Diabetes Medicine

শর্করা বশে রয়েছে দেখে ডায়াবিটিসের ওষুধ বন্ধ করে দিলেন, এমন প্রবণতা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে?

ওষুধ আর নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে রক্তে শর্করা বশে থাকে। তা বলে আচমকা ওষুধ ছেড়ে দেওয়া যায় কি? ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দেখে ওষুধ বন্ধ করার ফল সম্পর্কে কী জানেন?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৫ ১৫:১২
Share:

ডায়াবিটিসের ওষুধ আচমকা বন্ধ করলে কী কী ঘটতে পারে? ছবি: সংগৃহীত।

সাম্প্রতিক বিশ্বে যে সমস্ত অসুখের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে চিকিৎসকেরা চিন্তিত, তার মধ্যে ডায়াবিটিস অন্যতম। শিশু থেকে বয়স্ক— ডায়াবিটিসে কোনও বয়সের সীমা থাকছে না। চিকিৎসকেরা বলছেন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, মানসিক চাপ, শরীরচর্চা না করার প্রবণতা— অনেক ক্ষেত্রেই এমন অসুখের পরিধি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Advertisement

ডায়াবিটিস হলে ওষুধ খাওয়া, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন কাম্য। চিকিৎসকেরা বলেছন সাম্প্রতিক কালে এত ভাল ওষুধ বেরিয়ে গিয়েছে, একটু সচেতন হলেই এই অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। ওষুধ খেয়ে শর্করা বশে আসতেই, তাই হঠাৎ করে ওষুধ বাদ দেওয়া বা বন্ধ করে দেওয়ার কথা ভেবেছেন না কি? তা হলে তার ফল কিন্তু মারাত্মক হতে পারে।

ডায়াবিটিসের চিকিৎসক অভিজ্ঞান মাঝি জানাচ্ছেন, ‘‘বর্তমান যুগে চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে যথেষ্ট। আগে বলা হত, ডায়াবিটিস সারে না। তবে এখন বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে টাইপ ২ ডায়াবিটিস সেরে উঠছে, যদিও সেই সংখ্যা খুবই কম। কোনও ক্ষেত্রে ওষুধ বন্ধ করা যায় ঠিকই, তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শে, নিজে থেকে কখনওই নয়।’’

Advertisement

ডায়াবিটিস এমন এক অসুখ, যেখানে ইনসুলিন নামক হরমোনটি যা রক্তে শর্করাকে কাজে লাগাতে বা শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক, সেটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। আবার কারও কারও শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন হলেও, সেটি সঠিক ভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে। ধরন অনুযায়ী ডায়াবিটিস দুই ভাগে বিভক্ত। টাইপ ১ ডায়াবিটিস এবং টাইপ ২ ডায়াবিটিস।

সঠিক ডায়েট, শরীরচর্চা, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের দ্বারা রক্তে শর্করা বশে থাকে। তবে এক বার ডায়াবিটিস ধরা পড়লে সাধারণত আজীবন ওষুধের দরকার হয়। অভিজ্ঞান জানাচ্ছেন, আচমকা যদি নিজের মতো করে ওষুধ বন্ধ করে দেন, ভবিষ্যতে তার খেসারত দিতে হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, আগের মাত্রার ওষুধ পরে আর কাজ করছে না। কোনও ওষুধ হয়তো কাজ করাই বন্ধ করে দিল। কখনও আবার ইনসুলিনেরও প্রয়োজন পড়ছে, দেখা যায়।

বিপদ হতে পারে আরও। রক্তে শর্করা বশে রয়েছে মনে করে রক্ত পরীক্ষা বন্ধ করে দিলে ভিতরে ভিতরে শর্করা বেড়ে গিয়ে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। মধুমেহ হলে ধীরে ধীরে তার প্রভাবে, হার্ট, কিডনি, লিভার, চোখ — সমস্ত অঙ্গপ্রত্যঙ্গেরই ক্ষতির আশঙ্কা থাকে। ওষুধ বন্ধ করলে, সেই ক্ষতির সম্ভাবনা বেড়ে যাবে কয়েক গুণ।

তবে চিকিৎসক মনে করলে অবশ্য ওষুধ বন্ধ করতে পারেন। অভিজ্ঞান জানাচ্ছেন, ডায়াবিটিস যদি একেবারে শুরুতেই ধরা পড়ে আর কেউ যদি এই ব্যাপারে কড়া ভাবে নিয়ম মানেন, রোগীর বয়স যদি কম হয়, শরীরে যদি বিটা সেল ভাল থাকে (যেখান থেকে ইনসুলিন হরমোন নিঃসৃত হয়), ওজন বশে থাকে, নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে পারেন, তিনি যদি নিয়ম মেনে ওষুধ খান— তা হলে কোনও কোনও ক্ষেত্রে ডায়াবিটিসের মতো অসুখও সেরে যেতে পারে। তবে সেই সংখ্যা হাতেগোনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় টাইপ ২ ডায়াবিটিস রোগীদেরও বিটা সেল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে অসুখ সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তবে আধুনিক ওষুধের দৌলতে শর্করা বশে রাখা যায়।

টাইপ ১ ডায়াবিটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন হরমোনটি তৈরি হয় না। এই ধরনের রোগীদের আচমকা ওষুধ বন্ধ করা আরও বেশি বিপজ্জনক, জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। মুম্বইয়ের মেডিসিনের চিকিৎসক অনিকেত মুলে জানাচ্ছেন, টাইপ ১ ডায়াবেটিকদের ইনসুলিন থেরাপির প্রয়োজন হয়। হঠাৎ করে রোগীর ওষুধ বন্ধ হয়ে গেলে ‘ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস’-এর সম্ভবনা বেড়ে যায়। ইনসুলিন কাজ না করলে শর্করাকে কাজে লাগিয়ে শরীর শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। শক্তির জন্য শরীর তখন নিজস্ব ফ্যাট ভাঙতে থাকে। এর ফলে কিটোন তৈরি হয়, যা রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।

অভিজ্ঞান জানাচ্ছেন, ডায়াবিটিস অনিয়ন্ত্রিত হয়ে গেলে এক ধরনের জটিলতা দেখা দিতে পারে। হাইপার অসমোলার, ননকিটো ডায়াবেটিক কোমার ঝুঁকি তৈরি হয়। হাইপার অসমোলারের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা অত্যন্ত বেড়ে যায়, ঘন ঘন তেষ্টা পায়। শরীরের জলের অভাব হতে পারে। ননকিটো ডায়াবেটিক কোমায় সংক্রমণের সম্ভবনা বেড়ে যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement