সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যাপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
গত কাল আঞ্চলিক দলগুলির নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, লোকসভা ভোটের পরে তাঁর প্রস্তাবিত ফেডারাল ফ্রন্ট সরকার গড়ার মতো অবস্থায় এলে কংগ্রেস তাকে বাইরে থেকে সমর্থন করুক— এমনটাই চান তিনি। আজ ১০ জনপথের বৈঠকে সনিয়া গাঁধী তৃণমূল নেত্রীকে পাল্টা বললেন, বিজেপি-কে হঠাতে হলে দেশের সব থেকে বড় বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতৃত্বে সবাইকে এক সঙ্গে লড়তে হবে। তিনি চান মমতাও সেই জোটে সামিল হোন। আর রাহুল গাঁধী সম্পর্কে মমতার যতই ছুঁৎমার্গ থাক, ভবিষ্যতে জোট বা আসন সমঝোতা নিয়ে আলোচনা যে কংগ্রেস সভাপতির সঙ্গেই করতে হবে, সেটাও আজ তাঁকে বুঝিয়ে দিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কিন্তু রাহুলের নেতৃত্বে মমতার আপত্তি এ দিনও স্পষ্ট হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবির। আজ সনিয়ার সঙ্গে মমতার বৈঠকের কয়েক ঘণ্টা আগেই দলিত নির্যাতন রদ আইন লঘু করার অভিযোগে বিরোধী দলগুলির একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে। সেই দলের নেতৃত্ব দেন রাহুল। তৃণমূলের ১২ জন দলিত সাংসদ থাকা সত্ত্বেও প্রতিনিধি দলে তাদের কেউ ছিলেন না। মমতার বক্তব্য, এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।’’ কিন্তু কংগ্রেস সূত্রের দাবি, যে হেতু রাহুল নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাই কোনও প্রতিনিধি পাঠাতে চায়নি তৃণমূল।
রাহুলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেসের নেতৃত্বে ভোটে লড়তে নারাজ মমতা চাইছেন, ২০১৯-এর ভোটের পরে এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হোক যেখানে তাঁর প্রস্তাবিত ফেডারাল ফ্রন্টের আসন সংখ্যা কংগ্রেসের থেকে বেশি হবে এবং কংগ্রেস ফ্রন্ট সরকারকে সমর্থন করতে বাধ্য হবে। যেমনটা হয়েছিল চন্দ্রশেখর, এইচ ডি দেবগৌড়া, বা আই কে গুজরালের সরকার গড়ার সময়।
সেই কারণে আগেভাগে কংগ্রেস সঙ্গে জোট না করার পক্ষপাতী তিনি। তাঁর প্রস্তাব, ‘‘আমি চাই, যে রাজ্যে যে দল শক্তিশালী, সেখানে সেই দলের প্রার্থী বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বে। বাকি বিরোধী দলগুলি তাকে সমর্থন করুক। আজ সনিয়াজিকে এ কথা জানিয়েছি। বিজেপির শাসন শেষ হওয়া দরকার। একের বিরুদ্ধে এক লড়াই হলে সেটা একশো ভাগ নিশ্চিত।’’
একের বিরুদ্ধে এক সূত্র ব্যাখ্যা করে মমতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘কর্নাটকে কংগ্রেস শক্তিশালী। আমি চাই সে রাজ্যে কংগ্রেসই জিতুক। সে রকমই মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ার বিহারে লালুপ্রসাদ, উত্তরপ্রদেশে মায়াবতী-মুলায়ম ঠিক করুন, তাঁদের দল থেকে কাকে প্রার্থী করা হবে।’’
কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি-বিরোধী জোট গঠন করা যে বাস্তবোচিত নয়, তা গত কালই মমতাকে বলেছিলেন শরদ পওয়ার, ফারুক আবদুল্লার মতো আঞ্চলিক দলগুলির নেতারা। আজ মমতার সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির তিন বিক্ষুব্ধ নেতা শত্রুঘ্ন সিন্হা, যশবন্ত সিন্হা ও অরুণ শৌরী। তাঁরাও মমতাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, মোদী বিরোধী জোটে কংগ্রেসকেও চাইছেন তাঁরা।
পাশাপাশি কংগ্রেস নেতৃত্বের তরফে এ দিন বলা হয়, বাইরে থেকে কংগ্রেসের সমর্থনে তৈরি যে সব সরকারের উদাহরণ তৃণমূল দিচ্ছে, সেগুলির কোনও স্থায়িত্ব ছিল না। তা ছাড়া, এই সূত্র মেনে নেওয়ার অর্থ বেশ কিছু রাজ্যে কংগ্রেসের অস্তিত্বই বিপন্ন হওয়া। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, তামিলনাড়ু, বিহার, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস তেমন শক্তিশালী নয়। কিন্তু সেখানেও তাদের কয়েকটা লোকসভা আসন আছে। মমতার সূত্র মানলে ওই সব আসনে কংগ্রেস প্রার্থীই দিতে পারবে না। বাস্তবে সেটা কতটা সম্ভব, প্রশ্ন কংগ্রেস নেতাদের।
আরও পড়ুন: পিসি-ভাইপোর স্বপ্ন, বিরোধী তির
তবে রাহুল-প্রশ্নে টানাপড়েন থাকলেও বিজেপির মোকাবিলায় মমতাকে যে সঙ্গে রাখা জরুরি, তা বিলক্ষণ বুঝছে কংগ্রেস। কারণ, বিরোধী ভোট ভাগাভাগি হলে সুবিধা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদেরই। কিন্তু রাহুলের নেতৃত্ব দুর্বল হয়, এমন কোনও অবস্থানও দলের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই আজ সনিয়ার সঙ্গে মমতার বৈঠকের সময় রাহুল উপস্থিত না থাকলেও তৃণমূল নেত্রীকে সনিয়া বলেছেন, ‘‘আমি আপনার সব কথা কংগ্রেস সভাপতিকে জানাব।’’