ফেসবুক থেকে তথ্য ফাঁস হতে পারে, কিন্তু আধার থেকে হবে না। দাবি অ্যাটর্নি জেনারেলের। —ফাইল চিত্র।
ফেসবুক থেকে তথ্য ফাঁসের প্রেক্ষিতে ফের প্রশ্নের মুখে পড়ল আধার সংক্রান্ত তথ্যের নিরাপত্তা। সরকার বার বারই জানাচ্ছে, আধার সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু ফেসবুক থেকে যে ভাবে বেরিয়ে গিয়েছে ৫ কোটি ইউজারের ব্যক্তিগত তথ্য, তাতে আধারের বিষয়ে সরকারি আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না অনেকেই। এ সবের মাঝেই আজ দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে ফের আশ্বস্ত করল কেন্দ্র। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল সুপ্রিম কোর্টে বৃহস্পতিবার বললেন, ‘‘৫ ফুট পুরু, ১৩ ফুট উঁচু দেওয়ালের আড়ালে সুরক্ষিত রয়েছে আধার সংক্রান্ত তথ্য।’’
নাগরিকদের সম্পর্কে ভৌগোলিক, অবস্থানগত এবং নানা ব্যক্তিগত তথ্য সমন্বিত রয়েছে আধারে। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১২০ কোটি ভারতীয় নাগরিক আধার ব্যবস্থার আওতায় এসেছেন। সুরক্ষা ব্যবস্থায় খামতির জেরে বহু নাগরিকের আধার সংক্রান্ত তথ্য ফাঁসও হয়েছিল। ফাঁস যে হয়েছিল, তা সরকার আদালতে স্বীকারও করে নিয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী কালে আধারের নিরাপত্তা আরও নিশ্ছিদ্র করা হয়েছে বলে সরকারের দাবি।
ফেসবুক, টুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়াও কিন্তু দাবি করে, ইউজারদের ব্যক্তিগত তথ্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। কিন্তু ই-দুনিয়ায় জমা পড়া তথ্যের নিরাপত্তায় যে বড়সড় ফাঁক থেকেই যাচ্ছে, ফেসবুক কাণ্ডে তা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তার পরই আধার নিয়ে ফের আশঙ্কা বেড়েছে। ফেসবুক থেকে ফাঁস হওয়া তথ্যকে কাজে লাগিয়ে যে ভাবে নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা হয়েছে বলে অভিযোগ, আধারের তথ্যকে কাজে লাগিয়ে তেমনই কিছু ঘটানো হবে না তো? এমনই সংশয় দানা বেঁধেছে নানা মহলে।
তথ্য ফাঁস কাণ্ডে ফেসবুককে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রবিশঙ্কর প্রসাদ। তবে সরকার বলছে, আধারে নিশ্চিন্তে ভরসা রাখতে। ছবি: পিটিআই।
ভারত সরকার কিন্তু আজও দাবি করছে, আধার সম্পূর্ণ নিরাপদ। ই-দুনিয়ায় জমা পড়া ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা নিয়ে যে দিন ফের নতুন করে আশঙ্কা জাগছে, সে দিনই সর্বোচ্চ আদালতে আধারের সুরক্ষা নিয়ে সরকারের তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘ইরাকের মিথ্যা ঢাকতেই সরকার দৃষ্টি ঘোরাচ্ছে’
হরিয়ানার মানেসরে যে কমপ্লেক্সে আধার সংক্রান্ত তথ্য রাখা হয়েছে, সেখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা কেমন, তা আদালত নিজেই দেখে নিক। সুপ্রিম কোর্টে বৃহস্পতিবার এমনই আর্জি জানালেন অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল। ভিডিও বা পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে মানেসরের ওই কমপ্লেক্সের নিরাপত্তার সবিস্তার চিত্র আদালতের সামনে তুলে ধরতে ইউআইডিএআই (আধার কর্তৃপক্ষ) প্রস্তুত বলেও বেণুগোপাল জানান।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে ফেসবুকের তথ্য কাজে লাগিয়েছে কংগ্রেস-বিজেপিও!
সে প্রসঙ্গেই তিনি বলেন যে, ৫ ফুট পুরু এবং ১৩ ফুট উঁচু দেওয়ালের আড়ালে নিরাপদে রাখা হয়েছে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য। কে কে বেণুগোপাল সুপ্রিম কোর্টকে বলেন, ইউআইডিএআই-এর সিইও হলেন কম্পিউটার সায়েন্সে পিএইচডি। তাই আদালতের সামনে আধার সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের জবাব তিনি দিতে পারবেন। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘‘মুষ্টিমেয় কয়েকজন গোপনীয়তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বলে সাধারণ মানুষকে দক্ষ এবং স্বচ্ছ পরিষেবা থেকে বঞ্চিত করা যায় না।’’
আধারের নিরাপত্তা কেমন সে সংক্রান্ত প্রেজেন্টেশন দেখতে প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র রাজি হয়েছেন। অন্য বিচারপতিদের সঙ্গে কথা বলে তিনি তারিখ স্থির করবেন বলে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন।