পুড়ল পুতুল নীরব, ছড়ায় বিদ্ধ মোদী

বাংলায় যেমন চাঁচর, বাকি দেশে সেটাই ‘হোলিকা দহন’। ওরলির একটি আবাসনের বাসিন্দারা কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক জালিয়াতির পাণ্ডা নীরবের প্রতিমূর্তি গড়ে তাতেই আগুন দিলেন মহা উৎসাহে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৮ ০৩:১৯
Share:

নীরব মোদী কোথায় এখনও জানে না নরেন্দ্র মোদীর প্রশাসন। কিন্তু হোলির আগের সন্ধ্যায় তাঁকে দেখা গেল মুম্বইয়ে।

Advertisement

বাংলায় যেমন চাঁচর, বাকি দেশে সেটাই ‘হোলিকা দহন’। ওরলির একটি আবাসনের বাসিন্দারা কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যাঙ্ক জালিয়াতির পাণ্ডা নীরবের প্রতিমূর্তি গড়ে তাতেই আগুন দিলেন মহা উৎসাহে। আর যে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হয়ে ইস্তক জমিয়ে হোলি খেলে প্রচার মাধ্যমের নজর কাড়তেন, এ দিন তিনি বাসভবন ছেড়ে বেরোলেনই না।

বাজপেয়ী-আডবাণীর আমল থেকেই দিল্লিতে বিজেপি নেতারা জমজমাট হোলির আসর বসান। এ দিন বৃন্দাবনের কিছু স্বামীহারা প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি গিয়ে ‘মোদী ভাইয়া’-র কপালে-পায়ে আবির দিয়ে আসেন। আর কোনও অনুষ্ঠান ছিল না মোদীর বাড়িতে। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাড়িতে শোকের আবহ। সেখানে এ বারে হোলির আসর বসেছে বটে, কিন্তু সেই মেজাজটাই ছিল না। তবে রাজনাথ সিংহের বাড়িতে হোলি পালিত হয়েছে বড় করেই। সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নখভিও হোলিতে মেতেছেন। কিন্তু অন্য বার হোলিকে যে ভাবে রাজনীতির রঙে মুড়ে দিল্লি মাতোয়ারা করে তোলে বিজেপি, এ বারে সেটা দেখা যায়নি। বরং হোলির ক’দিন আগে থেকেই জ্বালা ধরানো ছড়া কেটে কবি সম্মেলন মাতিয়ে তুলেছেন আপ নেতা কুমার বিশ্বাস। কবি কুমারের কোনও ছড়ায় ললিত মোদীর ক্রিকেট কেলেঙ্কারি উঠে এসেছে তো কোনওটায় নীরব মোদী নিয়ে অন্য মোদীর নীরবতা। ‘চৌকিদার’ মোদী, ‘৫৬ ইঞ্চি ছাতি’র মোদীও বিদ্ধ হয়েছেন একের পর এক কবি সম্মেলনে।

Advertisement

তবে অন্য রাজ্যে হোলিকে রাজনীতির রং মাখাতে ছাড়েনি বিজেপি। প্রধানমন্ত্রীর খাস কেন্দ্র উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর ঘাটে ঘাটে গাওয়া হয়েছে মোদীর প্রশস্তি গীত। রং মেখে তার তালে ডফলি বাজিয়ে নেচেছেন কর্মীরা। অমিত শাহের নির্দেশে কর্নাটকে ভোটের আগে কয়েক সপ্তাহ ধরেই গাড়ির বহর নিয়ে রথযাত্রা করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। অনন্তকুমার, প্রকাশ জাভড়েকরেরা এ দিন হোলির ফাগ মাখিয়েই ভোট চেয়েছেন দিব্য। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে এই প্রথম হোলি যোগী আদিত্যনাথের। ক’দিন ধরেই তিনি বৃন্দাবন-মথুরা করে বেড়িয়েছেন। একটার পর একটা হোলির শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। তবে শুক্রবার হোলির দিন ফিরে এসেছেন নিজের শহর গোরক্ষপুরে। হোলিতে বিবাদ ভুলে ‘নরেন্দ্র ভাই’-কে ফের একসঙ্গে কাজ করার জন্য টুইটে আহ্বান জানিয়েছিলেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের বিতর্কিত নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া। কিন্তু জবাব তিনি পাননি।

তবে হোলি মিলিয়েছে অন্য শিবিরের দুই মুখ-দেখাদেখি-বন্ধ কাকা-ভাইপোকে। কর্মীদের ছোড়া আবির মেখে আজ এক মঞ্চে সামিল হয়েছেন সমাজবাদী পার্টির দুই নেতা শিবপাল ও অখিলেশ যাদব। একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকারও করেছেন। রাহুল বিদেশে। দিদিমার সঙ্গে ইতালিতে তিনি হোলি খেলেছেন কি না, তা নিয়ে কংগ্রেস কর্মীদের জল্পনার অন্ত ছিল না। কিন্তু তিনি না-থাকায় কংগ্রেস দফতরে হোলি জমেনি। নিজের কেন্দ্রের এক দল কর্মীর সঙ্গে বাড়িতে দেখা করেছেন সনিয়া। কিন্তু এসপিজি-র বারণ থাকায় তাঁরা আবির দিতে পারেননি নেত্রীকে।

রাত পোয়ালেই তিন রাজ্য— ত্রিপুরা, মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডে ভোট গণনা। বিজেপির অনেক নেতা-কর্মীর আশা, হোলির পরের দিন আর এক দফা আবির খেলায় মেতে ওঠার সুযোগ পেতে চলেছেন তাঁরা। আর সেটা যদি না-ও হয়, অন্য শিবির তো সেই সুযোগ পাচ্ছেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন