রজোনিবৃত্তি পর্বের কী কী উপসর্গ এড়িয়ে গেলেই বিপদ? ফাইল চিত্র।
বয়ঃসন্ধির পর থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে মেয়েদের শারীরবৃত্তীয় নানা পরিবর্তন ঘটতে থাকে। ঋতুচক্র শুরু, সন্তানধারণ এবং রজোনিবৃত্তি— এই তিনটি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হরমোন। এই হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে তার প্রভাব পড়ে শরীরের উপর। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, পুরুষদের ক্ষেত্রে হার্টের যে ক্ষয় হতে বছর দশেক সময় লাগে, মহিলাদের ক্ষেত্রে তা ঘটে অনেক দ্রুত গতিতে। রজোনিবৃত্তি পর্বে হরমোনের ওঠানামায় হৃদ্রোগের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই ওই পর্বে যে কোনও সাধারণ উপসর্গও এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।
দেশের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থের গবেষণা বলছে, রজোনিবৃত্তির পর্যায়ে মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ কমতে থাকে। এই হরমোনই মহিলাদের শরীরে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজের কাজি। এর পরিমাণে হেরফের হওয়া মানেই নানাবিধ শারীরিক সমস্যা শুরু হবে। যেমন সময়ের আগেই বুড়োটে ছাপ পড়বে চেহারায়, সন্তানধারণে সমস্যা হবে, বড়সড় ধাক্কা লাগবে হার্টে।
রজোনিবৃত্তি পর্বেই শরীরের তাপমাত্রার হেরফের হয় সবচেয়ে বেশি। মহিলাদের ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যের কারণে বাকি হরমোনগুলিও অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। তখন শরীর গরম হয়ে ওঠে, নাক-কান-গলার কাছে ঘাম হতে থাকে। মনে হয়, শরীরের উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ হচ্ছে। একেই বলা হয় 'হট ফ্ল্যাশ'। এই সময়েই হৃৎস্পন্দনের গতি অনিয়মিত হয়ে যেতে পারে অনেকের। আবার ইস্ট্রোজেনের হেরফেরের কারণেই রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই খারাপ কোলেস্টেরল বা ‘এলডিএল’ রক্তবাহিকাগুলির পথ ক্রমশ সরু করে দেয়। ফলে রক্ত চলাচল বাধাপ্রাপ্ত হয়। সেখান থেকেই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়তে থাকে। তাই ওই পর্বে নিয়মিত হার্টের পরীক্ষা করানো ও রক্তচাপ মেপে রাখা জরুরি।
কোন কোন লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে?
পুরুষ এবং মহিলার ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলি সব সময় এক হয় না। পুরুষদের যেমন বুকে ব্যথা বেশি হয়, মহিলাদের ক্ষেত্রে তেমনই হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণ হল নিশ্বাসের কষ্ট। শ্বাসবন্ধ হয়ে আসা হচ্ছে মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের অন্যতম উপসর্গ। তা ছাড়া ক্লান্তি, বিশ্রাম নেওয়ার সময়েও দরদর করে ঘাম হওয়া, ঘাড়ে ব্যথার উপসর্গগুলিও দেখা দেয়। অনেকেই রজোনিবৃত্তি পর্বের উপসর্গগুলির সঙ্গে হৃদ্রোগের উপসর্গ গুলিয়ে ফেলেন। তাই এই সময়ে সামান্য কিছু লক্ষণ দেখা দিলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মাঝেমধ্যেই যদি জ্ঞান হারান, তা হলেও সাবধান। ইসিজি, চেস্ট এক্স রে করিয়ে নিলে ভাল হয়। সেই সঙ্গেই নিয়ম করে শরীরচর্চা করা ও সুষম খাবার খাওয়াও জরুরি।