‘ব্রিটিশকে আর কত দিন দোষ দেওয়া হবে’, নতুন ইতিহাস লেখার ডাক অমিত শাহর

প্রতি পদে নেহরু-গাঁধী পরিবারকে দোষারোপ করে আসার পরে ইতিহাসচর্চায় কার প্রতি দোষারোপ এড়াতে বলা হচ্ছে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ ০২:১৩
Share:

অমিত শাহ।

বিনায়ক দামোদর সাভারকরের অবদান স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভারতের ইতিহাস নতুন করে লেখার কথা বললেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ‘নতুন’ ইতিহাসের চরিত্র কী রকম হওয়া উচিত, তা-ও বলে দিলেন— ‘‘ভারতের ইতিহাস ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে লিখতে হবে, কিন্তু কাউকে দোষারোপ করার দরকার নেই। বিতর্কে না জড়িয়ে কালজয়ী সত্যকে তুলে ধরতে হবে।’’

Advertisement

প্রতি পদে নেহরু-গাঁধী পরিবারকে দোষারোপ করে আসার পরে ইতিহাসচর্চায় কার প্রতি দোষারোপ এড়াতে বলা হচ্ছে? অমিত খোলসা করে বলেছেন, ‘‘কত দিন আর ব্রিটিশকে দোষ দেওয়া হবে?’’

বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ে গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্ত বিষয়ক দু’দিনের আলোচনাচক্র আজ উদ্বোধন করেন অমিত। সেখানেই এই নয়া ইতিহাসচর্চার কথা বলেন তিনি। সম্প্রতি মহারাষ্ট্র বিজেপির তরফে সাভারকরকে ভারতরত্ন দেওয়ার দাবি উঠেছে। এ দিন অমিতও বললেন, ‘‘সাভারকর না থাকলে ভারতের ছেলেমেয়েরা ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহকে ‘ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম’ বলে জানত না। বরং ব্রিটিশদের চোখ দিয়ে স্রেফ বিদ্রোহ বলেই পড়ত।’’

Advertisement

সাভারকর যে ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের আখ্যা দিয়েছিলেন, এ তথ্য ইতিহাসে অস্বীকৃত নয়। ফলে অমিত নতুন কী বললেন আর কেনই বা নতুন ইতিহাস লেখার ডাক দিলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক শিবিরে, শিক্ষা জগতেও। প্রশ্ন উঠছে, মহাবিদ্রোহকে যদি ব্রিটিশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রাম হিসেবে পড়তে হয়, তা হলে ব্রিটিশকে দোষ না দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে কেন? সে কি সাভারকর পরে ব্রিটিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি আদায় করেছিলেন বলে?

ইতিহাসবিদ দীপেশ চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘বোঝাই যায় সাভারকরকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য ভারসাম্য তৈরির চেষ্টা হচ্ছে। এক দিকে বলা হচ্ছে ব্রিটিশদের বেশি কটূক্তি না করলেও চলবে। অন্য দিকে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রসঙ্গ তোলা হচ্ছে।’’ সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির মন্তব্য, ‘‘দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে যাদের কোনও অবদান নেই, তাদের কাছে এখন ইতিহাস শিখতে হবে! ব্রিটিশের সঙ্গে সুর মেলাতে এবং ক্ষমাপ্রার্থনা করতে যিনি অগ্রণী, সেই সাভারকরকে বিজেপি ভারতরত্ন দিতে চাইছে।’’

প্রশ্ন আরও উঠেছে যে, এত দিন পরে ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাস লেখার কথা বলার অর্থ কী? এত দিন কি ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাস লেখা হয়নি? দীপেশের মন্তব্য, ‘‘অমিত আসলে জানেনই না কোন প্রসঙ্গে উনি কথা বলছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশদের কোন চোখে দেখা হবে, কী হবে তাদের মূল্যায়ন, এ নিয়ে বহু আলোচনা হয়ে গিয়েছে। ওঁরা নতুন করে ইতিহাস লেখার কথা বলছেন, বামপন্থীদের নিন্দা করছেন। করতেই পারেন। কিন্তু সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ লোকেরা যে ইতিহাস লিখছেন, তাতে ইরফান হাবিব, রোমিলা থাপারদের যুক্তি তথ্য দিয়ে খণ্ডন করা হচ্ছে, এমনটা এখনও দেখতে পাইনি।’’ সিপিএমের পলিটবুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের বক্তব্য, ‘‘ভারতীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ইতিহাস লেখা বলতে শাহেরা আসলে হিন্দুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গিকে বোঝাতে চান। ওঁরা ভারতকে একস্তরীয় সমাজ মনে করেন। যার সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন