আত্মসমর্পণকারী মাওবাদী এবং নিরাপত্তা আধিকারিকেরা। ছবি: সংগৃহীত।
ছত্তীসগঢ়ের বস্তারে আবার সরকারের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আত্মসমর্পণ মাওবাদীদের। বুধবার দন্তেওয়াড়া জেলায় আত্মসমর্পণ করেছেন দুই মহিলা-সহ ১২ জন মাওবাদী জঙ্গি। পুলিশ জানিয়েছে, এঁদের মধ্যে ন’জনের মাথার উপর মোট ২৮ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা রয়েছে।
নিষিদ্ধ সংগঠন সিপিআই (মাওবাদী)-এর নেতা-কর্মীদের মূল স্রোতে ফেরাতে গত বছর ছত্তীসগঢ় পুলিশ ‘নিয়া নার নিয়া পুলিশ’ (আমাদের গ্রাম, আমাদের পুলিশ) প্রচার কর্মসূচি শুরু করেছিল। তার আগে ২০২০ সালের জুনে শুরু হয়েছিল ‘লোন ভারাতু’ (গোন্ড ভাষায় যার অর্থ ‘তোমার বাড়ি ফিরে যাও’) পুনর্বাসন কর্মসূচি। দন্তেওয়াড়ার পুলিশ সুপার গৌরব রাই বুধবার জানান, প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিয়ে এ পর্যন্ত ১০০৫ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁদের মধ্যে মাওবাদী সশস্ত্র বাহিনী পিএলজিএ (পিপলস লিবারেশন গেরিলা আর্মি)-র ২৪৯ জন নেতা-কর্মীর মাথার উপর পুরস্কার ঘোষণা করা ছিল।
গৌরব জানান, বুধবার কেন্দ্রীয় বাহিনী ও পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের মধ্যে পিএলজিএ-র দুই কমান্ডার রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে চন্দ্রান্না ওরফে বুরসু পুনেম ছত্তীসগঢ়ের পশ্চিম বস্তার ডিভিশনাল কমিটির অন্যতম নেতা। অমিত ওরফে হিঙ্গা বরসা (২৬) মহারাষ্ট্রের গঢ়ছিরৌলি ডিভিশনাল কমিটির কমান্ডার। তাঁদের আট লক্ষ টাকা করে মাথার দাম রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এই দু’জন অতীতে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর একাধিক হামলায় জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘অন্য দুই মাওবাদী জঙ্গি অরুণা লেকাম স্থানীয় এরিয়া কমিটির সদস্য এবং দেবা কাওয়াসি পিএলজিএর একজন সেকশন কমান্ডার। তাঁদের মাথায় উপর যথাক্রমে পাঁচ লক্ষ এবং তিন লক্ষ টাকা পুরস্কার ছিল।’’
প্রসঙ্গত, ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণু দেও সাই গত মার্চে ‘নকশাল আত্মসমর্পণ এবং আক্রান্তদের পুনর্বাসন নীতি ২০২৫’ ঘোষণা করেছিলেন। আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পুনর্বাসন, চাকরি, আর্থিক সহায়তা এবং আইনি সুরক্ষা প্রদান করার মতো নানা বিষয় রয়েছে ওই প্রকল্পে। নতুন আত্মসমর্পণ নীতিতে মাওবাদী সংগঠনের রাজ্য কমিটি, আঞ্চলিক কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোর সদস্যদের মতো উচ্চপদস্থ ক্যাডারদের এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। যাঁরা লাইট মেশিনগান (এলএমজি)-সহ আত্মসমর্পণ করবেন, তাঁরাও পাঁচ লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কার পাবেন। যে সব ক্ষেত্রে মাওবাদী ইউনিটের ৮০ শতাংশ সদস্য একসঙ্গে আত্মসমর্পণ করবেন, সেখানে পুরস্কার দ্বিগুণ করা হবে। পাশাপাশি, আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে সন্তানদের শিক্ষা এবং চাকরির সহায়তা।