ভুঁড়ি শুধু চর্বচোষ্য খেয়েই হয় না, আসল কারণ কী? ছবি: এআই।
বাঙালির নোয়াপাতি ভুঁড়ির মতো নয়। মেদ জমা মোটাসোটা চেহারাও নয়। পেটের চর্বি যদি চিন্তার কারণ হয়, তা হলে সে মেদ এল কোথা থেকে, তা জানা খুবই জরুরি। শুধু চর্বচোষ্য খেয়েই যে এমন ভুঁড়ি হবে, তা নয়। এর কারণ অন্যও হতে পারে। আপনার পেটের মেদ যদি বাড়তে থাকে, এবং নানা রকম ডায়েট ও শরীরচর্চার পরেও না কমে, তা হলে তার কারণ যে শুধু খাওয়াদাওয়ায় অনিয়ম, তা না-ও হতে পারে। আসল কারণ হয়তো ‘হরমোন বেলি’। কী এই সমস্যা?
পেটের মেদ নিয়ে চিন্তা বেশি কমবয়সিদেরই। আবার, বয়স চল্লিশ বা পঞ্চাশ পেরিয়ে গিয়েও ওই পেটের চর্বি নিয়েই হিমশিম খাচ্ছেন অনেকে। চর্বির পরত যেন ঠিক পেটের মধ্যিখানে গিয়েই জমা হচ্ছে। সারা শরীরে তেমন মেদ না থাকলেও, ফুলে উঠছে পেট। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, এটিই হল ‘হরমোন বেলি’। অনেকে আবার বলেন ‘কর্টিসল বেলি’। এই বিষয়টিই এখন চর্চায়। বিশ্ব জুড়ে ‘হরমোন বেলি’ নিয়ে গবেষণাও চলছে। এ দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ থেকে প্রকাশিত একাধিক গবেষণাপত্র রয়েছে কর্টিসল বা হরমোন বেলি নিয়ে। ব্যায়াম করেও এই সমস্যার চট করে সমাধান হয় না।
কী এই ‘হরমোন বেলি’?
হরমোনের গোলমালে মেদ জমে পেটে। মহিলারাই বেশি ভোগেন এতে। এর অন্যতম বড় কারণ হল, ইস্ট্রোজেন হরমোনের গন্ডগোল। মেয়েদের এই হরমোনটিই শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজকর্ম সামলায়। ঋতুচক্র থেকে শুরু করে শরীরের গড়ন, সন্তানধারণ, বিপাকক্রিয়া— সবেতেই এর ভূমিকা রয়েছে। হরমোনটির মাত্রা যদি কমে যায়, তখনই বিপাকে গোলমাল হয়। চর্বি জমতে শুরু করে পেট, নিতম্ব ও ঊরুতে। বিশেষ করে পেটে মেদ বেশি জমে। আবার রজোনিবৃত্তি পর্ব চলার সময়ে ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ অনেক কমে যায়। তখনও মেদবৃদ্ধির সমস্যা বাড়ে। পঞ্চাশোর্ধ্ব অনেক মহিলাই পেটের চর্বি নিয়ে চিন্তিত। এটি শুধু খাওয়াদাওয়ার জন্য হয় না, কারণটি ইস্ট্রোজেন হরমোনের তারতম্য। একে বলে ‘মেনোপজ় বেলি ফ্যাট’। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পিসিওএস) থাকলেও এই সমস্যা হতে পারে।
পেটের ফোলাফাঁপা ভুঁড়ির জন্য শুধু ইস্ট্রোজেন হরমোনকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। অনেক সময়ে এর কারণ হয়ে ওঠে কর্টিসল হরমোনও। কর্টিসল কেবল স্ট্রেস হরমোন নয়, একে কিন্তু জীবনদায়ী হরমোনও বলা হয়। এর একটা কাজ হল শরীরে প্রদাহ নাশ করা। বাইরে থেকে কোনও আঘাত, প্রদাহ হলে সেটার প্রতিক্রিয়া হিসেবে কিডনির উপরে থাকা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে কর্টিসল হরমোন বেরোয়। এই হরমোন কতটা বেরোবে, সেই মাত্রা আবার নিয়ন্ত্রণ করে পিটুইটারি গ্রন্থি। মানুষের শরীরের রক্তচাপ, বিপাকহার, ফ্যাট বা শর্করার মাত্রা ঠিকঠাক রয়েছে কি না, তা স্থির করে দেয় কর্টিসলের ক্ষরণ। যদি এর ক্ষরণ বেড়ে যায়, তখন মানসিক চাপ বাড়ে, হজমের গোলমাল দেখা দেয়। কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়তে থাকে। সে সময়ে যে শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়, তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলে ‘কুশিং’স সিনড্রোম’। এই রোগ হলে তখন ধীরে ধীরে শরীরের ওজন বাড়তে থাকে। পেটের অংশ স্ফীত হতে থাকে, হাত-পা সরু হয়ে যায়। পেটে লালচে, চওড়া স্ট্রেচ মার্ক দেখা দিতে পারে। রক্তচাপও বেড়ে যায়।
দুই হরমোনকে কব্জা করবেন কী ভাবে?
বাহ্যিক ভাবে হরমোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আগে পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে ‘হরমোন বেলি’ হচ্ছে কি না। শুধু ব্যায়াম বা ডায়েট করে হরমোনদের নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। সেই সঙ্গে মানসিক চাপ কমাতে হবে। অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা হরমোনের ক্ষরণে গোলমাল ঘটায়। তার জন্য নিয়মিত মেডিটেশন বা ধ্যান করা জরুরি। পাশাপাশি রোজের পাতে প্রোটিন যেমন মাছ, মাংস, ডিম বা নিরামিষের মধ্যে নানা ধরনের ডাল, সয়াবিন, ছানা বা পনির রাখতে হবে। ফাইবার আছে এমন ফল ও সব্জি খাওয়া জরুরি। রোজ অন্তত ৩০ মিনিট করে শরীরচর্চা করতে পারলে ভাল হয়। অন্য কোনও ব্যায়াম যদি না করতে পারেন, তা হলে হাঁটাহাঁটি করা ভাল বিকল্প হতে পারে। প্রতি দিন অন্তত ২০ মিনিট করে হাঁটলেও উপকার হবে।