বিংশোত্তরী দশা কী ভাবে বিচার করা হয় এবং এর থেকে কী জানা যায় (প্রথম অংশ)

ভারতীয় বা বৈদিক জ্যোতিষের প্রধান ভিত্তি হল ভাববিচার, গোচর বিচার আর দশা বিচার। কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতীয় জ্যোতিষের সঙ্গে পাশ্চাত্য জ্যোতিষে বড় যদি কোনও পার্থক্য থাকে, সেটা হচ্ছে দশা বিচার।

Advertisement

অসীম সরকার

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share:

(১) ভারতীয় বা বৈদিক জ্যোতিষের প্রধান ভিত্তি হল ভাববিচার, গোচর বিচার আর দশা বিচার। কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতীয় জ্যোতিষের সঙ্গে পাশ্চাত্য জ্যোতিষে বড় যদি কোনও পার্থক্য থাকে, সেটা হচ্ছে দশা বিচার। পাশ্চাত্য জ্যোতিষে এখনও সে ভাবে ভারতীয় দশা বিচার ঢোকেনি। ঠিক একই ভাবে ভারতীয় জ্যোতিষে এখনও পাশ্চাত্যের ‘প্রগনোসিস’ প্রবেশ করেনি।

Advertisement

(২) দশার সাহায্যে আমরা কী বিচার করি? দশার সাহায্যে ভূত, ভবিষ্যৎ ও অতীতের ঘটনার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার করা হয়ে থাকে যা পাশ্চাত্য জ্যোতিষদের কাছে কিছুটা বিস্মরের। যেটা ওরা প্রগনোসিসের সাহায্যে করে থাকে, সেটাও বেশ ভাল পদ্ধতি।

(৩) ‘বৃহৎ পরাশরীয় হোরা শাস্ত্র’তে মহর্ষি পরাশর ৪২ রকমের দশার কথা উল্লেখ করছেন। কয়েকশো বছরের পরীক্ষা ও নিরীক্ষার মাধ্যমে সারা ভারতে বিংশোত্তরী দশা এখন প্রায় ৯৯ শতাংশ জ্যোতিষ ব্যবহার করে ফলাদেশ করেন। অনেকে এখন অষ্টোত্তরীদশারও চর্চা করেন। কাশ্মীর ও উত্তর ভারতে যোগীনি দশার সাহায্যে এখনও বিচার চলে। তবে বিংশোত্তরীদশা বিচার খুবই কার্যকরী। বলা যায় অলৌকিক।

Advertisement

(৪) বিংশোত্তরী দশা বিচারে মানুষের আয়ুকে ১২০ বৎসর ধরে বিচার করা হয়।

আরও পড়ুন: দাম্পত্য জীবনে সমস্যা? বেডরুমে আনুন এই পরিবর্তনগুলি

(৫) এই দশায় প্রথমে কেতুর দশা, কেতুর পরে শুক্রের দশা, শুক্রের পর রবির দশা, তারপর চন্দ্রের দশা, তারপর মঙ্গলের, রাহুর, বৃহস্পতির, শনির, শনির পর বুধের দশা। দশা বিচার কালে এই ক্রম কখনও ভাঙা হয় না। কেতুর দশা ৭ বছর, শুক্রের দশা ২০ বছর, রবির দশা ৬ বছর, চন্দ্রের দশা ১০ বছর, মঙ্গলের দশা ৭ বছর, রাহুর দশা ১৮ বছর, বৃহস্পতির দশা ১৬ বৎসর, শনির দশা ১৯ বছর, বুধের দশা ১৭ বছর।

(৬) জন্মকালীন চন্দ্র যে নক্ষত্রে থাকে, সেখানে অঙ্কের নিয়মে দশা বর্ষ শুরু হয়। জন্মরাশিতে চন্দ্র যদি মৃগশিরা নক্ষত্রে থাকে, তার মানে জাতক/জাতিকার মঙ্গলের দশায় জন্ম বোঝায়। বৃশ্চিক রাশিতে জেষ্ঠা নক্ষত্রে চন্দ্র থাকলে বুধের দশায় জন্ম বোঝায়। ঠিক একই ভাবে জন্ম নক্ষত্র থেকে কার কী দশা হবে, সেটা বিচার করা হয়ে থাকে। তবে দশা বিচার বেশ জটিল।

(৭) যখন কম্পিউটার ছিল না, তখন পণ্ডিতরা ঐকিক নিয়মে দশা বের করতেন। এতে অনেক সময় লাগত। তারপর নির্মলচন্দ্র লাহিড়ী ত্রিকনোমিতিক নিয়মে যে এফিমেরিসের তৈরি করেন, যার সাহায্যে আধুনিক ভারতে প্রথম লগ টেবিলের সাহায্যে দশা বের করা শুরু হয়। আর এখন তো প্রযুক্তির সাহায্যে এক মিনিটের মধ্যে পুরো দশা ক্যালকুলেট করে বের করে ফেলা হয়। আজও সারা ভারতে লাহিড়ি এফিমেরিস খুবই প্রসঙ্গিক।

(৮) প্রথমে আমাদের মনে রাখতে হবে বিংশোত্তরী দশা নিরায়ন পদ্ধতির নিয়মে গণনা করে বের করতে হয়, কারণ বৈদিক জ্যোতিষ নিরায়ন নিয়মে চলে। আর পাশ্চাত্য জ্যোতিষ কিন্তু সায়ন পদ্ধতির নিয়মে চলে।

(৯) দশা বিচারের দক্ষতার উপর একজন জ্যোতিষের জ্ঞান বা তার জানার পরিধির বিচার করা হয়। ভাল জ্যোতিষ মানেই ভাল দশা বিচার জানে।

(১০) সারা ভারতে নামকরা জ্যোতিষরা নানা কায়দায় দশা বিচার করে থাকেন। এটা যে যে ভাবে রপ্ত করতে পারে তার উপর দক্ষতার মান নির্ভর করে।

(১১) প্রতিটা দশাকে আবার ৯ ভাগে ভেঙে অন্তর্দশা বের করা হয়ে থাকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন