নরেন্দ্রকে সামনে রেখেই হিন্দুত্ব প্রসারে নামল সঙ্ঘ

সুরটি বেঁধে দিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রবীণ নেতা অশোক সিঙ্ঘল। নরেন্দ্র মোদীর নাম উচ্চারণ না-করে ঘোষণা করলেন এক ‘স্বাভিমানী হিন্দু শাসক’ এসেছেন দিল্লিতে, পৃথ্বীরাজ চৌহানের শাসনের আটশো বছর পর পর। সভাগৃহ তখন ফেটে পড়ছে করতালিতে। অশোক সিঙ্ঘল যখন এই মন্তব্য করছেন, তখন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত মঞ্চে বসে, তাঁর পাশে দলাই লামার মতো ব্যক্তিত্বরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৪
Share:

সুরটি বেঁধে দিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রবীণ নেতা অশোক সিঙ্ঘল। নরেন্দ্র মোদীর নাম উচ্চারণ না-করে ঘোষণা করলেন এক ‘স্বাভিমানী হিন্দু শাসক’ এসেছেন দিল্লিতে, পৃথ্বীরাজ চৌহানের শাসনের আটশো বছর পর পর। সভাগৃহ তখন ফেটে পড়ছে করতালিতে।

Advertisement

অশোক সিঙ্ঘল যখন এই মন্তব্য করছেন, তখন সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত মঞ্চে বসে, তাঁর পাশে দলাই লামার মতো ব্যক্তিত্বরা। আর সামনে নরেন্দ্র মোদী মন্ত্রিসভার সদস্যরা ছাড়া বিশ্বের ৫৪টি দেশ থেকে আসা হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধিরা। গোটা বিশ্বে কী ভাবে হিন্দুত্বের প্রচার করা যায়, সেই উদ্দেশ্য নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে তিন দিনের ‘বিশ্ব হিন্দু কংগ্রেস’।

লোকসভা ভোটের আগে হোক বা পরে, হিন্দুত্বের ধারে কাছে ঘেঁষেননি নরেন্দ্র মোদী। মুখে শুধু বলে গিয়েছেন উন্নয়নের কথা। এমনকী আজও ঝাড়খণ্ডে প্রচারে গিয়ে নরেন্দ্র মোদী যখন উচ্চারণ করেছেন উন্নয়নের মন্ত্র, ঠিক সেই সময়ে দিল্লিতে গোটা সঙ্ঘ পরিবার ঝাঁপিয়ে পড়ল হিন্দুত্বের প্রচার-প্রসারের জন্য সেই নতুন প্রধানমন্ত্রীকে সামনে তুলে ধরেই।

Advertisement

ভোটের আগে এই দ্বিমুখী কৌশল নিয়েই এগিয়েছিল সঙ্ঘ ও বিজেপি। বিশেষ করে গোবলয়ে সঙ্ঘ নেতারা দাপিয়ে প্রচার করেছেন হিন্দুত্বের। পাশাপাশি মোদীর প্রচারে ছিল উন্নয়ন। সেই কৌশলের মূল ভিত্তিতে কোনও বদল এখনও ঘটেনি। কিন্তু মোদী যখন উন্নয়নের মন্ত্রকে সম্বল করে গোটা দেশ ও বিশ্বে ভারতের ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সেই সময় মোদীর পিঠে সওয়ার হয়ে বিশ্বজুড়ে হিন্দুত্বের পুনরুত্থানের মতো বড় কাজে নামল সঙ্ঘ পরিবার। সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতও বললেন, “হিন্দু সমাজের প্রসার কী করে হবে, কী করে হিন্দুরা গোটা বিশ্বকে পথ দেখাবে, সে কাজ করার এটাই উপযুক্ত সময়। গোটা বিশ্বের হিন্দু আজ একজোট হয়েছে। যতই ঝড়-ঝাপ্টা থাকুক, বাধা বিপত্তি আসুক, এই কাজটি করে যেতে হবে। শেষ না-হওয়া পর্যন্ত এ কাজে ক্ষান্তি দেওয়া যাবে না।”

সঙ্ঘ সূত্রের মতে, মোহন ভাগবতরা বিলক্ষণ জানেন, সরকার পরিচালনায় মোদীর বহু বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাঁর পক্ষে এখন হিন্দুত্ব প্রচার সম্ভব নয়। তবে একদা ‘হিন্দু হৃদয়সম্রাট’ থেকে মোদী এখন ‘বিকাশ পুরুষে’ পরিণত হলেও তাঁর প্রশিক্ষিত মননে গাঁথা রয়েছে সঙ্ঘের সনাতন সংস্কৃতি। তাই ভারসাম্য রেখে চলতে হয় তাঁকে। জম্মু-কাশ্মীরে ভোটের আগে ৩৭০ ধারাকে কিছুটা ধামাচাপা দেওয়ার কৌশলেও যে কারণে আপত্তি তোলেনি সঙ্ঘ। কিন্তু মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশে-বিদেশে যে ভাবে নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াচ্ছেন, সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সঙ্ঘও নিজের প্রসার বাড়াতে পারে।

তবে ভাগবত এ কথাও বলেছেন, “হিন্দুদের এই পুনরুত্থান কারও বিরোধিতা করে নয়। আমরা বড় ভাই। নিজেদের জীবন দিয়ে দৃষ্টান্ত মেলে ধরতে হবে দুনিয়ার কাছে। হিন্দু রাষ্ট্র হিসাবে যে কাজ আমাদের কাছে রয়েছে, সে’টিকেই সুসম্পন্ন করতে হবে। বিবেকানন্দ সেই পথ দেখিয়েছেন। শিক্ষা, গণমাধ্যম, অর্থনীতি, রাজনীতি সর্বত্রই এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

কারও বিরোধিতা না-করার কথা মুখে বললেও সঙ্ঘের কর্মসূচির ছাপ যাতে মোদী সরকারে পড়ে, তার ভিত-পাথরটিও আজ পুঁতে দেন সঙ্ঘের নেতারা। অশোক সিঙ্ঘল বলেন, “পাঠ্যসূচিতে সংস্কৃতকে বাধ্যতামূলক করা উচিত। অদূর ভবিষ্যতে এমন আরও অনেক কিছু আপনারা দেখতে পাবেন।” সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে জার্মান ভাষা পড়ানো তুলে দোওয়া নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্য, “একটি বিদেশি ভাষাই যথেষ্ট!” পরে এই বিশ্ব হিন্দু কংগ্রেসের মঞ্চেই মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেন, “জার্মান পড়ানো সংবিধান-বিরোধী। আমি সংবিধানের শপথ নিয়ে মন্ত্রী হয়েছি। সেটা মেনেই চলব!” মোদী সরকারের আর এক মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও আজ অতিথিদের বোঝান, ভারতীয় পরম্পরা মেনেই কী ভাবে প্রধানমন্ত্রী দেশের অর্থনীতির মোড় ঘোরাচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন