খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করে হরমোনের রোগ সারানো সম্ভব, মানতে হবে সঠি ডায়েট। ছবি: এআই।
ঋতুস্রাবের সময়ে তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা, অতিরিক্ত রক্তপাত হলে আতঙ্কে ভোগেন অনেকেই। ভাবেন, বড় কোনও রোগ হল বুঝি। আবার সন্তানধারণের সময়েও সমস্যা তৈরি করতে পারে একটিই রোগ, তা হল ফাইব্রয়েড। এই নামটি এখন বেশ পরিচিতই। ফাইব্রয়েড মানেই আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। হরমোনের গোলমালের কারণে এই রোগটির তীব্রতা বাড়ে অনেকের। ফাইব্রয়েড হল জরায়ুর প্রাচীরে গজিয়ে ওঠা টিউমার যা ক্যানসার সৃষ্টিকারী নয়। তবে এই টিউমার যদি সংখ্যায় ও আয়তনে বাড়তে থাকে, তা হলে কিন্তু মুশকিল। সন্তানধারণে যেমন সমস্যা হবে, তেমনই ঋতুচক্রও এলোমেলো হয়ে যাবে। ফাইব্রয়েড সারাতে গেলে ওষুধ যেমন জরুরি, তেমনই নজর দিতে হবে ডায়েটেও। খাওয়াদাওয়া নিয়ন্ত্রণ করেও এই অসুখ সারানো সম্ভব।
হরমোনের গন্ডগোল একদিনে হয় না। স্ত্রীরোগ চিকিৎসক মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়ের মতে, মহিলাদের ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের ভারসাম্য যদি ঘেঁটে যায়, তা হলেই নানা অসুখ মাথাচাড়া দিতে থাকবে। ফাইব্রয়েডও তেমনই। সাধারণত ২১ থেকে ৫০ বছর বয়সিদেরই বেশি হয়। জরায়ুর মায়োমেট্রিয়াম পেশি থেকে টিউমারের বৃদ্ধি হতে থাকে। ওই পেশির কোষগুলি অনিয়মিত ভাবে বাড়তে থাকে ও ছোট ছোট টিউমার তৈরি করে। এর আবার নানা ধরন আছে। জরায়ুর পেশির প্রাচীরে যদি টিউমার হয়, তা হলে সেটি ‘ইন্ট্রামুরাল ফাইব্রয়েড’। আবার যজি জরায়ুর বাইরের দিকে টিউমার গজিয়ে ওঠে, তা হলে সেটি সাবসেরোসাল ফাইব্রয়েড। আর জরায়ুর ভিতরের আস্তরণ বা এন্ডোমেট্রিয়ামের ঠিক নীচে যদি টিউমার হয়, সেটি সাবমিউকোজ়াল। এই টিউমার ফেটে গিয়ে জরায়ুর ভিতরে রক্তপাত হতে পারে।
ফাইব্রয়েড যেমনই হোক না কেন, যদি ধরা পড়ে, তা হলে সবচেয়ে আগে খাওয়াদাওয়া ঠিকমতো করা জরুরি। কী কী খেতে হবে আর কী নয়, তা জেনে রাখা ভাল।
ফাইব্রয়েড সারাতে কী কী খাবেন?
ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার
ফাইবার শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রাখতে সাহায্য করে। ফাইবারের জন্য দানাশস্য যেমন ব্রাউন রাইস, ওট্স, কিনোয়া খেতে পারেন। সব্জির মধ্যে ব্রোকলি, পালং শাক, বাঁধাকপি খাওয়া ভাল। মুসুর ডালেও ফাইবার আছে। ছোলা খেতে পারেন। আপেল, নাসপাতির মতো ফল রোজের ডায়েটে রাখতে পারেন।
ভিটামিন কে সমৃদ্ধ খাবার
বাঁধাকপি, ফুলকপি, শসা, লাউ , ঝিঙে এই ধরনের সব্জি বেশি খেতে হবে। এগুলিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে যা শরীরের প্রদাহ কমাতে পারে।
ভিটামিন ডি আছে এমন খাবার
তৈলাক্ত মাছ, দুধ, ডিম খাওয়া ভাল। দই খেতে পারেন। ভিটামিন ডি টিউমারের বৃদ্ধি ও বিভাজন বন্ধ করতে পারে।
পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি এমন খাবার
পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত সোডিয়ামের প্রভাব কমাতে পারে। অ্যাভোকাডো, কলা, আলু, পালং শাক, টম্যাটো, নানা রকম ডাল খেতে পারেন। কমলালেবুতেও ভাল পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। ড্রাই ফ্রুট্সের মধ্যে আখরোট, কিশমিশ খেলে ভাল।
কী কী খাবেন না?
১) রেড মিট খাওয়া একেবারেই চলবে না। বেশি রেড মিট খেলে ফাইব্রয়েডের ঝুঁকি আরও বাড়বে।
২) অতিরিক্ত চিনি আছে এমন খাবার ও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া চলবে না। বেশি চিনি মেশানো পানীয়, প্যাকেটবন্দি ফলের রস, নরম পানীয়, হেল্থ ড্রিঙ্ক, এনার্জি ড্রিঙ্ক বেশি খেলে ক্ষতি। প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে পিৎজ়া, বার্গার, সসেজ, সালামি খাওয়া বন্ধ করতে হবে।
৩) খুব বেশি মাত্রায় নুন আছে এমন খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। চিপ্স, ভাজাভুজি যাতে নুনের মাত্রা বেশি, সে সব না খাওয়াই ভাল।
৪) ফাইব্রয়েড ধরা পড়লে ক্যাফেইন বাদ দিতে হবে। চা, কফি, নরম পানী বা বাজার চলতি এনার্জি ড্রিঙ্কে ক্যাফেইন থাকে যা ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে দিতে পারে।
৫) মদ্যপান অতি অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। সব ধরনের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের আসক্তি কাটাতে হবে।
৬) স্যাচুরেটেড এবং ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার প্রদাহ বাড়াতে পারে। ভাজাভুজি, ফাস্ট ফুড, প্রক্রিয়াজাত স্ন্যাক্স, মাখন, মার্জারিন খাওয়া বন্ধ করতে হবে।