ইসবগুল বনাম চিয়া। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
ব্যস্ত জীবনে অন্ত্রের স্বাস্থ্য বার বার অবহেলিত হতে থাকে। জাঙ্ক ফুড বেশি খাওয়া, পুষ্টিগুণের কথা মাথায় না রাখা, সময় দিয়ে চিবিয়ে খাওয়া, এ সমস্ত অভ্যাসের ফলে পেটের গণ্ডগোল লেগেই থাকে। আর এমনই সময়ে খাবারে ফাইবারের উপস্থিতি খুব প্রয়োজন। হজমের প্রক্রিয়াকে সুস্থ রাখার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান এটি। ফাইবারের ঘাটতি পূরণ করতে অনেকেই শাকসব্জির পাশাপাশি চিয়া বীজ বা ইসবগুল খান। দু’টিই প্রাকৃতিক উদ্ভিজ্জাত, কিন্তু ধরনে ভিন্ন। অন্ত্রে গিয়ে আলাদা ভাবে কাজ করে দু’টি। তা ছা়ড়া পুষ্টি উপাদানেও পার্থক্য রয়েছে। ফাইবারের এই দুই উৎসের মধ্যে কোনটি বেশি কার্যকরী, সেটি জেনে খাওয়া উচিত।
ফাইবারের উৎস হিসেবে
ইসবগুল: ইসবগুল সাইলিয়াম হাস্ক। দ্রবণীয় ফাইবারের দারুণ উৎস। এটি জল শোষণ করে জেলির মতো হয়ে যায়। এটি পেটে গিয়ে অন্ত্র খালি করে দেওয়ার প্রক্রিয়ার গতি ধীর করে দেয়। পাশাপাশি পিত্ত রস এবং ডায়েটারি ফ্যাট এবং শর্করাকে আটকে রাখে। এর ফলে কোলেস্টেরল এবং রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের উপর প্রভাব ফেলে।
চিয়া বীজ: প্রতি ১০০ গ্রাম চিয়া বীজে রয়েছে ৩০-৪০ গ্রাম ফাইবার। তার মধ্যে ৮৫-৯০ শতাংশই জলে দ্রবণীয় নয়। অদ্রবণীয় ফাইবার মূলত মল তৈরিতে সাহায্য করে এবং দ্রুত শরীরের বাইরে বার করে দিতে পারে।
ইসবগুল খাবেন না কি চিয়া? ছবি: সংগৃহীত।
কোষ্ঠকাঠিন্য এবং মল তৈরিতে কার্যকরী
ইসবগুল: সাইলিয়ামের জেল মলকে নরম করতে উপকারী। পাশাপাশি দ্রুত মল বার করে দেওয়ার কাজও করতে পারে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্য দূর করে।
চিয়া বীজ: শরীর থেকে মল বার করার প্রক্রিয়াকে নিয়মিত করতে সাহায্য করে। মলত্যাগেও সুবিধা হয়। তবে বেশি পরিমাণে চিয়া খেলে আবার কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়েও যেতে পারে।
রক্তে শর্করার পরিমাণ এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী
ইসবগুল: এলডিএল কোলেস্টেরল কমিয়ে দেওয়ার জন্য কার্যকরী ইসবগুল। খাবার খাওয়ার আগে ইসবগুল খেলে ফাস্টিং গ্লুকোজ় এবং এইচবিএ১সি কমে যায়, বিশেষ করে যাঁদের রক্তে বেসলাইন গ্লুকোজ় বেশি থাকে।
চিয়া বীজ: লিপিড প্রোফাইল উন্নত করতে পারে। পাশাপাশি, বেশ কয়েকটি পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে চিয়া বীজের ফলে ফাস্টিং গ্লুকোজ় এবং খাওয়ার পরে গ্লাইসেমিয়ার সামান্য উন্নতি হয়। তবে চিয়া কীভাবে খাওয়া হয়, তার উপর সেটি নির্ভর করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী
ইসবগুল: অনেক ক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখতে পারে ইসবগুল। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও কার্যকরী।
চিয়া বীজ: চিয়া বীজ খেলে পেট অনেক ক্ষণ ভরে থাকে। ইসবগুলের মতো ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্যকারী।
পুষ্টিগুণের পরিমাণ
ইসবগুল: কম ক্যালোরিযুক্ত ফাইবারের উৎস। কোলেস্টেরল এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। তবে পুষ্টির পরিমাণ কম।
চিয়া বীজ: ফাইবারের পাশাপাশি উদ্ভিজ্জাত ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর চিয়া।
কোনটি তা হলে বেশি ভাল? কোনটি খাওয়া উচিত?
যদি লক্ষ্য হয় রক্তচাপ এবং শর্করা নিয়ন্ত্রণে রেখে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানো এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, তা হলে ইসবগুলই সেরা সঙ্গী। কিন্তু যদি ওজন কমানো, ত্বক উজ্জ্বল রাখা আর পেটফাঁপার সমস্যা কমানো, তা হলে চিয়া বীজ সেরা বিকল্প। পাশাপাশি এই বীজে রয়েছে নানাবিধ খনিজ, ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিন।