রসবোধে উজ্জ্বল এক বাগ্মী বাজপেয়ী

একটু স্তব্ধতার পরে বলেন, ‘‘সোমনাথজি, আপনি বোলপুর থেকে এসেছেন। লেকিন— আভি আপকো বোলনা নেহি, জাদা শুননা পড়েগা!’’

Advertisement

অগ্নি রায়

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০৩:৫৮
Share:

অটলবিহারী বাজপেয়ী। —ফাইল চিত্র।

সদ্যপ্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় স্পিকার পদে নির্বাচিত হওয়ার পরে লোকসভায় প্রত্যেকটি দলের নেতারা সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিচ্ছিলেন তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে। বিরোধী বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। একটু স্তব্ধতার পরে বলেন, ‘‘সোমনাথজি, আপনি বোলপুর থেকে এসেছেন। লেকিন— আভি আপকো বোলনা নেহি, জাদা শুননা পড়েগা!’’

Advertisement

গোটা সভা সে দিন হাসিতে ফেটে পড়েছিল! স্পিকারের চেয়ারে বসে হেসে ফেলেছিলেন সোমনাথবাবুও।

লোকসভার আলোচনা-বিতর্কে বাজপেয়ী মানেই বক্তৃতার ফাঁকে ফোঁকরে কবিতার মণিমুক্তো। বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা, ঝকঝকে শ্লেষ। সর্বোপরি মেধাবী ভাষাপ্রয়োগ। ১৯৫৭ সালে প্রথম বার লোকসভায় এসেই তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন তাবড় নেতাদের। এক বিদেশি অতিথির সঙ্গে তাঁকে আলাপ করাতে গিয়ে অমোঘ ভবিষ্যৎবাণীটি করে বলেছিলেন জওহরলাল নেহরু— ‘এই ছেলেটি এক দিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে!’’

Advertisement

শুধু মাত্র সংসদ নয়, বাইরেও তাঁর রসবোধের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন তাঁর সতীর্থ এবং বিরোধী নেতারা। তখন সদ্য এনডিএ শাসনের অবসান ঘটেছে। প্রথম বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মনমোহন সিংহ। মুম্বইয়ে বিজেপির তিন দিনের জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকে স্লোগান উঠল— ‘আগলা বারি/ অটলবিহারী!’

বক্তৃতায় খাস মরাঠিতেই ওই স্লোগানের জবাব দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। বলেছিলেন, ‘আটা বারি নারো, পুস্কাল ঝালে।’ যার অর্থ— ‘আর পরের বার নয়, যথেষ্ট হয়েছে!’ বৈঠকের শেষ দিনে ঠাট্টা করে নেতা -কর্মীদের বলেছিলেন, ‘আমি দেখছি অনেকেরই মুখ চুন হয়ে গিয়েছে! সম্ভবত মরাঠিতে করা আমার মন্তব্যের জন্যই। একটা কথা তো বুঝতে হবে, প্রায় ছ’বছর পর প্রধানমন্ত্রীর চাকরি করার পরে এই সাত দিন হল ছুটি পেয়েছি!’’ শুধু রসবোধ নয়, অনেক কঠিন রাজনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিও সামাল দিয়েছে তাঁর অসামান্য বাগ্মিতা। জনতার মন ঘুরিয়ে নিজের দিকে টেনে আনতে তাঁর বক্তৃতার কোনও জুড়ি ছিল না। পোখরানে পরমাণু পরীক্ষার পর সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি যা বলেছিলেন তা আজ পর্যন্ত ভারতের পরমাণু-নীতির মূল কথা। বুঝিয়েছিলেন, তিন তিন বার আক্রমণ সহ্য করেছে ভারত। ফলে জাতীয় স্বার্থের জন্য, দেশের নিরাপত্তার জন্য এই পরীক্ষা প্রয়োজন ছিল। অননুকরণীয় ভঙ্গিতে জানিয়েছিলেন, ‘‘অনেকেই জানতে চাইছেন, লাহৌর বাসযাত্রা এবং পোখরান-২-এর মধ্যে কী সম্পর্ক? বলতে চাই, এরা একই মুদ্রার দুই পিঠ। এক পিঠে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা, অন্য পিঠে বন্ধুত্বের হাত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন