সাইলেন্ট ডিহাইড্রেশন নিয়ে সতর্ক করছেন চিকিৎসকেরা। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
তাপমাত্রার পারদ দিন-দিন ঊর্ধ্বগামী। তার মধ্যেই নিম্নচাপের বৃষ্টি ভোগাচ্ছে। কখনও ভ্যাপসা গরম, আবার কখনও টানা বৃষ্টি। আপেক্ষিক আর্দ্রতাও বদলে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। আবহাওয়ার এমন ভোলবদলে নানা অসুখবিসুখ বাড়ছে যার মধ্যে ‘সাইলেন্ট ডিহাইড্রেশন’ নিয়ে চিন্তায় চিকিৎসকেরা। দিল্লির এমসের চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, গরমের সময়েই যে ডিহাইড্রেশন বা শরীরে জলশূন্যতার সমস্যা দেখা দেবে, তা নয়। পরিবর্তিত আবহাওয়াও এর কারণ হতে পারে। জল ও খনিজ লবণের ঘাটতি এমন ভাবে হচ্ছে যে, বাইরে থেকে বোঝার উপায় থাকছে না বেশির ভাগ সময়েই। ফলে হঠাৎ করেই দুর্বলতা, পেশিতে টান ধরা, খিঁচুনি বা মূত্রনালির সংক্রমণ দেখা দিচ্ছে।
সাইলেন্ট ডিহাইড্রেশন কী?
শরীরে জলের ঘাটতি হতে থাকে এবং বাইরে থেকে তার কোনও লক্ষণ তেমন ভাবে প্রকাশ পায় না। রোগ ধরা পড়ে আচমকাই। আবহাওয়ার ঘন ঘন পরিবর্তন ঘটলে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেড়ে যায়, সেই সময়ে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে যায়। বৃষ্টির দিনে গরম কম লাগে বলে বোঝা যায় না যে, ঘাম হচ্ছে। কিন্তু এই সময়েই শরীর থেকে জল ও গ্লুকোজ় বেশি পরিমাণে বেরিয়ে যায়। ঘাটতি হতে থাকে সোডিয়াম ও পটাশিয়ামেরও। ফলে তলে তলে জলশূন্যতা তৈরি হয়।
‘পাবমেড’-এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, সাইলেন্ট ডিহাইড্রেশন খুবই মারাত্মক। যেহেতু এর উপসর্গ আগে থেকে বোঝা যায় না, তাই সতর্ক হওয়ার সময়টুকুও পাওয়া যায় না। শরীরে জল, গ্লুকোজ় ও খনিজ লবণের ঘাটতি বাড়লে তার থেকে ‘ব্রেন ফগ’, কিডনি স্টোন, খিঁচুনি হতে পারে। এমনকি হৃৎস্পন্দনের হার হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে, কমে যেতে পারে রক্তচাপ। কিছু ক্ষেত্রে স্মৃতিনাশ হওয়ার ঝুঁকিও থাকে।
সাধারণ লক্ষণ, যা এড়িয়ে চলেন অনেকে
গরমের পরেই বৃষ্টিতে তাপমাত্রা অনেকটা নেমে যায়। তাই ওই সময়ে জল কম খাওয়াই হয়। চা বা কফি খাওয়ার মাত্রা বাড়ে। বাড়ে মদ্যপানও। এর থেকেই শরীরে ক্যাফিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই সময়ে ভাজাভুজি, বাইরের খাবার বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে, যা শরীরে জলের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। তা ছাড়া বর্ষার সময়ে পেটের রোগ বেশি হলেও শরীর থেকে অনেকটা জল বেরিয়ে যায়। জলশূন্যতা তৈরি হলে সবচেয়ে আগে মুখের ভিতর শুকিয়ে যেতে থাকবে। ক্লান্তি অস্বাভাবিক বেড়ে যাবে। পেশিতে টান ধরবে যখন তখন, দুর্বলতা বাড়বে। মাথা যন্ত্রণা ভোগাবে, কিছু ক্ষেত্রে রক্তচাপও কমে যেতে পারে। ঘন ঘন মূত্রনালিতে সংক্রমণ হবে, কিডনিতে পাথর জমতে পারে। সেই সঙ্গেই বিভ্রান্তি, ভুলে যাওয়ার সমস্যা, সামান্য কারণেই বিরক্ত হওয়ার মতো লক্ষণও দেখা দেবে।
রেহাইয়ের উপায়
শরীরে যাতে জলের জোগান না কমে, সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার। তাই জল খাওয়ার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
ডিহাইড্রেশনের ফলে শুধু জল নয়, শরীরে খনিজ পদার্থেরও অভাব তৈরি হয়। তাই ঘোল বা লস্যি এবং ডাবের জলের মতো পানীয় এই সময়ে উপযুক্ত। এ ছাড়া ইলেক্ট্রোলাইট রয়েছে, এমন স্পোর্টস ড্রিঙ্কেও ভাল কাজ হয়। ডিহাইড্রেশনে পটাশিয়ামের অভাব ঘটলে কলা তা খানিকটা পূরণ করতে পারে।
অতিরিক্ত কফি পান শরীরে জলের অভাব তৈরি করে। ভাজাভুজি বেশি খেলেও ডিহাইড্রেশন হয়। এগুলি তাই এড়িয়ে চলাই বাঞ্ছনীয়।