বিক্রমগঞ্জের বাসিন্দা মুসহর পুলিশ এমন কাণ্ড করে স্বচ্ছ ভারত মিশনের কর্তাদের কাছে নায়কের সম্মান পাচ্ছেন। নিজস্ব চিত্র।
কেশবকে (অক্ষয় কুমার) বিয়ে করে গ্রামে পা রেখেছিলেন জয়া (ভূমি পেডনেকার)। নববিবাহিত বধূকে নিয়ে উচ্ছ্বাসের অন্ত ছিল না কেশবের পরিজনদের। কিন্তু রাত পোহাতে না পোহাতেই সেই উচ্ছ্বাস যেন কর্পূরের মতো উবে গিয়েছিল। গ্রামের ‘রেওয়াজ’ মতোই প্রাতকৃত্য সারার জন্য জয়াকে যেতে বলা হয়েছিল ফাঁকা মাঠে। প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিলেন নববধূ। লাজলজ্জা বিসর্জন দিয়ে তিনি খোলা জায়গায় শৌচকর্ম করবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিলেন শ্বশুরবাডি়তে। তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা হল গ্রামের সকলে খোলা জায়গাতেই শৌচকর্ম সারতে হবে! তাতে আরও জেদ চেপে বসল জয়ার। এ বার আরও কঠোর ভাবে সকলের মুখের উপর জানিয়ে দিলেন শৌচালয় না হলে আর শ্বশুরবাড়িতে পা-ই রাখবেন না তিনি। স্বামী কেশবও তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেন। শেষমেশ আদালতের দ্বারস্থ হয়ে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা করলেন জয়া। কারণ হিসাবে বলেছিলেন, শ্বশুরবাড়িতে শৌচালয় না থাকার কারণেই তাঁর এই সিদ্ধান্ত। ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’র এই গল্প সাড়া ফেলে দিয়েছে বাস্তব জীবনেও।
মেয়ের ‘ইজ্জত’ বাঁচাতে বাড়ির আয়ের একমাত্র উৎস শুয়োর বিক্রি করে শৌচালয় বানালেন মহাদলিত বাবা। বিহারের রোহতাস জেলার বিক্রমগঞ্জের বাসিন্দা মুসহর পুলিশ এমন কাণ্ড করে স্বচ্ছ ভারত মিশনের কর্তাদের কাছে নায়কের সম্মান পাচ্ছেন। মুসহর পুলিশের কথাই রোহতাস জেলায় প্রচার করে শৌচালয় তৈরিতে উৎসাহ দিচ্ছে জেলা প্রশাসন।
কিন্তু একমাত্র আয়ের উৎস বিক্রি করে শৌচালয় তৈরি করেও সরকারি অনুদানের টাকা পাননি তিনি। উল্টে জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, গোটা গ্রামের শৌচালয় তৈরি হলে তবে টাকা পাবেন তিনি। স্বচ্ছ ভারত মিশনের অনুদান পাওয়ার নিয়মটা এমনই। আগে ৯০ শতাংশ বাড়িতে শৌচালয় তৈরি হলে টাকা মিলত। এখন রাজ্য সরকার তা কমিয়ে ৭৫ শতাংশ করেছে। সেই সংখ্যাপূরণ হলে অনুদান মিলবে মুসহরের।
আরও পড়ুন: লক্ষ্য ইউপিএ-৩, কৈরানার রসায়নের অস্ত্রেই প্রস্তুতি রাহুলের
অনুদান না মিললেও চিন্তা নেই মুসহরের। তিনি জানিয়েছেন, মেয়েরা বড় হয়েছে। বাইরে খোলা মাঠে শৌচ করতে যেতে চাইত না। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় যে পরিবারে, সেখানে বাড়িতে শৌচালয়ের কথা ভাবা রীতিমতো বিলাসিতা। আর সারা গ্রামে শৌচালয় তৈরি করার পরেই টাকা দেবে সরকার। তাই শৌচালয় তৈরির টাকার ব্যবস্থা কীভাবে হবে তা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন তিনি। মাঠে শৌচ করতে যাওয়ার সময়ে ইভটিজারদের শিকার হচ্ছিলেন মুসহরের মেয়েরা। এক দিন সন্ধ্যায় সকলে মিলে বাবার কাছে নিয়মিত হেনস্থার অভিযোগ করেন। নিজেদের ‘ইজ্জত’ বাঁচানোর জন্য বাবাকে ব্যবস্থা নিতে বলেন। মেয়েদের অভিযোগ শুনে ভেঙে পড়েন মুসহর।
সস্ত্রীক মুসহর।
আয়ের কথা না ভেবে এরপরের দিনই নিজের দু’টি শুয়োরের মধ্যে একটিকে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকায় বেঁচে দেন মহাদলিত মুসহর। সেই টাকার সঙ্গে আরও কিছু ধার করে প্রায় সাড়ে সাত হাজার টাকায় গ্রামে প্রথম নিজের বাড়িতে তৈরি করেন শৌচালয়। গ্রামের স্বচ্ছ ভারত মিশন স্বেচ্ছাসেবকের ফোনে ভোজপুরিতে তিনি বলেন, ‘‘সর, জব লৈকিয়ন কহলি ন কি জব ইজ্জত ন রহি ত জী কে কা করব, ইকর বাদ হম অন্দর সে হিল গইল। (মেয়েরা বলল ইজ্জত না থাকলে বেঁচে কী করব, সে কথা আমাকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল)।’’ ৪৫ বছরের মুসহর শৌচালয় তৈরিতে নিজেই মজদুরি করেছেন। শুয়োর বিক্রি করার জন্য কয়েকদিন চরম আর্থিক কষ্ট গিয়েছে মুসহরের পরিবারের। তবে একটি শুয়োরের ফের বাচ্চা হয়েছে। তা থেকে জীবন ফের চলবে বলে আশা করছেন তিনি। এক মেয়ের বিয়ে ঠিক করেছেন। সরকারি টাকা পেলেই তা দিতে পারবেন।
আরও পড়ুন: বিয়েবাড়িতে এমন নেচেছেন কখনও? দেখুন ভআইরাল ভিডিয়ো
ইউনিসেফের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক রাজীব কুমার বলেন, ‘‘আমরা বিক্রমগঞ্জ এলাকাকে শীঘ্রই একশো শতাংশ শৌচালয় তৈরিতে সক্ষম হব।’’ জেলা স্বচ্ছ ভারত মিশনের কর্তা বলেন, ‘‘মুসহরের টাকা দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’