দাদরি-হত্যা

ফায়দা লুটতে আসরে নামল সব দলই

রবিবার সকাল থেকেই দিল্লির অশোক রোডে লোহার ব্যারিকেড। গাড়ি তো দূরের কথা, স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া অন্য কারও পায়ে হেঁটে ঢোকাও নিষেধ। ওই রাস্তাতেই বিজেপির সদর দফতরের সামনে মোতায়েন বিরাট পুলিশ বাহিনী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন আখলাকের পরিবার। ছবি: পিটিআই।

রবিবার সকাল থেকেই দিল্লির অশোক রোডে লোহার ব্যারিকেড। গাড়ি তো দূরের কথা, স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়া অন্য কারও পায়ে হেঁটে ঢোকাও নিষেধ। ওই রাস্তাতেই বিজেপির সদর দফতরের সামনে মোতায়েন বিরাট পুলিশ বাহিনী।

Advertisement

কী ঘটল?

পুলিশ সূত্রে জানা গেল, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চলছে, রবিবার বেলা একটায় বিজেপি-র সদর দফতরের সামনে বেশ কিছু সমাজকর্মী, ছাত্রছাত্রী মিলে পিকনিকের আয়োজন করেছেন। যে পিকনিকের প্রধান মেনু গোমাংস। উদ্দেশ্য, উত্তরপ্রদেশের দাদরি এলাকার বিসারায় গোমাংস খাওয়ার গুজব রটিয়ে বছর পঞ্চাশের মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে খুনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। প্যাটেল চক মেট্রো স্টেশনে জমায়েত হয়ে বিজেপি অফিসের সামনে যাওয়ার কথা ছিল বিক্ষোভকারীদের। অশোক রোড পর্যন্ত পৌঁছতে হল না। তার আগেই বিক্ষোভকারীদের আটক করে তুলে নিয়ে গেল পুলিশ।

Advertisement

রবিবারের ওই অভিনব বিক্ষোভে বাধা পড়লেও, যত সময় এগোচ্ছে, বিসারার ঘটনা নিয়ে মুখ খোলার জন্য চাপ বাড়ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপরে। একই সঙ্গে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার প্রতিযোগিতাও অব্যাহত।

উত্তরপ্রদেশের বিসারায় গোমাংস খাওয়ার গুজব রটিয়ে বছর পঞ্চাশের মহম্মদ আখলাককে পিটিয়ে খুনের পর থেকেই ওই গ্রামে রাজনীতিকদের আনাগোনা শুরু হয়েছিল। স্থানীয় সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী মহেশ শর্মা, আসাদুদ্দিন ওয়েইসি, অরবিন্দ কেজরীবাল থেকে রাহুল গাঁধী—কেউই বাদ যাননি। আজ সেখানে হাজির হয়েছেন বিজেপির বিতর্কিত বিধায়ক সঙ্গীত সোম। যাঁর উস্কানিমূলক বিবৃতি থেকেই লোকসভা নির্বাচনের আগে মজফ্‌ফরপুরে গোষ্ঠী সংঘর্ষের শুরু বলে অভিযোগ। বিসারায় গিয়েই সঙ্গীত অভিযোগ তুলেছেন, সমাজবাদী পার্টির সরকার সংখ্যালঘু তোষণ করছে। উল্টো দিকে নিরীহদের ফাঁসানো হচ্ছে। গত কালই ওই খুনের ঘটনায় মূল দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। যার মধ্যে এক জন স্থানীয় বিজেপি কর্মী সঞ্জয় রানার ছেলে। সে-ই মন্দিরের পুরোহিতের মাধ্যমে আখলাকের বাড়িতে গোমাংস রাখার কথা রটিয়েছিল বলে অভিযোগ পুলিশের। সঙ্গীতের ইঙ্গিত সে দিকেই।

আবার আজই লখনউতে মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব আখলাকের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছেন। আগেই রাজ্য সরকার আখলাকের পরিবারের জন্য ২০ লক্ষ টাকার আর্থিক সাহায্য ঘোষণা করেছিল। আজ তা বাড়িয়ে ৩০ লক্ষ টাকা করেছেন তিনি। আখলাকের তিন ভাইকেও ৫ লক্ষ টাকা করে সাহায্য দেবে অখিলেশ সরকার।

বিজেপি নেতারা বিসারার ঘটনা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা চালিয়ে গেলেও আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ মন্তব্য করেছেন, ‘‘ঘটনাটা দুঃখজনক। কিন্তু এ নিয়ে রাজনীতি করা ঠিক নয়। এই ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগানোও উচিত নয়।’’

রাজনাথ যা-ই বলুন, তাতে বিরোধীরা সন্তুষ্ট নয়। বিরোধীদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী মুখ খুলুন। গত কাল রাহুল গাঁধী দাবি তুলেছিলেন, বিসারা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মৌনব্রত ভাঙার এটাই সময়। একই দাবি তুলেছেন আম আদমি পার্টি, বামপন্থী দলের নেতারাও। তাঁদের অভিযোগ একটাই। মোদী জমানায় কট্টরপন্থীদের রমরমা বেড়েছে। ফলে ধর্মীয় অহিষ্ণুতার রেখচিত্রও ঊর্ধ্বমুখী। বিহার, তার পরে দেড় বছরের মাথায় উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে ভোটের মেরুকরণ করতে চাইছে বিজেপি।

সমাজবাদী পার্টির নেতাদের দাবি, বিসারার ঘটনার পিছনে বিজেপি-র হাত রয়েছে। বিজেপি কর্মীর ছেলেকে গ্রেফতার উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও মানতে রাজি নয় অখিলেশ সরকার। সরকারের দাবি, হোমগার্ডের এক কনস্টেবলকেও আটক করা হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। গ্রামের লোককে উস্কানি দেওয়ার পিছনে তারও হাত ছিল বলে অভিযোগ। রাজ্য পুলিশের দাবি, গ্রামের মানুষকে উস্কে দিয়েই আখলাকের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বিজেপি কর্মী সঞ্জয় রানার ছেলেই বিশাল গ্রামে সভা করে অন্যদের খেপিয়ে তোলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন