Demonetization

নোটবন্দি ফেল মেরেছে? আপনি তবে দেশদ্রোহী!

মনের ডলবি ডিজিটালে বেজেছিল, যাদের করেছ অপমান, ডিমনিটাইজেশনে হতে হবে তাদের সমান। লিখছেন দেবাশিস গুপ্তমনের ডলবি ডিজিটালে বেজেছিল, যাদের করেছ অপমান, ডিমনিটাইজেশনে হতে হবে তাদের সমান। লিখছেন দেবাশিস গুপ্ত

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৭ ১১:১০
Share:

আবার এসেছে ৮ নভেম্বর। এমন কিলোদরে মিম ঘুরছে যে হোয়াটস্যাপ আর ফেসবুকের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। কেউ কেউ নাকি স্বপ্নেও শুনছেন, মিত্রোঁ...। তবে, ডিমনিটাইজেশন ব্যাপারটা নিয্যস খারাপ ছিল, তার থেকে কিচ্ছুটি পাওয়া যায়নি, যাঁরা এমন দাবি করছেন, প্রত্যেকে দেশদ্রোহী। প্রাপ্তির তালিকা মিলিয়ে নিন।

Advertisement

এক, ফ্যাশনদুরস্ত নোট। হোয়াটস্যাপে একটা ছবি পেলাম, যেখানে গত এক বছরে বাজারে আসা চারটে নতুন নোট— ২০০০, ৫০০, ২০০ আর ৫০ টাকার— পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীর চারখানা ছবি, প্রত্যেকটা ছবিতে মোদীর জ্যাকেটের রং এক একটা নোটের রঙে। নোট আগে না কোট আগে, সেই কূট প্রশ্ন বকেয়া থাকুক। কিন্তু, মোদীজি যে মোক্ষম ফ্যাশনসচেতন, তা নিয়ে নিশ্চয়ই কারও সন্দেহ নেই। তিনি হেঁজিপেঁজি রঙের জ্যাকেট পরেন না। অতএব, নোটের ফ্যাশনদুরস্ততা নিয়ে প্রশ্নই নেই। তবে, মোদীজি যে দশলাখি স্যুট পরেছিলেন, যার সর্বাঙ্গে তাঁর নাম লেখা ছিল, সে রকম নোট এক বছরেও পাওয়া গেল না বলে মনে খানিক দুঃখ থেকে যেতেই পারে। আশা ছাড়বেন না, এখনও হাতে সময় আছে। এত বছর ধরে নোটের ওপর যদি গাঁধীর ছবি থাকতে পারে, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার নাম লেখা থাকতে পারে, তবে মোদীজির ছবি আর নামই বা থাকবে না কেন? নোট কি কংগ্রেসের সম্পত্তি নাকি?

দুই, অথবা দেড়ও বলতে পারেন, নোটে জিপিএস। সত্যি নয়, কিন্তু প্রথম ক’দিন ২০০০ টাকার নোটে ন্যানো জিপিএস চিপ থাকার খবরটা যে আনন্দ দিয়েছিল, তা কি ভোলা যায়! মাটির তলায় রাখুন আর তেজষ্ক্রিয় বাক্সে, কালো টাকা থাকলেই স্যাটেলাইটে সংকেত চলে যাবে আর বাড়িতে পৌঁছে যাবে সিবিআই-র’-ইন্টারন্যাশনাল পিস কিপিং ফোর্স-রেড ক্রস, এহেন কল্পনায় মনে দোলা লাগেনি? টেকনোলজিতে ভারত জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে রুমাল রেখে বাইরে চা-সিগারেট খেতে গেছে, ভেবে জাতীয়তাবাদী আনন্দ হয়নি?

Advertisement

তিন, হিংসুটে মনের শান্তি। ভেবে দেখুন, আমার-আপনার বাড়িতে আর কত টাকাই বা ছিল? শিবরাত্রির সলতের মতো গোটাকতক নোট হাতে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে ভাবেননি, পাশের বাড়ির হতচ্ছাড়া প্রোমোটারটার হালুয়া টাইট হচ্ছে? মাছের বাজারে যাকে দেখলে দোকানদার আপনাকে বেমক্কা ইগনোর দিত, সে নোটের বান্ডিল বগলে গুঁজে সরবিট্রেট খাচ্ছে, এমন সম্ভাবনা পুলকিত করেনি? ডাক্তার-স্কুলটিচার-ব্যবসায়ী-পুলিশ, যাদের প্রত্যেককে নির্বিকল্প সমাজবিরোধী বলে জেনে এসেছেন এত দিন, কারণ তাদের হাতে আপনার চেয়ে অনেক বেশি টাকা, এবং প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে আপনার কানটি মুলে আরও টাকা আদায় করার ক্ষমতা, ডিমনিটাইজেশনের গুঁতোয় তারা প্রত্যেকে টেনশনে হাল্লাক হচ্ছে, এমন সাম্যবাদী ফুর্তির কথা চিন্তা করতে পেরেছিলেন কখনও? মনের ডলবি ডিজিটালে বেজেছিল, যাদের করেছ অপমান, ডিমনিটাইজেশনে হতে হবে তাদের সমান।

চার, সহনাগরিকের সঙ্গে মেলামেশার সুযোগ। এই আপনি-কোপনি টুবিএইচকে-র জীবনে যে অন্যরাও আছে, এই কথাটি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য ডিমনিটাইজেশনকে লাখ সেলাম। ব্যাঙ্কের লাইনে দেখা হয়ে গিয়েছিল ফুটবল খেলার বন্ধুর সঙ্গে। ব্লাডসুগারের খবর নিতে নিতেই আ়ড়চোখে দেখে নিয়েছিলেন, ক্লাস নাইনে পড়ার সময় যাকে দেখলে হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যেত কয়েক সেকেন্ডের জন্য, তার মুখে এখন রিঙ্কল, আর তার বরের ভুঁড়ি আপনার চেয়েও ছ’ইঞ্চি বেশি। সত্যি কথা বলতে, দাম্পত্য অশান্তি কমানোর ক্ষেত্রেও ডিমনিটাইজেশনের মস্ত ভূমিকা ছিল। এটিএম-এর লাইনে দাঁড়িয়ে ধৈর্য নামক বস্তুটি স্বভাবে ফিরে আসায় স্বামী বা স্ত্রীকে সহ্য করা অনেক সহজ হয়েছে, একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় নাকি এই কথাটা একেবারে প্রশ্নাতীত ভাবে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। লিঙ্ক খুঁজে পেলেই আপডেট দেব, কথা দিলাম।

এত প্রাপ্তি কি ফেলনা? এর মধ্যে যদি লাইনে দাঁড়িয়ে মারা যাওয়া মানুষদের কথা টানেন, রুজি হারানো শ্রমিকের সন্তানের স্কুলে যাওয়া বন্ধ হওয়ার উল্লেখ করেন, ঝিমিয়ে প়ড়া অর্থনীতির প্রসঙ্গ মনে করিয়ে দেন, তবে একটাই উত্তর— কোল্যাটারাল ড্যামেজ বলেও তো একটা কথা আছে, না কি? অনেক ভালর জন্য একটু খারাপ মেনে নিতে পারবেন না? অচ্ছে দিন মানে কি ইয়ার্কি নাকি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন