মাত্র এক দিন আগে গুজরাত ক্যাডারের আইএএস অচলকুমার জ্যোতিকে পরবর্তী মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করল, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের প্রক্রিয়া সব চেয়ে স্বচ্ছ হওয়া উচিত। কারণ অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোট করানো নির্বাচন কমিশনারদেরই দায়িত্ব। কাজেই তাঁদের রাজনৈতিক ভাবে নিরপেক্ষ হওয়া জরুরি।
নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের জন্য তাই পৃথক আইন থাকা উচিত বলেও আজ যুক্তি দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি জে এস খেহর। আইন না হওয়া পর্যন্ত শীর্ষ আদালতই নিয়ম তৈরি করে দেবে কি না, তা-ও কেন্দ্রের কাছে জানতে চেয়েছেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদী যখন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, সে সময়ে জ্যোতি ছিলেন গুজরাত সরকারের মুখ্যসচিব। আজ সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য জ্যোতি বা অন্য কোনও নির্বাচন কমিশনারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি। বরং বলেছে, এত দিন রাজনীতি-নিরপেক্ষ পদ্ধতিতেই নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ হয়েছে। যাঁরা নির্বাচন কমিশনার হয়েছেন, তাঁরা সকলেই ন্যায়পরায়ণতার সঙ্গে অসাধারণ কাজ করেছেন।
আরও পড়ুন: সঙ্ঘের চাপে আটকে বিচারপতিদের নিয়োগ
কিন্তু তা সত্ত্বেও সংবিধানের প্রত্যাশা অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে সংসদের তৈরি আইন থাকা উচিত বলে সুপ্রিম কোর্টের মত। যে আইনে বলা থাকবে, নির্বাচন কমিশনারের যোগ্যতা কী হবে।
প্রধান বিচারপতি খেহর বলেন, ‘‘কাদের প্রাথমিক ভাবে বাছাই করা হবে? কারা সেই বাছাই করবে? কী ভাবে বাছাই হচ্ছে, সেই নিয়মটা দেখানোর মতো কিছু নেই। এমনকী সিবিআই অধিকর্তা নিয়োগেরও প্রক্রিয়া ঠিক হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশনারের ক্ষেত্রে তা হয়নি।’’
কেন্দ্রের কোনও সরকারই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের স্বচ্ছ ও সঠিক প্রক্রিয়া তৈরি করতে পারেনি বলে অভিযোগ করে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন অনুপ বারানওয়াল। তাঁর আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ যুক্তি দেন, মন্ত্রিসভার সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। ফলে শাসক দলের কাছে নিজের বিশ্বস্ত লোককেই কমিশনের পদে বসানোর সুযোগ থাকে।
কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল রঞ্জিত কুমার যুক্তি দেন, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা যোগ্য ব্যক্তিদের নাম ঠিক করেন। প্রধানমন্ত্রী নিজে গোটা প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকেন। তা ছাড়া আইন হবে কি হবে না, তা সংসদই ঠিক করবে। যা শুনে বিচারপতিরা বলেন, সংসদ আইন করবে, এটাই প্রত্যাশিত। তা না হলে আদালতই কি নিয়মবিধি ঠিক করে দেবে! দু’মাস পরে এ বিষয়ে ফের শুনানি হবে জানান প্রধান বিচারপতি খেহর। তিনি অবশ্য অগস্টেই অবসর নেবেন। তাই বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ এই মামলা শুনবে।