মহুয়া মৈত্রের টিফিন বাক্স দেখে বিস্মিত হন সহকর্মী সাংসদেরা। ছবি : সংগৃহীত।
তাঁর সব কিছুই বাকিদের থেকে একটু আলাদা ধরনের হয়ে থাকে। সাজগোজ হোক, বিয়ে হোক, বিতর্ক হোক, রাজনীতি বা রোদচশমা— মহুয়া মৈত্র আলাদা করে নজরে পড়েন। পঞ্চাশ পেরিয়েও তিনি ফিট। মেদহীন চেহারা। প্রচারে বেরিয়ে মাঠে নেমে ফুটবল খেলেন। কথায় বলে, ‘ম্যান ইজ় হোয়াট হি ইটস’, অর্থাৎ মানুষ যা খান, তারই প্রতিফলন ঘটে তার সার্বিক স্বাস্থ্য এবং জীবনযাপনে। রাজনীতিবিদ মহুয়া কী এমন খান! সাংসদ জানালেন, তিনি যা খান তা দেখে বাকিরা খেতে চান না।
১৬ বছর ধরে রাজনীতি করছেন। গত সাত বছর হল সাংসদ হয়েছেন। অধিবেশনের সময় যখন নিয়মিত সংসদ ভবনে আসেন তখন কি সংসদের ক্যান্টিনে খান, না কি বাড়ির খাবার নিয়ে আসেন? প্রশ্ন করা হয়েছিল মহুয়াকে। শুনে কৃষ্ণনগরের সাংসদ জানালেন, তিনি সংসদের নতুন ক্যান্টিনের ভক্ত নন। তাঁর একটি হটপট রয়েছে, তাতেই তিনি বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে আসেন। মহুয়া বলছেন, ‘‘আমি বাড়িতে তৈরি খাবার খেতেই পছন্দ করি। আর রোজ মোটামুটি একই খাবার খাই। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, কাউকে ভাগও দিতে হয় না। কারণ আমার খাবার খেতেই চায় না কেউ। এক এক জন তো পাশ থেকে দেখে বলে যায়, আরে আপনি এ সব কী খাচ্ছেন!’’
কী এমন খান মহুয়া? তৃণমূল সাংসদ বলছেন, ‘‘আমার মেনু একই থাকে। রোজ আমি ডাল আর ঢেঁড়সের তরকারি খাই।’’
সংসদের ক্যান্টিনের খাবার পছন্দ নয় মহুয়ার! ছবি: সংগৃহীত।
ঢেঁড়সের তরকারির প্রতি এমন প্রেম এর আগে দেখা গিয়েছিল বলিউডের এক তারকারও। তিনি সইফ আলি খান। এক সাক্ষাৎকারে সইফকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমার দুপুরের খাবারে আর কিছু না থাক ডাল, ভাত আর ঢেঁড়সের তরকারি থাকবেই।’’ দেখা যাচ্ছে রাজনীতির জগতের ‘তারকা’ সাংসদ মহুয়ারও ঢেঁড়সের প্রতি আলাদা ভাল লাগা রয়েছে।
পুষ্টিবিদ শ্রেয়া চক্রবর্তী বলছেন, ঢেঁড়স খাওয়া শরীরের জন্য সব সময়েই ভাল। কারণ, ‘‘ঢেঁড়সে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, কে। এ ছাড়া ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম এবং ক্যালশিয়ামের মতো জরুরি খনিজও রয়েছে। রয়েছে উপকারী ফাইবার। যা এক দিকে যেমন হজমে সাহায্য করে, তেমনই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে, রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে, পেশি এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে, পাশাপাশি ক্যালোরির মাত্রা কম হওয়ায় ওজন কমাতে সাহায্য করে। ত্বকে বাড়তি ঔজ্জ্বল্য আনতে সাহায্য করে ঢেঁড়স।’’
তবে একই সঙ্গে কয়েকটি বিষয় খেয়ালও রাখতে বলছেন শ্রেয়া। তিনি বলছেন, ‘‘ঢেঁড়স রান্না করলে তাতে সবসময় লেবুর রস বা টম্যাটো দেওয়া উচিত। কারণ তাতে ঢেঁড়সে থাকা আয়রন শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে।’’ এ ছাড়াও পুষ্টিবিদ বলছেন, ‘‘কারও কিডনি স্টোনের সমস্যা আগে হয়ে থাকলে ঢেঁড়স পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত। কারণ ঢেঁড়সে থাকা অক্সালেট ওই সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে।’’
ডাল আর ঢেঁড়সের তরকারি খেতে ভালবাসেন বলিউডের তারকা সইফ আলি খানও। ছবি: সংগৃহীত।
অন্য দিকে, ডালে রয়েছে উপকারী উদ্ভিজ প্রোটিন, বি ভিটামিন যা ত্বক, চুল এবং পেশির স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। পুষ্টিবিদ বলছেন, ‘‘ঢেঁড়সের মতো ডালও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডালে রয়েছে প্রোবায়োটিক। যা অন্ত্রের ভাল ব্যাক্টেরিয়াকে ভাল রাখে।’’ তবে ডালও কিডনির রোগের রোগীদের বুঝে খাওয়া উচিত বলে জানাচ্ছেন শ্রেয়া।
এ তো গেল স্বাস্থ্যের কথা। খাওয়াদাওয়ায় একঘেয়েমি আসারও তো একটা ব্যাপার থাকে! মহুয়া জানাচ্ছেন, তাঁর টিফিনে মাঝেমধ্যে বদল আসে না তা নয়। সংসদের অন্য সহকর্মীদের দৌলতে কখনওসখনও সুস্বাদু খাওয়াদাওয়াও হয় তাঁর। মহুয়া বলছেন, ‘‘অন্ধ্রপ্রদেশের সাংসদেরা যখন আসেন, তখন ওঁরা কিমা বিরিয়ানি নিয়ে আসেন। আমার ওটা খেতে দারুণ লাগে। আবার মহরাষ্ট্রের সুপ্রিয়া সুলে টিফিনে নিয়ে আসেন খিচুড়ি আর আলু। ওটাও খেতে আমার ভাল লাগে। তবে তা ছাড়া আমার রুটিন মোটামুটি একই থাকে।’’