Anxiety Disorder in Children and Teenager

ভয়-উদ্বেগের কালো ছায়া মনে! ছোটদের মধ্যেও বাড়ছে উদ্বেগের রোগ, পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক

প্রেম, ভালবাসা, আনন্দ— সব কিছুকে টপকে যাচ্ছে ভয়। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে নিরাপত্তাহীনতা বাড়তেই এই ধরনের রোগের প্রকোপ বেড়েছে। আর তা থেকে রেহাই পায়নি কমবয়সিরাও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৫ ১১:৪৮
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ভয়, দুশ্চিন্তা। গোটা পৃথিবীকে যেন গ্রাস করে নিয়েছে এই একটি অনুভূতিই। প্রেম, ভালবাসা, আনন্দ— সব কিছুকে টপকে যাচ্ছে ভয়। রাজনৈতিক, সামাজিক এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে নিরাপত্তাহীনতা বাড়তেই এই ধরনের রোগের প্রকোপ বেড়েছে। আর তা থেকে রেহাই পায়নি কমবয়সিরাও। শৈশব, কৈশোর, যৌবনে বড় প্রভাব ফেলছে এই রোগ। যার নাম ‘অ্যাংজ়াইটি ডিজ়অর্ডার’। সারা পৃথিবীতেই মানসিক রোগ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তার ফলে মনের অসুখ চিহ্নিত করাও যাচ্ছে অনেক বেশি। মনোরোগ চিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় বিস্তারিত জানিয়েছেন এই বিষয়ে।

Advertisement

চিকিৎসকের কথায়, “এই রোগ যে কেবল নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যেই দেখা যায়, তা নয়। আগেকার দিনে শিশুদের মধ্যেও অ্যাংজ়াইটি ডিজ়অর্ডার দেখা যেত। কিন্তু রোগ শনাক্ত করা যেত না। তবে এখন এই রোগ হওয়ার কারণগুলি বেড়েছে।” চিকিৎসকের মতে, যে কারণগুলি ছোটদের মধ্যে এখন এই রোগের দাপট বাড়িয়েছে, তা মূলত পারিবারিক।

কারণ

Advertisement

চিকিৎসক জানালেন, আগে একক পরিবারে বড় হত না বাচ্চারা। ফলে তুতো ভাই-বোন থেকে শুরু করে আরও অনেকের সঙ্গে নিজেদের সমস্যা নিয়ে কথা বলার পরিসর ছিল। বাইরে খেলাধুলা করার মতো জায়গা ছিল অনেক বেশি। প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার সুযোগ ছিল, এখন যেটা প্রায় নেই বললেই চলে। এখনকার পড়ুয়াদের উপর পড়াশোনার চাপ প্রবল। তার উপরে প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা তৈরি করে দেন অভিভাবকেরা। বাবা-মায়ের মধ্যে অশান্তি একটা বড় কারণ এই রোগের। আগেকার দিনেও সাংসারিক বিবাদ হত। কিন্তু একান্নবর্তী পরিবারে অন্য আত্মীয়েরা বাবা-মায়ের ঝগড়া থেকে শিশুদের উদ্ধার করে নিয়ে যেতেন। এখন একই ফ্ল্যাটের মধ্যে বাচ্চার সামনেই সব রকম বিষয়ে বিবাদ-আলোচনা চলতে থাকে। ফলে একাকিত্ব, প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা, প্রকৃতির থেকে দূরে থাকা, বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের সম্ভাবনা, বৃদ্ধদের সঙ্গে না থাকা, এই সব কারণে ছোটদের মধ্যে বিভিন্ন আতঙ্ক, ভয় তৈরি হয়েছে এখন।

উপসর্গ

অতিরিক্ত উদ্বেগ

সব বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা

মনোযোগের অভাব

প্যানিক অ্যাটাক (এই অবস্থায় হৃৎস্পন্দন বেড়ে যায়, ঘাম হতে শুরু করে, হাত-পা কাঁপতে শুরু করে, ভয় হতে থাকে সব কিছু নিয়ে)

নির্দিষ্ট কিছু বিষয় নিয়ে ভয় অথবা ফোবিয়া খিদে কমে যাওয়া

ঘুমে ব্যাঘাত হওয়া।

চিকিৎসা

অ্যাংজ়াইটি ডিজ়অর্ডারের লক্ষণ চোখে পড়লে মনোরোগ চিকিৎসকের থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত। তবে ছোটদের ক্ষেত্রে ওষুধ একেবারে শেষ বিকল্প। প্রথমে অনেকরকম উপায় হয়, সেগুলি দিয়ে রোগ নিরাময়ের চেষ্টা করতে হবে। বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে বলে (থেরাপি) রোগ নিরাময় হতে পারে। বিভিন্ন ধরনের থেরাপি হয় এই রোগের প্রকোপ কমানোর জন্য। এ ছাড়া কিছু ঘরোয়া উপায় রয়েছে, বাবা-মায়েদের জন্য সেগুলি জানা দরকার।

ঘরোয়া উপায়

সব ছেলেমেয়ের জন্যই শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে অবসাদ অথবা বা উদ্বেগ বেশি যাঁদের, তাঁদের জন্য। সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি, স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অভ্যাস এই রোগকে খানিক প্রশমিত করতে পারে।

ফলমূল, শাকসব্জি, ডাল, চর্বিহীন প্রোটিন, বাদাম এবং নানা ধরনের বীজ মিলিয়ে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস তৈরি করানো উচিত।

তা ছাড়া প্রতি দিন কমপক্ষে ৬০ মিনিট শারীরিক কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করা খুব দরকার। তা সে শরীরচর্চা হোক অথবা খেলাধুলো।

বয়সের উপর নির্ভর করে রাতে যথাযথ সময় ঘুমোনো উচিত।

ধ্যান করলে মনে শান্তি আসে। তাতে এই রোগ উপশমে সাহায্য পাওয়া যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement