হট ফ্ল্যাশে ভুগছেন টুইঙ্কল, কী এই সমস্যা? ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
হট ফ্ল্যাশের সমস্যায় ভুগছেন টুইঙ্কল খন্না। দিবারাত্র এই সমস্যা অতিষ্ঠ করে দিচ্ছে অক্ষয়-ঘরনিকে। নিজের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলে এই সমস্যার কথা লিখেছেন ৫১ বছরের অভিনেত্রী।
কেবল টুইঙ্কল নন, ওই বয়সের অনেক মহিলাই হট ফ্ল্যাশের সমস্যায় ভোগেন। মূলত রজোনিবৃত্তি পর্ব এগিয়ে এলে এই সমস্যা দেখা দেয়। টুইঙ্কল নিজে ওই পর্বের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আর এই সমস্যাই দেখা দিয়েছে তাঁর।
হট ফ্ল্যাশ কী?
ভারতীয় মেয়েদের ৪৫ থেকে ৫৫ বছরের মধ্যে সাধারণত রজোনিবৃত্তি ঘটে। অর্থাৎ মাসিক ঋতুচক্র শেষ হয়। ওই পর্বে গিয়ে শরীর ও মনে একাধিক বদল আসে। আর এই বদলের কারণ হল হরমোনের তারতম্য। মহিলাদের শরীরের দুই হরমোন ইস্ট্রোজেন ও প্রজোস্টেরন ঋতুচক্রের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। ডিম্বাণু তৈরি ও তার নির্গমনের প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে ইস্ট্রোজেন। ডিম্বাণু জরায়ুর যে অংশে গিয়ে জমা হবে সেই স্তর অর্থাৎ এন্ডোমেট্রিয়ামের ঘনত্বও নির্ভর করে ইস্ট্রোজেনের উপরে। ঋতুকালীন সময়ে শরীরে অন্যান্য হরমোনের ওঠানামা, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কাজও করে ওই হরমোন। আর প্রোজেস্টেরনের কাজ হল ডিম্বাণু নিষিক্ত না হলে এন্ডোমেট্রিয়াম স্তরটিকে খসিয়ে ঋতুস্রাব করানো। যখন রজোনিবৃত্তি পর্ব এগিয়ে আসবে, তখন ডিম্বাণু নির্গমনের প্রক্রিয়া বন্ধ হবে। সেই সময়ে ইস্ট্রোজেন ও প্রজোস্টেরন হরমোনের মাত্রাও কমবে, ফলে শরীরের অন্যান্য হরমোনের ওঠানামা নিয়ন্ত্রিত হবে না। সেই সঙ্গে তাপমাত্রারও হেরফের হবে। শরীর গরম হয়ে যাবে, নাক-কান-গলার কাছে ঘাম হতে থাকবে। মনে হবে, শরীরের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ হচ্ছে। একেই বলা হয় হট ফ্ল্যাশ।
চিকিৎসাবিজ্ঞানে হট ফ্ল্যাশকে বলা হয় ‘ভ্যাসোমোটর সিম্পটম’ (ভিএমএস)। ইস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমে যাওয়ায়, হৎস্পন্দনের হার আচমকা বেড়ে যায়, বুক ধড়ফড় করতে থাকে অনেকের। সেই সঙ্গেই দরদর করে ঘাম হয়। রাতে শুয়েও ঘাম হতে পারে। ঠান্ডা ঘরে বসেও গরম লাগার অনুভূতি হয়। হট ফ্ল্যাশের কারণে ঘুমের সমস্যাও দেখা দেয়।
রজোনিবৃত্তির সঙ্গে হট ফ্ল্যাশও স্বাভাবিক নিয়মেই আসে। কাজেই এই প্রক্রিয়াটিকে বন্ধ করা যায় না। তবে কষ্ট কমানো যায়। রজোনিবৃত্তি পর্বে খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রাখতে প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার যেমন দই, পনির, ছানা বেশি করে খেতে হবে। চা, কফি, অ্যালকোহল যাতে ক্যাফিনের মাত্রা বেশি, সেই সব খাবার খাওয়া চলবে না। ক্যাফিন শরীরের তাপমাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। তেলমশলা দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটবন্দি খাবার একেবারেই খাওয়া চলবে না।
হট ফ্ল্যাশের সমস্যা বেশি ভোগালে তার নিরাময়ে ‘হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি’ (এইচআরটি) করেন চিকিৎসকেরা। এ ক্ষেত্রে বাইরে থেকে কৃত্রিম ভাবে ইস্ট্রোজেন হরমোন ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়। এতে হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে রজোনিবৃত্তি পর্বের সমস্যাগুলিকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে এইচআরটি-র অনেক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। সকলের জন্য এই থেরাপি কার্যকরী না-ও হতে পারে।