Dry Fasting Trend

‘ইন্টারমিটেন্ট’ অতীত, নতুন ধারা ‘ড্রাই ফাস্টিং’, কী এই ডায়েট? আদৌ কি তা স্বাস্থ্যকর?

তারকা থেকে সাধারণ মানুষ— ড্রাই ফাস্টিংয়ের জনপ্রিয়তায় মজেছেন অনেকেই। কিন্তু এই ডায়েট কি আদৌ স্বাস্থ্যকর?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০২৫ ০৯:০২
Share:

ড্রাই ফাস্টিং নিয়ে মাতামাতি চলছে, রোগা হওয়া কি যায়? ছবি: ফ্রিপিক।

‘ফাস্টিং’ বা উপোস করে ওজন কমানোর নতুন ধারা চলছে এখন। সাম্প্রতিক প্রজন্মই এতে মেতেছে বেশি। ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং নিয়ে দীর্ঘ কাল ধরেই চর্চা চলছে। খুব তাড়াতাড়ি শরীরের মেদ ঝরিয়ে তারকাদের মতো ‘টোনড’ শরীর পাওয়ার লোভে কেউ ৮ ঘণ্টা না খেয়ে আবার কেউ ১৬ ঘণ্টা উপোস করে ওজন কমানোর চেষ্টা করেছেন। তাতে সুফলও যেমন হয়েছে, আবার শরীরে খারাপ প্রভাবও পড়েছে। এর মধ্যেই আরও এক রকম ডায়েট নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়েছে, তা হল ‘ড্রাই ফাস্টিং’। তারকা থেকে সাধারণ মানুষ— ড্রাই ফাস্টিংয়ের জনপ্রিয়তায় মজেছেন অনেকেই। কিন্তু এই ডায়েট কি আদৌ স্বাস্থ্যকর?

Advertisement

‘ড্রাই ফাস্টিং’-এ নতুনত্ব কী?

এটি ইন্টারমিটেন্টের মতোই উপোস করে রোগা হওয়ার চেষ্টা। তবে এখানে উপোসের সময়টা আরও লম্বা। ইন্টারমিটেন্টে যেমন ৮ ঘণ্টা, ১৪ ঘণ্টা বা ১৬ ঘণ্টা উপোস করতে হয়, ড্রাই ফাস্টিংয়ে সেই সময়টা টানা ৩৬ ঘণ্টা। অর্থাৎ এক দিনেরও বেশি। এখানেই শেষ নয়। ড্রাই ফাস্টিংয়ের ওই ৩৬ ঘণ্টা খাবার তো খাওয়া যাবেই না, জল বা তরল জাতীয় কোনও কিছুও খাওয়া যাবে না। একেবারে নির্জলা উপোস করে থাকতে হবে।

Advertisement

কী ভাবে করে ড্রাই ফাস্টিং? ছবি: ফ্রিপিক।

ওজন কি আদৌ কমে?

নির্জলা উপোস করে থাকলে শরীরে ফোলা ভাব কম দেখাবে। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, জল বা খাবার কোনওটিই না খেলে, শরীরে নানা বদল আসতে থাকে। সপ্তাহে যদি দুই থেকে তিন দিনও কেউ এমন ভাবে থাকেন, তা হলে এক ধাক্কায় ওজন কিছুটা কমবে। তবে এই পদ্ধতিতে রোগা হওয়া একেবারেই স্বাস্থ্যকর নয়।

কী কী বদল ঘটবে?

প্রথম ৪ ঘণ্টাখাবার বা জল কোনওটিই না খেলে শরীর ‘ক্যাটাবলিক’ পর্যায়ে চলে যাবে। অর্থাৎ পাচনক্রিয়া ব্যাহত হবে। তখন জমা মেদ গলিয়েই পুষ্টি আহরণের চেষ্টা করবে শরীর।

৮ ঘণ্টা পরে

রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে থাকবে। শরীরের জমা গ্লাইকোজ়েন ভেঙে শক্তি তৈরি হবে। এতে রক্তে শর্করার মাত্রাও কমবে, আবার অতিরিক্ত ক্যালোরিও পুড়বে।

১২ ঘণ্টা পরে

শরীরে যতটুকু গ্লুকোজ় আছে যা ফুরিয়ে গেলে লিভার তখন সঞ্চিত ফ্যাট ভেঙে ফ্যাটি অ্যাসিড তৈরি করবে, যার নাম কিটোন। এই প্রক্রিয়াকে বলে ‘মেটাবলিক সুইচিং’। শরীর এই সময়ে ‘কিটোসিস’ পর্যায়ে চলে যাবে এবং প্রচুর ফ্যাট বার্ন করতে থাকবে। ফলে ওজন এক ধাক্কায় অনেকটা কমে যাবে।

১৬ ঘণ্টা পরে

এই পর্বে গিয়ে ‘অটোফ্যাগি’ শুরু হবে। অর্থাৎ কোষের পুনর্গঠন হতে থাকবে। কোষে জমা উপাদান ভাঙতে থাকবে, নতুন কোষ তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হবে।

ড্রাই ফাস্টিং করলে শরীরে কী কী প্রভাব পড়বে? ছবি: ফ্রিপিক।

২৪ ঘণ্টা পরে

শরীরে প্রদাহ কমতে থাকবে। যেটুকু ক্যালোরি জমা আছে শরীরে, তার সবটাই পুড়িয়ে শক্তি তৈরি হতে থাকবে। যেহেতু খাবার বা জল কোনওটিই নেই, তাই ক্যালোরি পুড়িয়েই এনার্জি তৈরি হবে।

৩০ ঘণ্টা পরে

হরমোনের ওঠাপড়া শুরু হবে। পেশিতে জমা মেদ বার্ন হতে থাকবে।

৩৬ ঘণ্টা পরে

আরও এক বার ‘অটোফ্যাগি’ পর্ব শুরু হবে। কোষের পুনর্গঠন হতে থাকবে। বিপাকক্রিয়ার হার বাড়বে।

কী প্রভাব পড়বে শরীরে?

ড্রাই ফাস্টিং সপ্তাহে এক দিন বা দু’দিন করলে ওজন তাড়াতাড়ি কমবে। তবে সকলের জন্য এই ডায়েট নয়। ডায়াবিটিস, হার্টের রোগ, লিভারের অসুখ, ক্রনিক কিডনির রোগ থাকলে ড্রাই ফাস্টিং বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।

নির্জলা উপোস করে ওজন কমানোর পক্ষপাতী নন চিকিৎসকেরা। আইসিএমআরের বিজ্ঞানী দীপিকা সুর জানালেন, টানা ৩৬ ঘণ্টা জল বা খাবার না খেলে শরীরে মারাত্মক প্রভাব পড়বে। এই ধরনের ডায়েট যদি প্রতি সপ্তাহে করতে থাকেন কেউ, তা হলে হার্টের রোগ দেখা দেবে অচিরেই। ডিহাইড্রেশন বা জলশূন্যতার কারণে কিডনির রোগ হবে, হরমোনের ভারসাম্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।

মহিলাদের ক্ষেত্রে এই ডায়েট করলে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে। ‘হরমোনাল ডিজব্যালান্স ’ তৈরি হবে শরীরে।

দীর্ঘ মেয়াদে এই ডায়েট করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ বেরোনো, পেশিতে টান, পেটের সমস্যা, আলসার, কিডনিতে স্টোন, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো রোগ হবে।

কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন বা ফ্যাট কোনওটিই শরীরে না যাওয়ায়, শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হবে। একটা সময়ে গিয়ে শরীরে এনার্জি লেভেল শূন্যে পৌঁছবে। রক্তে শর্করার মাত্রা অনেকটা কমে যাবে। ফলে আচমকা রক্তচাপ কমে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।

ড্রাই ফাস্টিংয়ের পরেই যদি কেউ ভারী খাবার খেয়ে নেন, তা হলে হজমের সমস্যা শুরু হবে। অ্যাসিড রিফ্লাক্স থাকলে এই ডায়েট একেবারেই করা ঠিক হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement