কাউকে টাকা দিতে বলা হয়নি। যাঁরা দিচ্ছেন, তাঁরা যেচেই দিতে চেয়েছিলেন। সেনা উন্নয়ন তহবিলের জন্য কারও কাছ থেকে ঘাড় ধরে টাকা নেওয়া হয় না। সরকার কোনও আর্থিক বোঝাপড়ার শরিক নয়।
প্রথম দু’লাইন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য। পরের ‘টাটকা’ দু’লাইন আজই বলেছেন যথাক্রমে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী। পাশাপাশি ফেলে দেখা যাচ্ছে, দেবেন্দ্র ফডনবীস, মনোহর পর্রীকর, বেঙ্কাইয়া নায়ডু— তিন দুঁদে বিজেপি নেতার কথাই এখন কার্যত এক সুরে বাঁধা।
সৌজন্যে: ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’, একটি হাই প্রোফাইল বৈঠক এবং পাঁচ কোটি টাকা।
শনিবার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর বাসভবনে ‘অ্যায় দিল...’-এর পরিচালক কর্ণ জোহর-সহ প্রযোজকদের একটি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন রাজ ঠাকরে। বৈঠকের পর এমএনএস প্রধান যখন সগর্বে জানাচ্ছেন যে, পাক অভিনেতা নিয়ে কাজ করা প্রযোজকেরা ‘প্রায়শ্চিত্ত’ হিসেবে সেনা উন্নয়ন তহবিলে ৫ কোটি টাকা করে দান করবেন— তখন থেকেই ফডনবীসের অস্বস্তির শুরু। প্রথমে রাজ্য কংগ্রেস তাঁর এই বৈঠকে মধ্যস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। নিন্দায় ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ এবং বিশিষ্টদের একটা বড় অংশ। অভিনেত্রী শাবানা আজমি টুইট করেন, ‘দেশপ্রেম কিনেছেন মুখ্যমন্ত্রী’। এমনকী সেনা অফিসারদের একাংশও বলে দেন, তাঁরা কারও কাছে ভিক্ষে করেন না।
এই অবস্থায় ফডনবীস বলেছিলেন, সেনা তহবিলে দানের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মুকেশ ভট্টদের প্রোডিউসার্স গিল্ড। রাজ ঠাকরে তা মেনে নেন। গত কালও এক সাক্ষাৎকারে ফডনবীস দাবি করেছেন, তিনি কাউকে টাকা দিতে জোর করেননি। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘বৈঠকে কর্ণ জোহর বলেন, তিনি শহিদ জওয়ানদের পরিবারের কল্যাণে ৫ কোটি টাকা দিতে চান। আমি স্পষ্ট বলে দিই, এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। তবু আপনি যদি দেশভক্তি দেখাতে চান, সেনা উন্নয়ন তহবিল রয়েছে। সেখানে দান করতে পারেন।’’
এই যুক্তিতে অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। অনেকেই বলছিলেন, পাক অভিনেতা ফাওয়াদ খানকে ছবিতে নেওয়ায় কার্যত ৫ কোটির ‘তোলা’ দিতে হচ্ছে কর্ণকে। এর পরেই আজ দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া। নৌবাহিনীর এক অধিবেশনের ফাঁকে পর্রীকর জানান, শহিদ সেনাদের পরিবারকে সাহায্য করতে চেয়ে সারা দেশ থেকে আবেদন আসে। তাই একটি কেন্দ্রীয় তহবিল তৈরি হয়েছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কথায়, ‘‘সেখানে (তহবিলে) কেউ স্বেচ্ছায় দান করতেই পারেন। এটা কারও ঘাড় ধরে টাকা চাওয়ার ব্যাপার নয়। আমরাও সেটাকে ভাল চোখে দেখি না।’’
আর বেঙ্কাইয়া বলেছেন, ‘‘এটা (টাকা দেওয়া) একটা ভুল প্রস্তাব। আমরা ওঁদের এই প্রস্তাব সমর্থন করি না। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি এই প্রস্তাবের শরিক ছিলেন না। সেটা দিয়েছিল অন্য এক পক্ষ।’’
কারও নাম করেননি বেঙ্কাইয়া। ফলে ‘ওঁদের’ বা ‘পক্ষ’ বলতে তিনি কাকে বুঝিয়েছেন, জল্পনা রয়েছে তা নিয়ে। ঠিক যে ভাবে নাম না করে পাকিস্তানকেও একহাত নিয়েছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘প্রতিবেশীকেও ভাল প্রতিবেশীর মতো আচরণ করতে হবে।’’ এই টানাপড়েনের মধ্যেই এ দিন পাকিস্তানে ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটরদের সংগঠন ভারতীয় ছবি না-দেখানোর সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কর্ণের ‘অ্যায় দিল...’ এবং অজয় দেবগণের ‘শিবায়’, দু’টি ছবির ক্ষেত্রেই তা সুখবর।
কিন্তু মন্ত্রীদের প্রতিক্রিয়া প্রশ্নটা রেখেই দিচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কি ‘অ্যায় দিল...’ বিতর্ক থেকে দূরত্ব বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি?