্ছে কি না, তা-ও বোঝা যাবে এই পরীক্ষাটি করিয়ে নিলে।
লাং ভলিউম টেস্ট
ফুসফুসের ধারণক্ষমতা কতটা, তা এই পরীক্ষাটি করলে ধরা পড়ে। স্পাইরোমেট্রিতে যেমন শ্বাসপ্রশ্বাসের মাত্রা মাপা যায়, তেমনই এই পরীক্ষাটি করা হয় ফুসফুসের জোর কতটা তা বুঝতে। তা ছাড়া এই পরীক্ষায় অ্যালার্জি জনিত রোগ, সিওপিডি বা পালমোনারি ফাইব্রোসিসের মতো অসুখ ধরা পড়ে।
ব্রঙ্কোস্কোপি
ব্রঙ্কোস্কোপি হল এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রোগীর ফুসফুস এবং বায়ুপথ পরীক্ষা করা হয়। ব্রঙ্কোস্কোপি কেবল ফুসফুসের ক্যানসার নির্ণয়ে নয়, অন্যান্য রোগ শনাক্ত করতেও ব্যবহার করা হয়। যক্ষ্মা রোগ অনেক সময়েই থুথু পরীক্ষায় ধরা পড়ে না, সে ক্ষেত্রে ব্রঙ্কোস্কোপি কার্যকরী পদ্ধতি। যে সমস্ত রোগীর বুকের গহ্বরে তরল জমা হয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসে অসুবিধা হয়, সেই রোগীদের ক্ষেত্রে ব্রঙ্কোস্কোপির পাশাপাশি থোরাকোস্কোপি বা প্লুরোস্কোপি করে দেখা হয়। বুকে জমা তরলের বায়োপসি করেও দেখা হয়, ভয়ের কারণ আছে কি না।
পিইটি-সিটি স্ক্যান
ক্যানসার কোষের অনিয়মিত বিভাজন হচ্ছে কি না, তা ধরতে এই বিশেষ পরীক্ষাটি করা হয়। এটি সাধারণ সিটি স্ক্যানের চেয়ে আরও উন্নতমানের পরীক্ষা। ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ছে কি না, তা-ও বোঝা যায় এই পরীক্ষাটি করিয়ে নিলে।