লিভার ক্যানসার থেকে বাঁচাতে টিকা আসছে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বিশ্বে দশ লক্ষে হয়তো ২ থেকে ৩ জনের হয়। তরুণ বা তরুণীরাই এর শিকার। লিভারের রোগ কোনও দিন ছিল না বা হয়নি, এমন মানুষজনই আক্রান্ত হন বিরল ধরনের এই ক্যানসারে। এর নাম ‘ফাইব্রোলামেলার কার্সিনোমা’ (এফএলসি)। এমন ক্যানসার হলে বাঁচার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বললেই চলে। এর কোনও চিকিৎসাপদ্ধতি বা ওষুধ এত দিন ছিল না। এই প্রথম বার লিভারের এই ক্যানসারের আশঙ্কা কমাতে নতুন টিকা তৈরির দাবি করেছেন জন হপকিনস কিমেল ক্যানসার সেন্টারের গবেষকেরা। প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় টিকাটি সাফল্যের সঙ্গে উতরে গিয়েছে বলেও দাবি করা হয়েছে।
লিভার শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, কারণ সেটি বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। লিভারে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি শুরু হলে, তার প্রভাব গোটা শরীরেই পড়বে। বিপাকক্রিয়ার পদ্ধতিটাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তা ছাড়া পিত্তরসের ক্ষরণে ভারসাম্য থাকবে না। লিভার যেহেতু শরীর থেকে টক্সিন বা দূষিত পদার্থ বার করে দিতে বড় ভূমিকা নেয়, তাই সেখানে ক্যানসার হওয়া মানে শরীরে আরও বেশি মাত্রায় টক্সিন জমা হতে থাকবে। সংক্রমণ দ্রুত ছড়াতে থাকবে শরীরে।
সাধারণত দেখা যায়, লিভার ক্যানসারের একটা বড় কারণ ফ্যাটি লিভার, যাকে চিকিৎসাশাস্ত্রের পরিভাষায় ‘মেটাবলিক ডিসফাংশন অ্যাসোসিয়েটেড স্টিয়েটোহেপাটাইটিস’ (এমএএসএইচ) বলা হয়। ফ্যাটি লিভার ধীরে ধীরে লিভারে গভীর ক্ষত বা সিরোসিসের জন্ম দেয়। সে থেকেই ক্যানসার বাসা বাঁধতে পারে। কিন্তু ‘ফাইব্রোলামেলার কার্সিনোমা’-র ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই ক্যানসার তাদেরই হয়, যাদের লিভারের কোনও রোগ নেই। কী থেকে ক্যানসার কোষের বিভাজন শুরু হয় তা অজানা। গবেষকদের অনুমান, এর পিছনে জিনগত কারণও রয়েছে। বিশ্বে খুবই কম জনের এই রোগ হতে দেখা যায় এবং এই ক্যানসার একবার শরীরে বাসা বাঁধলে, বার বার ফিরে আসতে পারে।
লিভারের এই বিরল ক্যানসার থেকে বাঁচতে এমন টিকা তৈরি করা হয়েছে যা ক্যানসার কোষগুলিকে ধ্বংস করবে বলেই দাবি গবেষকদের। টিকাটির প্রাথমিক ট্রায়ালের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার মেডিসিন’ জার্নালে। সেখানে গবেষকেরা লিখেছেন, টিকাটি প্রয়োগ করা হচ্ছে ১২ বছর ও তার বেশি বয়সিদের উপরে। সাধারণত এমন লোকজনের উপরেই টিকাটির পরীক্ষা করা হয়েছে যাদের লিভারে অস্ত্রোপচার করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে ছোটদের ও বয়স্কদের উপরে প্রাথমিক ভাবে টিকাটির প্রয়োগ করে দেখা হচ্ছে। আগে ক্যানসার হয়েছিল বা কেমোথেরাপির মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন এমন লোকজনের উপরেও টিকাটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। যত জনকে টিকাটি দেওয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেকের শরীরেই ক্যানসারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে বলেই দাবি। এমনকি ছোটদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি কয়েক গুণ বেড়েছে বলেও দেখা গিয়েছে। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি যাঁদের থাকে, তাঁদের শরীরে কিছু বিশেষ প্রোটিন তৈরি হয়। এই টিকাটি সেই সব প্রোটিনকে নষ্ট করতে পারে। তবে পরীক্ষা প্রাথমিক ভাবে শুরু হয়েছে। ফলাফল দেখে আশাবাদী গবেষকেরা। তিন পর্যায়ের ট্রায়ালের পরেই টিকাটির কার্যকারিতা আরও ভাল ভাবে বোঝা যাবে বলেই জানিয়েছেন গবেষকেরা।