প্রতীকী ছবি।
ফের বাল্যবিবাহের কদর্য রূপ দেখা দিল বিহারে। তারই খেসারত দিতে হল বছর পনেরোর এক কিশোরকে। বিয়ের দিনেই ওই কিশোরের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করল পুলিশ।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাল্যবিবাহ এবং পণপ্রথার বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে নীতীশ কুমার সরকার। কিন্তু তার প্রভাব যে এখনও সব স্তরে পড়েনি তারই উদাহরণ গত সোমবার দক্ষিণ বিহারের গয়া জেলায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনা।
আত্মঘাতী ছাত্রের নাম মহাদেব দাস। পারাইয়া থানার অধীনে বিনোভা নগর গ্রামে নবম শ্রেণির ছাত্র মহাদেবের সঙ্গে তারই বৌদির বিয়ে ঠিক করে পরিবারের লোকেরা। বয়সে বৌদি রুবি দেবী মহাদেবের থেকে বছর দশেকের বড়। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কিশোরের উপর ক্রমাগত চাপ দিতে থাকে তার মা, বাবা-সহ গোটা পরিবার।
আরও পড়ুন:
মন্ত্রীর উড়ানে দেরি, বরখাস্ত এয়ার ইন্ডিয়ার তিন কর্মী
‘প্রেম’ করে বিয়ে, কাশ্মীরে চাকরি হারালেন শিক্ষক দম্পতি
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, মহাদেবের দাদা স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থায় ইলেক্ট্রিশিয়ানের কাজ করতেন। ২০১৩ সালে একটি দুর্ঘটনায় বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। বৌদিকে মায়ের মতোই সম্মান করত মহাদেব। তাই পরিবারের চাপে বিয়েতে রাজি হলেও মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিল সে। বিয়ের দিন সকাল থেকে মনমরা ছিল মহাদেব। বিকেল ৫টায় স্থানীয় একটি মন্দিরে বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়। বর এবং কনের তরফ থেকে গুটিকয়েক আত্মীয়ই উপস্থিত ছিলেন বিয়েতে। বিয়ে শেষ হওয়ার পরই বাড়ি যাওয়ার জন্য জেদ ধরে মহাদেব। প্রথমে রাজি না হলেও পরে অনুমতি দেয় তার পরিবারের লোকজন। ঘণ্টা দুই পরেও মহাদেবের দেখা না মেলায়, বাড়ি ফিরে ছেলেকে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলতে দেখেন মহাদেবের বাবা চন্দ্রেশ্বর দাস।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই হইচই পড়ে যায় গোটা গ্রামে। দশ বছরের বড় বৌদির সঙ্গে জোর করে নাবালকের বিয়ে দেওয়ার ঘটনায় হতবাক পুলিশও। মহাদেবের বাবা চন্দ্রেশ্বরকে জেরা করে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ জানিয়েছে, চন্দ্রেশ্বর শারীরিক প্রতিবন্ধী। বড় ছেলে মারা যাওয়ার পর সংস্থার তরফ থেকে তাঁর পরিবারকে ৮০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। চন্দ্রেশ্বরের দাবি, তার মধ্যে বড় ছেলের স্ত্রী রুবির পরিবারকে তিনি ২৭ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। কিন্তু রুবির পরিবার শর্ত রাখে হয় পুরো টাকা দিতে হবে, না হলে মহাদেবের সঙ্গে রুবির বিয়ে দিতে হবে। পরিবারে অর্থাভাব থাকায় সেই শর্ত মেনে নেন তিনি।
এই ঘটনায় বাল্যবিবাহ, অস্বাভাবিক মৃত্যু সমেত একাধিক ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ন’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।