উমর মহম্মদ ওরফে উমর নবি। দিল্লিতে বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া গাড়ির চালক ছিলেন তিনি। — ফাইল চিত্র।
লালকেল্লার কাছে গাড়িতে বিস্ফোরণের আগে পার্কিংয়ে বসেই বিভিন্ন উপকরণ মিলিয়ে তৈরি করা হয়েছিল বোমা। সেটি বানিয়েছিলেন দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডের মূলচক্রী তথা চিকিৎসক উমর মহম্মদ ওরফে উমর নবি নিজেই। সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’ সূত্রে খবর, লালকেল্লার কাছে বিস্ফোরণকাণ্ডের তদন্ত এমনটাই উঠে এসেছে।
গত ১০ নভেম্বর সন্ধ্যায় দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে একটি ‘হুন্ডাই আই২০’ গাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। ওই গাড়ির চালক ছিলেন উমর। পরে আশপাশের বেশ কিছু সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রকাশ্যে আসে। তাতে দেখা যায় বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া গাড়িটি লালকেল্লার অদূরে একটি পার্কিংয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিল। বিস্ফোরণের দিন দুপুরে ওই পার্কিংয়ে প্রবেশ করেছিল গাড়িটি। বেরিয়েছিল সন্ধ্যায়, বিস্ফোরণের ঠিক আগে। এই দীর্ঘ সময় পার্কিংয়ে কী করছিল গাড়িটি, তা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছিল। প্রশ্ন জেগেছিল তদন্তকারীদের মনেও। এ বার জানা গেল, পার্কিংয়ে বসেই বিস্ফোরকটি তৈরি করছিলেন উমর।
সিসি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে, বিস্ফোরণের দিন গাড়িটি দুপুর ৩টে ১৯ মিনিটে লালকেল্লার অদূরে সুনহেরি মসজিদ কাছে একটি পার্কিংয়ে প্রবেশ করেছিল। সন্ধ্যা ৬টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত সেখানেই দাঁড়িয়ে ছিল। তার পরে ওই পার্কিং থেকে বেরোয় গাড়িটি। পার্কিং থেকে বার হওয়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই সন্ধ্যা ৬টা ৫২ মিনিটে লালকেল্লার কাছে গাড়িটিতে বিস্ফোরণ হয়।
দিল্লিতে গাড়ির মধ্যে বিস্ফোরণ যে কোনও সাধারণ ঘটনা নয়, তা ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। ওই বিস্ফোরণকে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বলে ঘোষণা করেছে নয়াদিল্লি। সম্প্রতি উমরের একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। তদন্তকারী সূত্রে জানা যায়, বিস্ফোরণের অন্তত এক সপ্তাহ আগে ভিডিয়োটি রেকর্ড করা হয়েছিল। বিস্ফোরণের আগে চলতি মাসের শুরুর দিকে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাড়িতে গিয়েছিলেন উমর। ওই সময়েই মোবাইলটি নিজের দাদাকে দিয়ে দেন তিনি। পরে উমরের দাদার কাছ থেকে মোবাইলটি বাজেয়াপ্ত করেন তদন্তকারীরা।
প্রকাশ্যে আসা ওই ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, সাধারণ বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে আত্মঘাতী বোমার কতটা ফারাক, কেন আত্মঘাতী বোমারু বানানো হয়, খুব সংক্ষেপে সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন উমর (যদিও ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)। ‘টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’র প্রতিবেদন অনুসারে, দিল্লিতে বিস্ফোরণের কিছু দিন আগেই জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামার বাড়িতে গিয়েছিলেন উমর। নিজের মোবাইল সেখানেই রেখে আসেন তিনি। পরে উমরের দাদার কাছ থেকে মোবাইলটি পাওয়া যায়।
সংবাদমাধ্যম ‘এনডিটিভি’র প্রতিবেদন অনুসারে, বিস্ফোরণের ঠিক এক সপ্তাহ আগে পুলওয়ামার বাড়িতে গিয়েছিলেন উমর। ওই সময়েই নিজের একটি ফোন দাদাকে দিয়ে আসেন তিনি। প্রথম দিকে সন্দেহজনক কিছু মনে না-হলেও দিল্লিতে বিস্ফোরণে উমরের নাম উঠে আসার পরে কিছুটা ঘাবড়ে যান তাঁর দাদা। সেই ভয়েই পুলওয়ামার বাড়ির কাছেই একটি পুকুরে ফেলে দেন মোবাইলটি। পরে তদন্তকারীরা দেখেন উমরের দু’টি মোবাইলের একটির সর্বশেষ ‘লোকেশন’ ছিল পুলওয়ামায়। সেই সূত্র ধরেই পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন আধিকারিকেরা। তাতেই পাওয়া যায় মোবাইলের হদিস।