Abhishek Banerjee

Abhishek Banerjee: সবক্ষেত্রে ‘লেজুড়’ হয়ে থাকার দিন শেষ, কংগ্রেসের সঙ্গে সম্পর্ক বুঝিয়ে দিলেন অভিষেক

মুম্বইয়ে যাওয়ার পরে মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস-এনসিপি জোট সরকারের শরিক শিবসেনার নেতা আদিত্য ঠাকরে এবং সঞ্জয় রাউত দেখা করেছিলেন মমতার সঙ্গে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০২১ ০৫:৫৭
Share:

সংসদ চত্বরে গাঁধী মূর্তির পাদদেশে ধর্নায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন কংগ্রেসের রিপুন বরা। ছবি— পিটিআই।

কংগ্রেসের ‘লেজুড়’ হয়ে থাকার আর কোনও প্রশ্নই নেই বলে সংসদীয় দলকে বার্তা দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

আজ দুপুরে দিল্লিতে সংসদীয় দলের সঙ্গে চলতি অধিবেশনের প্রথম বৈঠকটি করেন অভিষেক। সেখানে আগামী দিনে সংসদের ভিতরে ও বাইরে কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক নিয়ে দিশা দেন তিনি। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিষেকের বক্তব্য, যে বিষয়গুলিতে সব দল একমত, সেগুলিতে অবশ্যই কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে সুষ্ঠু সমন্বয় করা হবে। রাজ্যসভায় ১২ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করার ঘটনা নিয়ে সেই সমন্বয় হচ্ছেও গাঁধী মূর্তির সামনে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে কংগ্রেসের ‘লেজুড়’(সেকেন্ড ফিড্‌ল) হয়ে থাকার দিন শেষ। তাঁর বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি-কে বিপুল ভাবে পরাস্ত করার পর, কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিজেপি-বিরোধী আন্দোলন করার প্রয়োজন নেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

বৈঠকে নিজেদের বক্তব্য জানান তৃণমূলের রাজ্যসভা এবং লোকসভার নেতারা, মুখ্য সচেতক, প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় এবং সুব্রত বক্সী। পরে রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, “২০০৯ সাল থেকে কংগ্রেসের সঙ্গে একই কামরায় সফর করার দিন শেষ। সেটা আর হবে না। এ বার যে যার কামরায় যাত্রা করছে। তবে সবার গন্তব্যই এক— বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করা।” তৃণমূল সূত্রে এ কথাও জানানো হয়েছে, চলতি অধিবেশনে রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা মল্লিকার্জুন খড়্গে বা কংগ্রেসের অন্য কোনও শীর্ষ নেতা তাঁর বা তাঁদের কক্ষে বিরোধীদের বৈঠক ডাকলে সেখানে যাবেন না তৃণমূলের কোনও সাংসদ। কিন্তু যদি তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী বৈঠক ডাকে? দলের এক নেতার কথায়, “এটা খুবই ভাল প্রশ্ন এবং প্রস্তাব। এ ব্যাপারে আমরা এখনও মনস্থির করিনি। কারণ এ রকম কোনও বৈঠক ডাকার কথা নেই। ভবিষ্যতে হলে দেখা যাবে।”

Advertisement

রাজনৈতিক সূত্রের মতে, গত কয়েক মাস ধরে এই পথেই এগোচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল এবং তাতে বিজেপিরই সুবিধা হচ্ছে বলে কংগ্রেসের নেতারা অভিযোগ করেছেন। তৃণমূল নেত্রী গোয়া গিয়ে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেছেন, মুম্বইয়ে গিয়ে ইউপিএ-কে ‘অস্তিত্বহীন’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। চলতি শীতকালীন অধিবেশনের প্রথম দিনই কলকাতায় দলের বৈঠকে কংগ্রেস-বিরোধী অবস্থানে আবারও নেতৃত্বের সিলমোহর পড়ে। গতকাল লোকসভায় নাগাল্যান্ড কাণ্ডের প্রতিবাদে কংগ্রেস, বাম, এসপি, এনসি-র সদস্যরা প্রতীকী কক্ষত্যাগ করেন। কিন্তু বিরোধীদের মধ্যে একমাত্র তৃণমূল কক্ষত্যাগ করেনি। বিষয়টি নিয়ে লোকসভার নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “অন্য দলের কর্মসূচিতে থাকলেও, আমাদের কক্ষত্যাগ করার

দলীয় পরিকল্পনা ছিল না। বরং আমরা নিজেদের জায়গায় দাঁড়িয়ে অমিত শাহকে প্রশ্ন করেছি, আপনারা নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের বিষয়টিতে আলোকপাত করুন।”

মুম্বইয়ে যাওয়ার পরে মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস-এনসিপি জোট সরকারের শরিক শিবসেনার নেতা আদিত্য ঠাকরে এবং সঞ্জয় রাউত দেখা করেছিলেন তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে। তবে এ-ও বলেছিলেন, এটি মূলত সৌজন্য সাক্ষাৎ। সেই সঞ্জয় এ দিন দেখা করেন রাহুল গাঁধীর সঙ্গে। বৈঠকের পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বিজেপির বিরুদ্ধে একটি জোট হওয়া প্রয়োজন। আমি রাহুলজিকে বলেছি, আপনি এই জোট গড়ায় উদ্যোগী হন, সামনে থাকুন।” স্বাভাবিক ভাবেই তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, তৃণমূল কংগ্রেস তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জোটের নেতা হিসাবে তুলে ধরছে। তখন কিছুটা রহস্য তৈরি করে রাউতের জবাব, “জোট তৈরি হলে তখন তার নেতা কে হবেন, সে ব্যাপারে আমি কি কিছু বলেছি!” তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, ‘শিবসেনা মহারাষ্ট্রে কংগ্রেসের সঙ্গে সরকার চালাচ্ছে। তাদের রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তৃণমূলের এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।’

কিন্তু রাজনৈতিক সূত্রের মতে, বিষয়টি কোনও রাজ্যের বাধ্যবাধকতার প্রশ্ন নয়। গোটা দেশে অখণ্ড বিজেপি-বিরোধী জোট তৈরির প্রশ্নই এখন বড় কথা। সেখানে ‘বিভিন্ন কামরা’ যদি পরস্পরের প্রতি যুযুধান হয়ে ওঠে, তা হলে তা ‘গন্তব্যে’ (বিজেপিকে হটানো) পৌঁছতে পারবে কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন