‘ভয়াবহ’ অভিজ্ঞতার পরে মস্তিষ্কের কী হয়? ছবি : সংগৃহীত।
দুর্গাপুর থেকে শুরু করে কামদুনি কিংবা দিল্লি, হাথরস বা কাঠুয়া— যৌন অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন মহিলারা। কিছু ঘটনা প্রকাশ্যে আসছে কিছু ঘটনা ঘটে যাচ্ছে সবার অলক্ষে। আর সেই সব অত্যাচারের শিকার হওয়ার পরে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে চেয়েও ফিরতে পারছেন না নির্যাতিতারা। কারণ তাঁদের মস্তিষ্কই বেঁচে থাকার পরিস্থিতি কঠিন করে তুলছে, বলছে এক গবেষণা।
ওই গবেষণা জানাচ্ছে, গোটা দুনিয়ায় ১৭-২৫ শতাংশ মহিলা নানা ধরনের যৌন হেনস্থার শিকার। আর সেই অভিজ্ঞতা তাঁদের মস্তিষ্কে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। যা স্বাভাবিক জীবনের ছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে দেয় না। যা তাঁদের ক্ষেত্রবিশেষে আত্মহত্যার দিকেও ঠেলে দিতে পারে।
রোগের নাম পিটিএসডি বা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডার। তবে ট্রমা বা আতঙ্কের অভিজ্ঞতা যদি যৌন হেনস্থার মতো কোনও ঘটনা হয়, তবে রোগে কিছু বাড়তি উপসর্গও দেখা দেয়। এক, মস্তিষ্কের আবেগ নিয়ন্ত্রণকারী দু’টি গুরুত্বপূর্ণ অংশ প্রি ফ্রন্টাল কর্টেক্স এবং অ্যামিগডালার মধ্যে যোগাযোগর সুতো ছিঁড়ে যায়। দুই, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় কাজের মধ্যে পারম্পর্য নষ্ট হয়ে যায়। তাঁরা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারেন না। কোনও কোনও মহিলার ক্ষেত্রে এই পারম্পর্য রক্ষা করে চলার স্বাভাবিক বিষয়টি সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। তাঁদের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক জীবন যাপন করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
গবেষণাটি করেছে স্পেনের হসপিটাল ক্লিনিক অফ বার্সালোনা। ওই গবেষণার কথা আলোচিত হয়েছে অ্যামস্টারডামে আয়োজিত ইউরোপিয়ান কলেজ অফ নিউরোসাইকোফার্মাকোলজির কংগ্রেসে। গবেষক দলের প্রধান লিডিয়া ফর্টি জানিয়েছেন, তিনি ওই ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার হওয়া মহিলাদের পরীক্ষা করে দেখেছেন, ৭০ শতাংশ মহিলাই হেনস্থার পরে ওই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
গবেষণা চলাকালীন ওই মহিলাদের আচার-আচরণ পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি তাঁদের ব্রেন স্ক্যান এবং এমআরআই করা হয়েছে। লিডিয়া বলছেন, ‘‘যাঁদের যৌন হেনস্থার ঘটনার পরে পিটিএসডি হয়েছে, দেখা গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে হতাশা, উদ্বেগ, আত্মঘাতী হওয়ার চিন্তাও এসেছে বেশি।’’
স্পেনের গবেষকেরা জানাচ্ছেন, একটা বিষয় স্পষ্ট। যৌন হেনস্থার পরে যে মহিলারা পিটিএসডি-র শিকার হয়েছেন, তাঁদের মস্তিষ্কের আবেগ এবং ভয় নিয়ন্ত্রণের অংশের যে ব্রেন সার্কিট, তাতে সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই গবেষণা যৌন হেনস্থার শিকার হওয়া মহিলাদের মানসিক এবং শারীরিক চিকিৎসায় ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।