চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যমকে দিয়ে ভারতকে হুঁশিয়ার করা, এমনকী ভিডিও-তে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপও চলছে গত কিছু দিন ধরে। এ বারে মুখ খুললেন চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র হুয়া চুনয়িং। ডোকলামে ভারতীয় সেনার উপস্থিতির পিছনে নয়াদিল্লির যুক্তিকে ‘হাস্যকর’ আখ্যা দিলেন। ওই সেনা সরিয়ে নিতে বললেন ভারতকে। সঙ্গে এই হুঁশিয়ারিও দিলেন যে, চিনা ফৌজ যদি সত্যিই ভারতে ঢুকে পড়ে তো ‘খুবই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ তৈরি হবে। যদিও বিবৃতির শেষে চিনা মুখপাত্র বলেছেন, ‘‘বেজিং শান্তি ভালবাসে। শান্তিই বজায় রাখতে চায়।’’
গত কিছু দিন ধরে চিন যে ভাবে যুদ্ধের হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছে, তার সাপেক্ষে তাদের মুখে ‘শান্তি শব্দটি উঠে আসাকে অর্থবহ বদল বলেই মনে করছেন ভারতীয় কূটনীতিকদের একাংশ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আগামী মাসেই ব্রিকস সম্মেলন উপলক্ষে বেজিংয়ে যাবেন। সেখানে চিনের শীর্ষনেতাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হবে। তার আগে চিনের বিবৃতিতে রণহুঙ্কারের বদলে ‘শান্তি বজায় রাখা’র প্রসঙ্গ কূটনৈতিক আলোচনার একটা পরিসর তৈরিতে অন্তত সাহায্য করতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। নজর রাখছে সতর্ক দিল্লি।
ডোকলাম নিয়ে বিরোধই হোক বা লাদাখে চিনা ফৌজের ঢুকে পরা ও পাথর ছোড়া— ভারত নিজেদের অবস্থানে অটল থেকেও সংযত থাকার নীতি নিয়ে চলছে গত দু’মাস ধরে। গত কালও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আশা প্রকাশ করেছেন যে, চিন শীঘ্রই ‘ইতিবাচক পদক্ষেপ’ করবে ও সমস্যা মিটে যাবে। এই কথাও তিনি উল্লেখ করেন যে ভারত কখনওই কোনও দেশকে আক্রমণ করেনি বা সম্প্রসারণবাদী মনোভাবের পরিচয় দেয়নি। এরই জবাবে চিনের বিদেশ মন্ত্রক আজ জানাল, ডোকলাম থেকে ভারত ফিরিয়ে নিক। সেটাই একমাত্র সমাধান।
ভুটানের নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভারতের সুরক্ষা-স্বার্থ। কিন্তু সিকিমের কাছে ভুটানের ডোকলামকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে বেজিং সেখানে পরিকাঠামো উন্নয়নে তৎপর হওয়ায় ভারত উদ্বিগ্ন। সেই উদ্বেগকে অমূলক দাবি করে বেজিংয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘‘চিন রাস্তা তৈরি করছে— এই অজুহাতে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতীয় সেনা ঢুকেছে। তাদের ওই যুক্তি অনৈতিক ও হাস্যকর। সত্যটা একেবারে স্পষ্ট।’’
এরই সঙ্গে চুনয়িংয়ের কটাক্ষ, ‘‘ভারতের হাস্যকর যুক্তি মেনে নিলে তো প্রতিবেশীর বাড়িতে কোনও কাজ অপছন্দ হলেই যে কেউ জোর করে ঢুকে আসবে! চিন তার সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাবে পরিকাঠামো গড়ে তুলছে বলেই কি তা ভারতের পক্ষে বিপদ? নাকি চিন ভারতের এলাকায় ঢুকে পড়তে পারে? তাতে কি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হবে না? বিবৃতির শেষ শান্তি রাখার কথা বললেও ভারতের কোর্টে বল পাঠিয়ে চিনা মুখপত্রের মন্তব্য, ‘‘সার্বভৌমত্বে হাত পড়লে তা বরদাস্ত করা হবে না।’’