অটলবিহারী বাজপেয়ী
শীতের সকালে ৬-এ কৃষ্ণ মেনন মার্গের বাইরে দাঁড়িয়ে মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী অনুপ মিশ্র বলছিলেন, ‘‘তাঁর জিহ্বায় সরস্বতীর বসত ছিল। ১৯৫৭-এ তাঁর বক্তৃতা শুনে নেহরু বলেছিলেন, তুমি দেশের প্রধানমন্ত্রী হবে। ভাবুন সেই মানুষটি এখন আর কোনও কথাই বলতে পারেন না!’’
এক দশক ধরে অটলবিহারী বাজপেয়ীর মুখের একাংশ পক্ষাঘাতে পঙ্গু। তিনি স্মৃতিভ্রংশেরও শিকার। অনুপ মিশ্র তাঁরই ভাগ্নে।
আজই ৯৩-এ পা দিলেন দশম প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। আর তাই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এক সঙ্গেই গেলেন বাজপেয়ীর বাড়িতে। তার পর একে একে রাজনাথ-সুষমারা। বাজপেয়ীর মেয়ে নমিতা আর জামাই রঞ্জন ভট্টাচার্য তাঁদের অ্যাপায়নে ত্রুটি রাখেনননি। কিন্তু সকলেই দূর থেকে দেখে গিয়েছেন বাজপেয়ীকে। কেউই সামনে গিয়ে দাঁড়াননি।
আরও পড়ুন: অন্ধবিশ্বাস উড়িয়ে ‘অপয়া’ নয়ডায় যোগী, দরাজ প্রশংসায় মোদী
সবার আগে শুধু এক জনই দেখা করে গিয়েছেন বাজপেয়ীর সঙ্গে। তাঁকে দেখে নাকি কষ্ট করে হলেও হেসেছেন বাজপেয়ী। তিনি তাঁর চেয়ে তিন বছরের ছোট, বাজপেয়ীর এক সময়ের ‘ডেপুটি’। তিনি লালকৃষ্ণ আডবাণী। পরে তিনি বলেন, ‘‘আমি নিশ্চিত, অটলজি আমাকে চিনেছেন।’’
নমিতার মুখর ‘বাবাজি’ এখন নীরব। সারা দিনটা তাঁর কাটে নমিতার সঙ্গেই। সকালে স্নান করানো, ধুতি পরিয়ে দেওয়া, ধরে দাঁড় করানো। তার পর হুইল চেয়ারে এ ঘর থেকে ও ঘর। ক্রিকেট খুব ভালবাসতেন তিনি। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের খেলা। টানটান উত্তেজনার ম্যাচে এখনও টিভি-র সামনে বাজপেয়ীকে বসিয়ে দেন জামাই। হয়তো খুশিই হন তিনি।
বাজপেয়ীর জন্মদিনকে মোদী ‘সুশাসন দিবস’ ঘোষণা করলেও সেখানে বিরোধী নেতাদের ডাক নেই। অথচ এক সময়ে বিরোধী নেতা বাজপেয়ীকে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভায় দেশের হয়ে বক্তৃতা করতে পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, তাঁর বন্ধু নরসিংহ রাও। বাজপেয়ীর স্নেহধন্য বিজয় গয়াল ফি-বছরের মতো আয়োজন করেছেন ভজন সন্ধ্যার, যেখানে ডাকা হয়েছিল মনমোহন সিংহকেও। ঘনিষ্ঠ বন্ধু আপ্পা ঘাটাটে ছিলেন দশ বার লোকসভায় জেতা বাজপেয়ীর নির্বাচনী এজেন্ট। তাঁর কথায়, ‘‘অটলজি মানে সকলকে নিয়ে চলা। পুজোর ছলে অনেক সময়ে আমরা আসল মানুষটিকেই ভুলে থাকি।’’
নেহরু বলেছিলেন, বাজপেয়ী এক দিন প্রধানমন্ত্রী হবেন। অটলবিহারী নিজে কিন্তু মোদীকে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী করার ঘোর বিরোধী ছিলেন। আডবাণী না-থাকলে মোদী সে দিন কেশুভাই পটেলের পরিবর্তে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হতেই পারতেন না। গোধরার পরেও বাজপেয়ী তাঁর অপসারণ চেয়েছিলেন। আডবাণী ও সঙ্ঘের চাপে সেটা হয়নি। তাই প্রকাশ্যে মোদীকে সতর্ক করেছিলেন— ‘‘রাজধর্ম পালন করুন!’’
কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারির মন্তব্য, ‘‘ইতিহাসের পরিহাস, আজ সেই মোদী দেখাতে চাইছেন, তিনি কী বিরাট বাজপেয়ী অনুগামী!’’ আবার আজই ছিল সংসদে মদনমোহন মালবীয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠান। সেখানেও গেলেন শুধু আডবাণী। আর যে মোদী কথায় কথায় মালবীয়ের হিন্দু জাতীয়তাবাদের কথা তোলেন, তিনিই গরহাজির। ছিলেন না অন্য কোনও বিজেপি নেতাও।