তুষার ঋষি
মতি নন্দীর উপন্যাসের কোনি যেন বাস্তবের মাটিতে!
একের পর এক কেমোথরাপির যন্ত্রণা ভুলতে চিকিৎসক, মা-বাবার ‘ফাইট জাস্ট ফাইট’ (লড়াই শুধু লড়াই) কথাগুলোই যেন সাহস দিত তুষার ঋষিকে। ঠিক কোনির মতোই।
হাসিমুখে শেষে সেই লড়াই জিতলও রাঁচির বছর ষোলোর কিশোর। সিবিএসই দশম শ্রেণির পরীক্ষায় ৯০ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে সবাইকে দেখিয়ে দিল মৃত্যুর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের ময়দানেও এক ইঞ্চি জমি সে ছাড়তে নারাজ।
বসতে গেলেই কোমরে, পায়ে প্রচণ্ড যন্ত্রণা। শরীরজুড়ে ছড়িয়ে যেত তা। হার মানেনি তুষার। শুয়ে শুয়েই পরীক্ষার পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছে। অস্ত্রোপচার, পর পর ১১টা কেমোথেরাপি। দাঁতে দাঁত চেপে যন্ত্রণা সহ্য করেছে। চূড়ান্ত পরীক্ষায় স্কুলের প্রথম পাঁচ জনের মধ্যে জায়গা দখল করেছে সে।
রাঁচির দিল্লি পাবলিক স্কুলের ছাত্র তুষারের হাড়ের ক্যানসার ধরা পড়ে বছর দেড়েক আগে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাম সিংহ বলেন, ‘চিকিৎসা করানোর জন্য গত বছর দশম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষায় ও বসতে পারেনি। কিন্তু হাল ছাড়েনি কখনও।’’
স্কুল সূত্রে খবর, পায়ে প্রচণ্ড ব্যথা হতো তুষারের। খেলার মাঠে নামতে পারত না। পরীক্ষা করাতে গিয়েই হাড়ে ক্যানসার ধরা পড়ে। রাঁচির ‘রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সে’ অস্ত্রোপচার করা হয়। এখনও তাকে তিন মাসের ব্যবধানে নয়াদিল্লি গিয়ে চিকিৎসা করাতে হয়।
হাল ছাড়েননি ঋতু ও শশীভূষণ অগ্রবালও। শশীভূষণ ঝাড়খণ্ড সরকারের কৃষি দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মী। ঋতু শিক্ষিকা। ছেলে তুষারকে নিয়ে থাকেন মেসরা এলাকায়। ঋতু বলেন, ‘‘পায়ের কিছুটা হাড় বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন ও একটু হাঁটতে পারে। তবে খেলাধুলো নয়।’’
ক্যানসারের হামলায় প্রথম বার সিবিএসই পরীক্ষায় বসতে পারেনি তুষার। তখনই জেদ ধরেছিল— পরীক্ষায় বসবেই। ভাল ফলও করবে।
কিন্তু যত দিন গিয়েছে যন্ত্রণাও আরও বেড়েছে। একের পর এক ১১টা কেমোথেরাপি দিতে হয় তাকে। প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে গিয়েছিল তুষার। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘অস্ত্রোপচারের পর কিছুটা সুস্থ্ হয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে পড়াশোনা করত।’’ তুষারের শ্রেণি-শিক্ষিকা তনুশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘‘গত বছর স্কুলে আসতেই পারেনি। গোটা স্কুল কিন্তু সব সময় ওর পাশে ছিল। তুষারও দেখিয়ে দিল, লড়াইটা কী ভাবে জিততে হয়!’’
তুষার জানিয়েছে, এখানেই থামছে না সে। ‘সায়েন্স’ নিয়ে পড়তে চায়। সবাইকে দেখাতে চায়— বাস্তবটা য়ে কোনও ‘সায়েন্স-ফিকশন’ গল্পের থেকেও বেশি রোমাঞ্চকর!