Triple Talaq

প্রচারে ৩৭০, তিন তালাক, মন্দির

অর্থনীতি-বেকারি-করোনাকে দূরে রেখে আপাতত ওই তিনটি বিষয়কে এক সঙ্গে জুড়ে গোটা দেশে উন্মাদনা তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০৪:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

অর্থনীতি বেহাল। ঊর্ধ্বমুখী বেকারি। তার সঙ্গে নিত্য দিন রেকর্ড গড়ছে করোনা সংক্রমণের হার। লাদাখ সীমান্তেও স্বস্তি নেই। কিন্তু এ সব বিষয় নয়। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আপাতত তিনটি বিষয় পালন নিয়ে রীতিমতো উৎসবের মেজাজে। গত অগস্টের প্রথম সপ্তাহে বাতিল হয়েছিল তাৎক্ষণিক তিন তালাক। ওই সময়েই বিশেষ মর্যাদা হারিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয় জম্মু-কাশ্মীর। বাতিল হয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ। আর ঠিক এক বছরের মাথায়, অগস্টের প্রথম সপ্তাহে অযোধ্যায় ভূমি পুজো ও শিলান্যাস করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অর্থনীতি-বেকারি-করোনাকে দূরে রেখে আপাতত ওই তিনটি বিষয়কে এক সঙ্গে জুড়ে গোটা দেশে উন্মাদনা তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি।

Advertisement

গত বছর ১ অগস্ট তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিলে স্বাক্ষর করেছিলেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। যার ফলে তাৎক্ষণিক তিন তালাক ফৌজদারি অপরাধ বলে গণ্য হয় ভারতে। আগামিকাল সেই ঘটনার বর্ষপূর্তি। সেই কারণে আগামিকালের দিনটিকে ‘মুসলিম মহিলা অধিকার দিবস’ হিসাবে পালন করা উচিত বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি। সে সময়ে সরকারের তিন তালাক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। আজ দেশের বিভিন্ন মুসলিম মহিলা সংগঠনগুলির সঙ্গে ভিডিয়ো বার্তায় নকভি বলেন, এক বছরে ৮২ শতাংশ তিন তালাকের ঘটনা কমে গিয়েছে। তাঁর মতে, তিন তালাককে শাস্তিযোগ্য করাতেই ওই সাফল্য এসেছে। সরাসরি কংগ্রেসকে আক্রমণ শানিয়ে নকভি বলেন, আশির দশকেই তিন তালাকের বিরুদ্ধে আইন তৈরি হতে পারত। সেই সময়ে সুপ্রিম কোর্ট শাহ বানু মামলায় ঐতিহাসিক রায় দেয়। রাজীব গাঁধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার সে সময়ে লোকসভা ও রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতায় থাকলেও মুসলিম ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে চুপ থাকে। বিজেপির মতে, তিন তালাক ইসলামসম্মত নয়। শুধু ভোটব্যাঙ্কের জন্য এত দিন চলে এসেছে।

তার সঙ্গে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা বাতিলের ‘সাফল্য’। বিজেপি সূত্রের খবর, আগামী ৩ অগস্ট পর্যন্ত প্রতিটি রাজ্যের দলীয় সভাপতিকে ওই দুই সিদ্ধান্তের পক্ষে রাজ্য জুড়ে জনসভা, প্রচার করার নির্দেশ দিয়েছে দল। এই প্রচারকে ‘এক ভারত, একমাত্র ভারত’ নাম দিয়েছে দল। জোর দেওয়া হয়েছে স্থানীয় ভাষায় অনুষ্ঠানের উপরে। আগামী ৩ অগস্ট দেশের সব রাজ্যের রাজধানীতে রাজ্য নেতৃত্বকে সাংবাদিক বৈঠক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিম মহিলাদের নিয়ে প্রচারে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। বিজেপি সূ্ত্রের মতে, অযোধ্যার ভূমিপুজো হয়ে গেলেই কাশ্মীর নিয়ে প্রচারে নামবে দল। শীর্ষ নেতাদের যাওয়ার কথা রয়েছে কাশ্মীরে। বিজেপির এক নেতার কথায়, কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার হলে রক্তগঙ্গা বয়ে যাবে বলে সরব হয়েছিল কংগ্রেস। কিন্তু এক বছর ধরে কার্যত শান্তিতে রয়েছে উপত্যকার মানুষ। তবে সম্প্রতি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সৈফুদ্দিন সোজের ঘটনায় কিছুটা হলেও অস্বস্তিতে বিজেপি। যদিও তারা বলছে, পাকিস্তান কলকাঠি নেড়ে কাশ্মীরে উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তা রুখতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হচ্ছে।

Advertisement

আপাতত ৫ অগস্টের অপেক্ষায় বিজেপি নেতৃত্ব। যে রামমন্দির আন্দোলন করে বিজেপির ক্ষমতায় আসা, সেই রাম মন্দিরের শিলান্যাস হতে যাচ্ছে অযোধ্যায়। নেহাৎ কোভিড বাদ সেধেছে। তা না হলে গোটা বিষয়টি নিয়ে প্রবল ভাবে প্রচারে নামার পরিকল্পনা ছিল সরকারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন