মুখের ভিতর শুকিয়ে যাচ্ছে কেন? কারণটা কী? ফাইল চিত্র।
মুখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা অনেকেরই আছে। বারে বারেই জিভ শুকিয়ে যায়। যত বারই জল পান করুন না কেন, তাতে সমস্যার সমাধান হয় না। জল বা তরল খাবার খাওয়ারর পরেও যে কে সেই, জিভ শুকিয়ে যেতে থাকে। সেই সঙ্গে গলাও শুকিয়ে যায় অনেকের। স্বরে বদলও আসতে পারে। আবার মুখের ভিতর দুর্গন্ধও হয়।
জিভ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা খুব মারাত্মক নয়। যদিও বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে তা জটিল রোগের পূর্বলক্ষণ হতে পারে। এই সমস্যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘ড্রাই মাউথ’ বা ‘জ়েরোস্টোমিয়া’। মুখের ভিতরে যে লালাগ্রন্থি থাকে, তা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে লালারস তৈরি করতে না পারে, তখন জ়েরোস্টোমিয়া হয়। লালাগ্রন্থি কেন লালারস তৈরি করতে পারছে না, তার কিছু কারণ আছে। কী কী সেই কারণ?
শরীরে যদি জলের ঘাটতি হয়, অর্থাৎ, জলশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হলে জ়েরোস্টোমিয়া হতে পারে। ভাইরাল জ্বর, ডায়েরিয়ার সমস্যাতেও শরীরে জলের ঘাটতি হয়। তখন মুখের ভিতরে ফুস্কুড়ি, জিভ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা বেশি হয়।
বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জ়েরোস্টোমিয়া হতে পারে। অ্যালার্জির জন্য যে সব অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ আছে সেগুলি যদি বেশি খান, অথবা সর্দি-কাশির ওষুধ, অবসাদ কমানোর অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট জাতীয় ওষুধ অথবা রক্তচাপ কমানোর ডাইইউরেটিকস জাতীয় ওষুধ বেশি খেলে এই সমস্যা হতে পারে।
ডায়াবিটিস থাকলে ড্রাই মাউথের সমস্যা বেশি হয়। রক্তে শর্করা বাড়তে শুরু করলে লালাগ্রন্থি থেকে লালারসের ক্ষরণ কমতে থাকে। বারে বারে মুখ শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা হলে, এক বার সুগার টেস্ট করিয়ে নেওয়া ভাল।
আরও কিছু রোগ, যেমন এডস, পার্কিনসন্স ডিজ়িজ়, অ্যালঝাইমার্সেও ড্রাই মাউথের সমস্যা হয়। চিকিৎসকেরা বলেন, ব্রেন স্ট্রোক হওয়ার আগে মুখ-জিভ শুকিয়ে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেয় অনেকের।
স্লিপ অ্যাপনিয়া থাকলে ঘুমের মধ্যে নাক বন্ধ হয়ে যায়, তখন মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হয়। সে ক্ষেত্রেও জিভ শুকিয়ে যায়। আবার অতিরিক্ত ধূমপান বা তামাকের ব্যবহার করলে, তার থেকেও জ়েরোস্টোমিয়া হতে পারে।
কখন যাবেন চিকিৎসকের কাছে?
সারা ক্ষণই যদি মুখের ভিতর শুকিয়ে যেতে থাকে, সেই সঙ্গে ঠোঁটের কোনায় ক্ষত, ঠোঁট ফেটে যাওয়া, জিভে র্যাশ হওয়ার মতো লক্ষণ দেখা দেয়, তা হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়। খাওয়ার ওষুধ দিয়ে এই রোগ সারানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। এতেও সমস্যা না কমলে, তখন কৃত্রিম লালার ব্যবহার করা হয়। লালাগ্রন্থি প্রতিস্থাপনের চিকিৎসাও হয়। আবার বিভিন্ন রকম স্প্রে, জেল দিয়ে লালার ক্ষরণ বাড়ানোর চেষ্টাও হয়। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া বা মাউথ স্প্রে ব্যবহার করা ঠিক হবে না।