ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাই। সে রাজ্যে মহিলা-ভাতায় উপভোক্তাদের সংখ্যা আচমকা কমে গিয়েছে। —ফাইল চিত্র।
মহিলা-ভাতা ঘিরে এ বার বিতর্ক দানা বাঁধল আরও এক বিজেপিশাসিত রাজ্যে। ছত্তীসগঢ় সরকারের ‘মহতারী বন্দন যোজনা’ (মাতৃবন্দন যোজনা) থেকে হঠাৎ করে কয়েক লক্ষ মহিলার নাম ‘বাদ’ পড়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। দাবি করা হচ্ছে, গত কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় পাঁচ লক্ষ উপভোক্তা বাদ পড়েছেন। যদিও এ বিষয়ে ব্যাখ্যাও দিয়েছে ছত্তীসগঢ় সরকার।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ধাঁচে বিভিন্ন বিজেপিশাসিত রাজ্যে অনুরূপ মহিলা-ভাতা চালু হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম মহারাষ্ট্রের ‘লাড়কী বহীণ’ প্রকল্প। কয়েক মাস আগে অভিযোগ ওঠে, মহারাষ্ট্রে ওই প্রকল্পের আওতায় আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন প্রায় ১৪ হাজার পুরুষও। তা নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। এ বার ছত্তীসগঢ়েও মহিলা-ভাতা ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধল।
গত বছরেই ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ‘মহতারী বন্দন যোজনা’র আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রকল্পের আওতায় সে রাজ্যের ৭০ লক্ষ ১২ হাজার মহিলার সুবিধা পাওয়ার কথা। ২১ বছর বা তার বেশি বয়সি মহিলারা প্রতি মাসে ১০০০ টাকা করে ভাতা পান এই প্রকল্পে। কিন্তু সম্প্রতি প্রকাশ্যে আসা এক সরকারি নথিতে দেখা যাচ্ছে, প্রকল্পের টাকা পেয়েছেন ৬৪ লক্ষ ৯৪ হাজার মহিলা। অর্থাৎ, প্রথমে যা ঘোষণা করা হয়েছিল, তার চেয়ে উপভোক্তা কমে গিয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষ।
এই তথ্য প্রকাশ্যে আসার পরই বিজেপিকে নিশানা করতে শুরু করেছে কংগ্রেস। বিরোধী শিবির কংগ্রেসের দাবি, যে মহিলারা বিজেপিকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছেন, সেই মহিলা ভোটারদের সঙ্গেই বিশ্বাসঘাতকতা করছে পদ্মশিবির। কংগ্রেসের মুখপাত্র ধনঞ্জয় সিংহ ঠাকুরের অভিযোগ, অযৌক্তিক এবং ইচ্ছাকৃত ভাবে হাজার হাজার মহিলার নাম বাদ দিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন এই প্রকল্পটি চালু করেন, তখন ৭০ লক্ষ মহিলা প্রথম কিস্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০ তম কিস্তিতে দেখা যাচ্ছে, পাঁচ লক্ষেরও বেশি মহিলা বাদ পড়েছেন। বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, রাজ্যের প্রত্যেক মহিলা এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। কিন্তু সরকার গঠনের পরে তারা নতুন শর্ত চাপাচ্ছে। তারা ছত্তীসগঢ়ের মহিলাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছে।”
প্রকল্প ঘিরে বিতর্ক দানা বাঁধতেই এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ছত্তীসগঢ় সরকার। কংগ্রেসের অভিযোগ উড়িয়ে রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী লক্ষ্মী রাজওয়াড়ের দাবি, কোথাও কোনও বৈষম্য হচ্ছে না। তাঁর বক্তব্য, নির্দিষ্ট সময় অন্তর উপভোক্তাদের তথ্যযাচাই করা হয়। সেই কারণেই উপভোক্তাদের নাম কমে গিয়েছে।
ছত্তীসগঢ়ের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী জানান, প্রকল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দে কোনও কাটছাঁট হয়নি। তিনি বলেন, “মাসিক তথ্যযাচাই পর্বে দেখা গিয়েছে, ৬৪,৮৫৪ জন উপভোক্তা মারা গিয়েছেন। ৭০৭ জন মহিলা স্বেচ্ছায় প্রকল্পের উপভোক্তাদের তালিকা থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নিয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় ৪ লক্ষ মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ই-কেওয়াইসি হয়নি। সেটি হয়ে গেলেই টাকা পাঠানো পুনরায় চালু হয়ে যাবে। তখন ওই উপভোক্তাদের নামও তালিকায় যুক্ত হয়ে যাবে।”
বস্তুত, ছত্তীসগঢ়ের মহিলা-ভাতা নিয়ে এর আগেও বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। গত বছরের ডিসেম্বরে দেখা যায়, ‘সানি লিওনি’ নামে এক উপভোক্তা এই প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। পরে তদন্তে উঠে আসে, বীরেন্দ্র জোশী নামের এক ব্যক্তি ভুয়ো নামে অ্যাকাউন্ট খুলে প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছিলেন।