মোদী সরকারের তিন বছর পেরোতে বাকি মাত্র বিশ দিন। বর্ষপূর্তির ঢক্কানিনাদের মধ্যেই হঠাৎ এল বড়সড় ধাক্কা। ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রশ্নে ভারতকে ছোবল মারল রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশন।
গত কাল জেনেভায় প্রকাশিত রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ রিপোর্ট’-এ তীব্র ভাষায় ভারত সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার অভিযোগের পাশাপাশি, নারী নির্যাতন, লিঙ্গবৈষম্য, বিশেষ ভাবে কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই রিপোর্ট প্রকাশিত হয় চার বছর অন্তর। যে চার বছরকে নিয়ে রিপোর্ট তৈরি হয়েছে, তার বেশির ভাগটাই মোদী জমানায়।
রাষ্ট্রপুঞ্জের তোপের মুখে দাঁড়িয়ে জেনেভায় ‘ইউনিভার্সাল পিরিওডিক রিভিউ ওয়ার্কিং গ্রুপ’-এর বৈঠকে ভারতের প্রতিনিধি অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগিকে মনে করিয়ে দিতে হয়েছে, ভারত একটি ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দেশ! তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের কোনও রাষ্ট্রীয় ধর্ম নেই। ধর্মনিরপেক্ষ দেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার সুনিশ্চিত করাটা দেশের মৌলিক নীতির মধ্যেই পড়ে।’’ আর আজ ভারতের প্রতিনিধি রোহতগি যুক্তি দিয়েছেন, ‘‘ভারতের ঐতিহ্য সহিষ্ণুতার, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলার।’’
আরও পড়ুন:মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় ৩২৯ জন
ভারতের তরফে এই সহিষ্ণুতার সওয়াল অবশ্য খইয়ের মত উড়ে গিয়েছে। এই রিপোর্টকে কাজে লাগিয়ে মাঠে নামতে দেরি করেনি ইসলামাবাদ। জেনেভার ওই সম্মেলনেই পাকিস্তানের প্রতিনিধি আক্রমণ করেছেন নয়াদিল্লিকে। কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে উচ্চগ্রামে সওয়াল করেছে পাকিস্তান। তাদের দাবি, রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার কমিশনের একটি প্রতিনিধি দল অবিলম্বে কাশ্মীর সফর করে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখুক।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপুঞ্জের সুপারিশ মেনে ভারত দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের আরও বেশি আইনি সহায়তা দিতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। ভারতে বেড়ে চলেছে বিনা বিচারে জেলবন্দি রাখার ঘটনা। দলিত, আদিবাসী এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে এটা বেশি হচ্ছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গত চার বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিংসা এবং বৈষম্য কমাতে কোনও পদক্ষেপই করেনি ভারত। লিঙ্গ বৈষম্যের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ কমানো এবং এই ধরনের ঘটনার তদন্তের প্রশ্নে কোনও অগ্রগতি হয়নি।