—প্রতীকী ছবি।
পুরাণে বলা হয়েছে, পিতৃপুরুষ তুষ্ট হলে তাঁদের আশীর্বাদে দীর্ঘায়ু, ধনসম্পত্তি, জ্ঞান, শান্তি এবং মৃত্যুর পরে স্বর্গলাভ ও মোক্ষলাভ হয়। এখন প্রশ্ন হল তর্পণ কী?
পরলোকগত পূর্বপুরুষ, ঋষি, পিতামাতা এবং গুরুর উদ্দেশে খাদ্যদ্রব্য ও জল নিবেদন করে তাঁদের তুষ্ট করাই হল তর্পণ। তর্পণ বিভিন্ন প্রকারের হয়। বিভিন্ন তর্পণের বিভিন্ন রীতি বা প্রক্রিয়ার উল্লেখ রয়েছে।
ভাদ্র পূর্ণিমার পরবর্তী প্রতিপদ থেকে অমাবস্যা তিথি পর্যন্ত চলে পিতৃপক্ষ। অমাবস্যায় পিতৃপক্ষের শেষ হয়। মহাভারতে দাতা কর্ণের আত্মা স্বর্গে অবস্থানকালে খাদ্যদ্রব্য হিসাবে তাঁকে সোনা এবং রত্নাদি প্রদান করা হয়। কর্ণ এই প্রকার কাজের কারণ জানতে চাইলে তাঁকে বলা হয় যে, দাতা কর্ণ সারা জীবন সোনা এবং রত্ন দান করে গিয়েছেন, পিতৃপুরুষের উদ্দেশে তিনি কখনও খাদ্য বা জল দান করেননি। এই কারণে তাঁকে স্বর্গে খাদ্যের পরিবর্তে সোনা এবং রত্ন খাদ্য হিসাবে দেওয়া হচ্ছে। কর্ণ বলেন পিতা এবং পিতৃপুরুষের সম্বন্ধে তিনি অবহিত ছিলেন না। যুদ্ধের পূর্বরাতে তাঁর মা তাঁকে পিতা এবং পিতৃপুরুষের সম্বন্ধে অবহিত করেন। পিতৃপুরুষের উদ্দেশে খাদ্যদ্রব্য এবং জল প্রদান না করা কর্ণের অনিচ্ছাকৃত ভুল ছিল বলে দাবি করেন তিনি। কর্ণকে ভুল সংশোধন করার জন্য ইন্দ্র (মতান্তরে যম) ১৬ দিনের জন্য মর্ত্যে গিয়ে পিতৃপুরুষের উদ্দেশে অন্ন এবং জলদানের অনুমতি প্রদান করেন। এই ১৬ দিন পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত হয়। পূর্বপুরুষের মৃত্যুর তিথিতেই (পিতৃপক্ষে) তর্পণ প্রশস্ত। এই সময় সম্ভব না হলে পিতৃপক্ষের শেষ দিন, অর্থাৎ অমাবস্যায় তর্পণ করা যেতে পারে। কারণ, অমাবস্যা প্রেতকর্মের আদর্শ তিথি। যাঁদের জন্মপত্রিকায় পিতৃদোষ বর্তমান, তাঁদের অবশ্যই তর্পণ করা উচিত।
আগামী ২১ সেপ্টেম্বর, ৪ আশ্বিন, রবিবার, পিতৃপক্ষের শেষ দিন।
বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে-
ইংরেজি ২০ সেপ্টেম্বর, বাংলা ৩ আশ্বিন, শনিবার।
সময়- রাত ১২টা ১৮ মিনিটে অমাবস্যা শুরু।
ইংরেজি ২১ সেপ্টেম্বর, বাংলা ৪ আশ্বিন, রবিবার।
সময়- রাত ১টা ২৪ মিনিটে অমাবস্যা শেষ।
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা মতে–
ইংরেজি ২০ সেপ্টেম্বর, বাংলা ৩ আশ্বিন, শনিবার।
সময়- রাত ১১টা ৫৩ মিনিট ২৫ সেকেন্ডে অমাবস্যা শুরু।
ইংরেজি ২১ সেপ্টেম্বর, বাংলা ৪ আশ্বিন, রবিবার।
সময়- রাত ১২টা ২৩ মিনিট ৪৬ সেকেন্ডে অমাবস্যা শেষ।
অমাবস্যার তিথি থাকাকালীন যে কোনও সময়ই তর্পণ করা যেতে পারে। তবে রাতে তিথি লাগার পরের দিন ভোরবেলাই তর্পণ করার জন্য উপযুক্ত। কারণ, খালি পেটে, নদী বা পুকুরের জলে স্নান সেরে পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে জল দান করলে বিশেষ ফলপ্রাপ্তি ঘটে।